পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৪৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
চতুর্দশ পরিচ্ছেদ।
৩৬৩

বৃদ্ধ পিতা মাতা, ও জ্যেষ্ঠ ভগিনীর জন্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন। তাহার আসিয়া সকলকে ভাগলপুরে লইয়া গেলেন। কিন্তু ভাঙ্গা কাচ যেমন আর যোড়া লাগে না, তেমনি যেন ইহাদের ভগ্ন পারিবারিক সুখ আর ষোড়া লাগিল না। কিছুদিন পরে পরিবার পরিজন বোধ হয় আবার কৃষ্ণনগরে আসিয়াছিলেন। নবকুমার ও ইন্দুমতী ভগলপুরেই রছিলেন। ইহার পরেই নবকুমারের পীড়া আবার বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তাহার যক্ষ্মী ভীষণ আকার ধারণ করিল। এই সময়ে ইন্দুমতী কিরূপে ভ্রাতার সেবা করিরছিলেন, তাহ ভাবী তাইবোনের দৃষ্টান্তের জন্ত লিখিয়া রাখিবার মত কথা। . পরসেবা যে ইন্দুমতীর স্বাভাবিক ব্রত ছিল, পরের সেবা করিতে পাইলে যার আনন্দের সীমা থাকিত না, তার পক্ষে নিজ জ্যেষ্ঠ সহোদরের শুশ্রুষা যে কি হৃদয়ানন্দকর কার্য্য ছিল, তাহা আর কি বলিব। ইন্দুমতী একেবারে দেহ মন প্রাণ সেই কাৰ্য্যে নিক্ষেপ করিলেন। আমি ভাগলপুরের লোকের মুখে শুনিয়াছি, ষে অনেক দিন ইন্দুমতীর স্নানাৰ্দ্ৰ বস্ত্র অঙ্গেই শুকাইয়া গিয়াছে। নিজে রন্ধনাদি করিয়া ভ্রাতাকে খাওয়াইয়া, বাতাস করিয়া ঘুম পাড়াইয়া, স্নান করিতে গিয়াছেন, স্নান করিয়া আর্দ্রবস্ত্র পরিবর্তন করিতে যাইতেছেন, এমন সমরে ভ্রাতার কাশীর শব্দ ও কাতরধ্বনি শুনিলেন; চাকর ছুটিয়া আসিয়া বলিল—“মুখ দিয়া রক্ত উঠিয়াছে, বাবু ডাকিতেছেন।” অমনি দৌড়িয়া গেলেন, ঔষধ খাওয়াইতে ও বাতাস করিতে করিতে অঙ্গের বস্ত্র অঙ্গেই শুকাইয় গেল। অনেক দিন এমন হইয়াছে, যে রন্ধন করিয়া বেলা দশটার সময় ভ্রাতাকে মন্ন ব্যঞ্জন দিয়াছেন, কোনও একটা জিনিস বা কাজ মনের মত না হওয়াতে নুবকুমার অন্ন ব্যঞ্জন ছুড়িয়া ফেলিয়া দিলেন; তাহাতে ভগিনীর বিরক্তি বা দ্বিরুক্তি নাই, কেবল সেই বিশাল নয়নদ্বয় দিয়া দর দর ধারে জল পড়িতে লাগিল। বলিতে লাগিলেন—“দাদা ! তোমার যে খেতে দেরী হরে অমুখ বাড়বে।” আবার নুতন অন্ন ব্যঞ্জন রন্ধন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। নিজের ধাওরা দাওয়া মনে রছিল না। অনেক য়াত্রি অনিদ্রা অবস্থায় ইন্দুমতীর চক্ষের উপর দিয়া অতিবাহিত হইতে লাগিল। রাত্রে অনিদ্রা দিনে দুরন্ত শ্ৰম ! আমরা সকলেই ইন্দুমতীকে ভালবাসিত", যখন তাহার এই তপস্তার কথা শুনিলাম, তখন তাহার প্রতি প্রতি শ্রদ্ধা যেন দশগুণ বাড়িয়া গেল; কিন্তু এত শ্রম সহিবে না ভাবিয়া সকলেই ভীত হইতে লাগিলাম।

 যে ভয় করিয়াছিলাম তাঁহাই ঘটিল। এরূপ ভ্রাভার সেবা আর আধক