পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ।
৩৮১

দের এই পৃথিবীর সহিত বাধা ছিলেন, বিধাতা একে একে সেগুলি খুলিয়া লইতে লাগিলেন; আমরা উন্মুখ হইতে লগিলাম এইবার অনন্তধ্যমে যাত্র করিবার সময় আসিতেছে। অথবা বোধ হয় আমাদেরই ভুল ! তিনি কোনও রজ্জর দ্বারা আমাদের এ জগতের সহিত বাধা ছিলেন না। বাস্তবিকই তিনি পরপত্রের জলের ন্তায় আমাদের এ পৃথিবীতে বাস করিতেছিলেন; তাহা ন হইলে কি এখানকার সুখ দুঃখের এতটা অতীত হইয়া এরূপে বাস করা যায়?

 সে যাহা হউক, বিদ্যাসাগর মহাশয় চলিয়া যাওয়ার অল্পদিন পরেই আয় এক আঘাত আসিল ঐ ১৮৯১ সালের ৭ই অক্টোবর দিবসে তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা, কৃষ্ণনগরের সুপ্রসিদ্ধ ডাক্তার কালীচরণ লাহিড়ী ভবধাম পরিত্যাগ করলেন। রামতনু বাবু আপনার সহোদর ভ্রাতাদিগকে কিরূপ ভালবাসিতেন ভাহা অগ্ৰেই বলিয়াছি। কনিষ্ঠের পীড়া হইলে তাহার মন অতিশয় উত্তেজিত হইয়া উঠিয়াছিল। দেখিয়া আমাদের মনে হইয়াছিল, এ শোক সম্বরণ কয় তাহার পক্ষে সহজ হইবে না; কিন্তু ঈশ্বর যখন প্রিয়তম কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে লইলেন, তখনও সেই ঈশ্বরেছাতে আত্ম-সমর্পণের ভাব, সেই অপরাজিত ধৈৰ্য্য! কালীচরণ লাহিড়ী মহাশয় কিরূপ সৰ্ব্বজনের প্রিয় ছিলেন তাহা অগ্র কর্ণন করিয়াছি। সেই গুণধর সহোদরের বিরোগ-দুঃখ কিরূপ তীব্র হইবার সম্ভাবনা, তাহ, সকলেই অনুমান করিতে পারেন। কিন্তু লাহিড়ী মহাশয়ের অন্তরে, যাহাই থাকুক, এ শোকও তিনি জয় করিলেন। তাহার ধীর স্থির প্রশান্ত ও ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতাপূর্ণ ভাবের কিছুই ব্যত্যয় ঘটিল না। তিনি ধীরচিত্তে নিজের প্রস্থানের দিনের অপেক্ষায়, রছিলেন।

 অবশেষে সৰ্ব্বাপেক্ষা দারুণ আঘাত আসিল। র্তাহার প্রাণের প্রিয় কালীচরণ ঘোষও তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া গেলেন। যে কালীচরণ যৌবনের প্রারম্ভ হইতে অহরক্ত পুত্রের ফায়, বিশ্বস্ত “আজ্ঞাবহ ভূত্যের ফায়, তাহার অমুসরণ করিয়া আসিতেছিলেন, সেই কালীচরণ যখন চলিয়া গেলেন তখন লাহিড়ী মহাশয় নিশ্চয় মনে মনে বলিয়া থাকিবেন—’হে বিধাতা, এ অধমকে আর কত দিন সংসারে রাখিবো?” আর বাস্তবিক লাহিড়ী মহাশয় সেই হইতেই যেন জরাজীর্ণ ও চশক্তি রহিত হইয়া পড়িলেন।

 দিন দিন পুত্র শরৎকুমারের অবস্থার উন্নতি হইতে লাগিল। ১৮৯৫