পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৪
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

দুঃখের বিষয় প্রবনের সে পূৰ্ব্ব শ্ৰী আর, নাই। যে, মুরম্য প্রাসাদ ইহার প্রধান সৌন্দৰ্য্য ছিল তাহার ভগ্নাবশেষও এখন নাই। ক্ষিতীশবংশাবলীচরিতকার উক্ত স্থানের নিম্নলিখিতরূপ বর্ণনা করিয়াছেন :–

 “এই স্থান অতি রমণীয়। অঞ্জনা যদিও এখন স্থির-সলিলা হইয়! গতিবিহীন হইয়াছে, তথাপি তদীয় পূৰ্ব্বকালীন মনোহারিণী শোভা এককালে তিরোহিত হয় নাই। প্রায় অৰ্দ্ধ ক্রোশ পর্যন্ত ইহার উভয় কুলে গ্রাম্য বৃক্ষ-সমূহ শ্রেণীবদ্ধ থাকাতে, এরূপ অপরূপ শোভা হইয়া রহিয়াছে, যেন কোন প্রকৃতি-প্রিয় মহাপুরুষ, স্বভাবের সৌন্দৰ্য্য প্রদর্শন করিবার বাসনায়, নিবিড় কানন মধ্যে এই জলাশয় প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছেন। প্রাহ্নে, অপরাহ্নে, অথবা রজনীকালে, এই নদীতে নৌকারোহণ করিয়া ইতস্ততঃ নয়ন সঞ্চারণ করিবামাত্র অসুস্থ হৃদয়ে সুস্থতা লাভ হয়। কতিপয় বর্ষ পূৰ্ব্বে আমাদিগের স্বপ্রসিদ্ধ কবিবর মাইকেল মধুসূদন এই নদীর অপূৰ্ব্ব শোভা সন্দর্শনে কহিয়াছিলেন,—“হে অঞ্জনে ! তোমাকে দর্শন করিয়া আমি অতিশয় প্রীত হইলাম, তোমাকে কখনই ভুলিব না, এবং তোমার বর্ণনা করিতেও ক্রট করিব না।” এই রাজার (ঈশ্বরচন্দ্রের) পূৰ্ব্বে পূৰ্ব্বপুরুষেরা এই নদীতটস্থ প্রাসাদের দক্ষিণ দিকে, যে কানন আছে, তাহাতে বিবিধ মুম্বাছ ফলের বৃক্ষ রোপণ করি। তাহার নাম মধুপোল এবং ঐ কাননের পূর্বাংশে যে উপবন আছে তাহার নাম আনন্দ-কানন রাখেন। মধুপোল অশোক, চম্পক, বক, কাঞ্চন, নাগকেশর, মুচুকন, কিংগুক, শান্মলী ইত্যাদি পুষ্পবৃক্ষ-শ্রেণীতে শোভিত ছিল; এক্ষণে কেবল কিংশুক ও শান্মলী বৃক্ষমাত্র আছে। তথাপি বসন্তকালে এই তরুরাজি বিকশিত রক্তবর্ণ কুসুমাবলিতে অলঙ্কত হইয়া অপূৰ্ব্ব শোভা ধারণ করে। প্রায় পঞ্চবিশ বৎসর অতীত হইল একদ। আমাদের সুবিখ্যার্ত কবি মদনমোহন কাব্য-রত্নাকর এই শোভা সন্দর্শনে লিথিয়াছিলেন—“জগদীশ্বর সর্বভূতকে অদ্ভূত প্রদর্শনার্থ যেন রাশীভূত সিন্দুর রক্ষা করিয়াছেন।”

এই কবিজনের মনোহরণকারী সুরম্য কানন যে বালক রামতনু ও র্তাহার বয়স্তগণকে বার বার আকৃষ্ট করিত তাহা বলা নিম্প্রয়োজন। আমরা সকলেই এক কালে বালক ছিলাম; অনেকেই পল্লীগ্রামে প্রকৃতির নিস্তব্ধ রমণীয়তার মধ্যে বদ্ধিত হইয়াছি; সুতরাং বালক কালের সে সুখের কথা সকলেই স্মরণ করিতে পারি। গ্রামের পার্শ্বে যে কিছু রমণীয় দ্রষ্টব্য বিষয় ছিল, যে কিছু