পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৮
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

মধ্যবিত্ত ভদ্রসমাজ তিন প্রধান ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম কেন্দ্রীভূত রাজ-পরিবার ও তাঁহাদের স্বসম্পৰ্কীয়, সংস্থষ্ট ও আশ্রিত ব্যক্তিগণ; ইহাদের ংখ্যাই বোধ হয় অধিক ছিল। দ্বিতীয় স্বাধীনবৃত্তি-সম্পন্ন পরিবারবর্গ,— ইহাদের অনেকে পারস্ত ভাষায় সুশিক্ষিত হইয়া বিষয় কৰ্ম্মোপলক্ষে নানাস্থানে বিক্ষিপ্ত হইয়া বাস করিতেছিলেন; অপরাংশ বাণিজ্যাদিতে নিযুক্ত হইয়া বঙ্গদেশেরই অন্যান্ত জেলাতে বাস করিতেছিলেন। তৃতীয় ইংরাজদিগের নব-প্রতিষ্ঠিত কাছারীর উকীল, মোক্তার আমলা প্রভৃতি; ইহাদের অধিকাংশ খড়িয়া তীরবত্তী গোয়াড়ি নামক স্থানে অবস্থিত ছিলেন।

 রাজা গিরীশচন্দ্রের স্বভাব চরিত্রের কথা অগ্ৰেই বর্ণিত হইয়াছে। তিনি অতি অসার, অল্পবুদ্ধি ও নীচ-প্রকৃতি লোকের বগুতাপন্ন ছিলেন। তাঁহার সময়ে স্বার্থপর ও হীনচরিত্র লোকসকল রাজবাটীকে ঘিরিয়াছিল। সুতরাং রাজবাটীর দৃষ্টান্ত ও হাওয়া কিরূপ ছিল সকলেই অনুমান করিতে পারেন। এই সময়ে রাজবাটীর সহিত লাহিড়ী পরিবারস্থ ব্যক্তিগণের কিঞ্চিৎ সংস্রব হয়। সাধু রামকৃষ্ণের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা ঠাকুর দাস লাহিড়ী মহাশয় কিছুদিন গিরীশচন্দ্রের কার্য্যকারক ছিলেন তাহা অগ্ৰেই বলিয়াছি।

 রাজবাটীতে সচরাচর, কিরূপ পাপ প্রশ্রয় পাইত তাহার কিঞ্চিৎ বিবরণ পরবর্তী রাজা শ্ৰীশচন্দ্রের সময় হইতে দিতেছি। শ্ৰীশচন্দ্রের বিবিধ সদগুণ সত্ত্বেও তিনি ঐ সকল পাপে লিপ্ত ছিলেন, কারণ সে সকল পাপ তখন পাপ বলিয়া গণ্য হইত না। দেওয়ান কাত্তিকেয় চন্দ্র রায়ের স্বলিখিত জীবনচরিতে উহার কিছু কিছু বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া যায়। তাহা হইতে দুইটা বিবরণ দিতেছি।

 একটা বিবরণ এই, শ্ৰীশচন্দ্র অতিশয় গীতবাদ্যের অনুরাগী ছিলেন; সৰ্ব্বদা সুগায়ুক মুগায়িকাদিগকে আনাইয়া গীতবাদ্য শুনিতেন। একবার এইরূপ এক গায়কদলে একটী অল্পবয়স্ক বালিকাকে দেখিয়া তাহাকে রাজা এক প্রকার কিনিয়া লইলেন। সেই বালিকা রাজবাড়ীতে নিয়মিত দাসীদলের মধ্যে পরিগণিত হইয়া রহিল। রাজার অবসর হইলেই তাহাকে আনিয়া গান শুনিতেন। ক্রমে তাহার বয়স ১৪, ১৬ বৎসর হইল। তখন দেওয়ান রাজাকে বলিলেন—“এ বালিকা এখন বয়ঃপ্রাপ্ত হইতে চলিল, আর ইহাকে সভামধ্যে আন কৰ্ত্তব্য নয়।” রাজা তাহার প্রতি কৰ্ণপাত করিলেন না। তৎপরে তাহাকে যখন তখন স্বরাপান করাইয়| বন্ধুগণ-সহ তাহার সহিত