পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৪০
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

নিৰ্ম্মাণ করিতে লাগিলেন। তৎকালে বিদেশে পরিবার লইয়া যাইবার প্রথা অপ্রচলিত থাকাতে এবং পরস্ত্রীগমন নিনিত বা বিশেষ পাপজনক না থাকাতে, প্রায় সকল আমলা, উকীল, বা মোক্তারের এক একটী উপপত্নী আবশ্রাক হইত। সুতরাং তাহাদের বাসস্থানের সন্নিহিত স্থানে স্থানে গণিকালয় সংস্থাপিত হইতে লাগিল। পূৰ্ব্বে গ্ৰীসদেশে যেমন পণ্ডিত সকলও বেগুলিয়ে একত্রিত হইয়। সদালাপ করিতেন, সেইরূপ প্রথা এখানেও প্রচলিত হইয়া উঠিল! যাহারা ইন্দ্রিয়াসক্ত নহেন, তাহারাও আমোদের ও পরস্পর সাক্ষাতের নিমিত্ত এই সকল গণিকালয়ে যাইতেন। সন্ধ্যার পর রাত্রি দেড় প্রহর পর্য্যন্ত বোলয় লোকে পূর্ণ থাকিত। বিশেষতঃ পর্বোপলক্ষে সেথায় লোকের স্থান হুইয়া উঠিত না। লোকে পূজার রাত্রিতে যেমন প্রতিমা দর্শন করিয়া বেড়াইতেন, বিজয়ার রাত্রিতে তেমনি বেশু দেখিয়া বেড়াইতেন।”

 এ সকল বিবরণ উদ্ধৃত করিতেও লজ্জা বোধ হইতেছে। কিন্তু লজ্জা বোধ করিয়া প্রকৃত অবস্থার প্রতি চক্ষু মুদিয়া থাকিলে কি হইবে। দেওয়ানজী তদানীন্তন কৃষ্ণনগরের যে অবস্থা বর্ণন করিয়াছেন, তদনুরূপ অবস্থা তখন দেশের অনেক নগরেই বিদ্যমান ছিল। সে সময়ের যশোহর নগরের বিষয়ে এরূপ শুনিয়াছি যে আদালতের আমলা, মোক্তার প্রভৃতি পদস্থ ব্যক্তিগণ কোনও নবাগত ভদ্রলোকের নিকটে পরস্পরকে পরিচিত করিয়া দিবার সময়ে—“ইনি ইহার রক্ষিতা স্ত্রীলোকের পাকা বাড়ী করিয়া দিয়াছেন,” এই বলিয়া পরিচিত করিতেন। রক্ষিতা স্ত্রীলোকের পাকাবাড়ী করিয়া দেওয়া একটা মানসন্ত্রমের কারণ ছিল। কেবল কি যশোহরেই? দেশের সর্বত্রই এ সম্বন্ধে নীতির অবস্থ৷ অতীব শোচনীয় ছিল। অন্যান্য প্রদেশের ত কথাই নাই, বঙ্গদেশেও ভদ্রসন্তানের প্রকাগুভাবে দুষিতচরিত্র নারীগণের সহিত মিশিতে লজ্জা বোধ করিতেন না। এখনও কি করিতেছেন? এখনও প্রকাশু রঙ্গভূমিতে কলিকাতা সহরের ভদ্র পরিবারের যুবকগণ ঐ শ্রেণীর স্ত্রীলোকদিগের সহিত নাচিতেছে, আর দেশের অপরাপর বহু ভদ্রলোক গিয়া অর্থ প্রদান করিয়া উৎসাহ দিয়া আসিতেছেন। অপরাপর প্রদেশে এখনও যে অবস্থা রহিয়াছে তাহা অতীব লজ্জাজনক। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ও পঞ্জাবে কুলটাগণ প্রকাশুভাবে ভদ্রবংশীয় পুরুষগণের মধ্যে যাতায়াত করিতে সংকুচিত হয় না; পঞ্জাবে এই শ্রেণীর স্ত্রীলোকগণ