পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৭০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৪
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ

গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার সংস্কৃত কলেজের সুপ্রসিদ্ধ পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের ভ্রাতুষ্পুত্র। জয়গোপাল তর্কালঙ্কার প্রথমে শ্রীরামপুরের মিশনারি কেরী সাহেবের শিক্ষকরূপে ও কৃত্তিবাসের রামায়ণের সংস্কর্ত্তা ও প্রকাশকরূপে বঙ্গসমাজে পরিচিত হন। পরে ১৮২৪ সালে সংস্কৃত কালেজ স্থাপিত হইলে, তাহার সাহিত্যের অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। ইহারই নিকটে প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশ, তারানাথ তর্কবাচস্পতি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রভৃতি প্রসিদ্ধ পণ্ডিতগণ শিক্ষালাভ করিয়াছিলেন। তাঁহার উৎকৃষ্ট পাঠনার রীতির অনেক আখ্যায়িকা সংস্কৃত কলেজে প্রচলিত আছে। যখন তাঁহার বয়ঃক্রম ৬০।৬৫ বৎসরেরও অধিক হইবে, এবং যখন কালেজে আসা যাওয়া তাঁহার পক্ষে কঠিন বোধ হইত, তখনও কালিদাসের শকুন্তলা বা ভবভূতির ‘উত্তররামচরিত’ পড়াইবার সময়ে তিনি এমনি তন্ময় হইয়া যাইতেন যে পড়াইতে পড়াইতে ভাবাবেশে আসন ত্যাগ করিয়া দাড়াইতেন ও বর্ণিত বিষয়ের অভিনয় করিতে প্রবৃত্ত হইতেন। অপর শিক্ষকদিগের মধ্যে কেবল D. L. Richardsonএর বিষয়েও এইরূপ শুনিয়াছি, তিনিও সেক্সপীয়র পড়াইবার সময়ে আত্মহারা হইতেন।

 যাহা হউক এই সময়ে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার কলিকাতা সহরের একজন অগ্রগণ্য পণ্ডিত ছিলেন, এবং তাহার ভ্রাতুপুত্র গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার হেয়ারের একজন প্রিয়পাত্র ছিলেন। কেশবচন্দ্র, কালীশঙ্কর মৈত্রকে কর্ম্মলাভ বিষয়ে সহায়তা করিতে প্রতিশ্রুত হইলেন; কিন্তু তাহার প্রতিদান স্বরূপ এই কথা থাকিল, যে কালীশঙ্কর গৌরমোহনকে ধরিয়া রামতনুকে হেয়ারের স্কুলে ভর্ত্তি করিয়া দিবেন। গৌরমোহন এই প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। তখন কৌলীন্য ও বংশমর্য্যাদার প্রতি মানুষের বিশেষ দৃষ্টি ছিল। লাহিড়ী মহাশয় বলিতেন, যে তিনি কুলীনের সন্তান বলিয়া বিদ্যালঙ্কার আনন্দের সহিত তাঁহার সহায়তা করিতে প্রবৃত্ত হন।

 একদিন গৌরমোহন, বালক রামতনুকে চেতলা হইতে আনাইয়া, সঙ্গে করিয়া গ্রে সাহেবের গঙ্গাতীরবর্ত্তী ভবনে হেয়ারের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন। হেয়ারের গৃহে প্রতিদিন প্রাতে ও সন্ধাতে উমেদার ও স্কুলের বালকের অপ্রতুল হইত না। বালকগণ আসিলে হেয়ার তাহাদিগকে শুধু মুখে যাইতে দিতেন না; পরিতোষপূর্ব্বক মিঠাই খাওয়াইয়া ছাড়িতেন। তাহার ভবনের সন্নিকটে এক মিঠাইওয়ালার দোকান ছিল; তাহার সহিত