পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৯৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৬
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

ছিলেন। নিজামত আদালতে ঘনশ্যাম ভট্টাচার্য্য নামে একজন কোর্ট পণ্ডিত ছিলেন। তাঁহাকে সহমরণ বিষয়ে কতকগুলি প্রশ্ন করা হইল। স্বনাম ভট্টাচার্য্য বলিলেন বিধবাকে পতির চিতার সহিত বাঁধিয়া দেওয়া শাস্ত্র ও সদাচার উভয়-বিরুদ্ধ। ইহার পরে বহুদিন পর্য্যন্ত এবিষয়ে আর কিছু করা হইল না।

 ১৮১২ খৃষ্টাব্দের ৩রা আগষ্ট বুন্দেলখণ্ডের মাজিষ্ট্রেট কয়েকটী সহমরণের কথা নিজামত আদালতের গোচর করিয়া তাহদের অভিপ্রায় জানিবার ইচ্ছা করিয়া পত্র লিখিলেন। তদনুসারে ৩রা সেপ্টেম্বর নিজামত আদালতের রেজিষ্ট্রার গবর্ণর জেনেরালকে বিধবাদিগের প্রতি অত্যাচার নিবারণ প্রার্থনীয় বলিয়া পত্র লিখিলেন। ইহার পরেও কয়েক বৎসর অতীত হইয়া গেল। ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে গবর্ণমেণ্ট অব ইণ্ডিয়া এই প্রথা বিষয়ে বিশেষ অনুসন্ধান করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। এই অনুসন্ধান কার্য্য শেষ হইলে ১৮১৭ খ্রীষ্টাব্দে কতকগুলি রাজবিধি প্রণীত হইল। এই আদেশ প্রচার হইল যে সহগমনার্থিনী বিধবাকে অগ্রে জেলার মাজিষ্ট্রেট বা অন্য কোনও রাজকর্ম্মচারীর নিকট অনুমতি পত্র লইতে হইবে। এই বিধি প্রচার হইলেই হিন্দুসমাজ মধ্যে হুলস্থূল পড়িয়া গেল। বহুসহস্র লোকের স্বাক্ষর করাইয়া পুর্ব্বোক্ত রাজবিধি রহিত করিবার জন্য এক আবেদন পত্র প্রেরিত হইল। এই সময়ে রামমোহন রায় এই বিবাদের রঙ্গভূমিতে অবতীর্ণ হইলেন। শাস্ত্রানুসারে সহমরণ যে হিন্দু বিধবার শ্রেষ্ঠ কর্ত্তব্য নয় তাহা প্রদর্শন করিবার জন্য তিনি লেখনী ধারণ করিলেন। তিনি বাঙ্গালা ও ইংরাজীতে পুস্তিক লিখিয়া প্রচার করিলেন; এবং পূর্ব্বোক্ত আবেদন পত্রের প্রতিবাদ করিয়া ও গবর্ণমেণ্টকে ধন্যবাদ দিয়া এক আবেদন পত্র গবর্ণর জেনারেলের নিকট প্রেরণ করিলেন। ইহাও প্রাচীন সমাজের লোকের তাঁহার প্রতি খড়্গহস্ত হইবার একটা প্রধান কারণ হইল।

 ১৮২৫ সালের আন্দোলনে পুরাতন দলাদলিটা আবার পাকিয়া উঠিল। রামমোহন রায়ের দল ও রাধাকান্ত দেবের দল দুই দলে আবার তর্ক বিতর্ক চলিল। রামমোহন রায়ের “কৌমুদী” ও ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “চন্দ্রিকা” সতীদাহের বিপক্ষে ও স্বপক্ষে প্রবন্ধ প্রকাশ করিতে লাগিল। এরূপ শুনিতে পাওরা যায় এই সময়ে রামমোহন রায়ের নামে গান বাঁধিয়া লোকে পথে পথে গাইত। সেই গীত স্কুলের বালকদিগের মুখে মুখে ঘুরিত। সে সঙ্গীতের কিয়দংশ এই,—