পাতা:রামমোহন গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 রামমোহন-গ্ৰন্থাবলী হইতেছে, দুৰ্জনেরা সজ্জনকে চিরকালই দুৰ্জন কহিয়া থাকে, তাহাতে কি দুর্জনের দুৰ্জনত্ব ও সজ্জনের সজ্জনত্ব দূর হয়। উভয়ভ্ৰষ্ট মহাশয়েরাই চিরকাল সজ্জন।নিন্দক, যেমন জীবনেরাই ব্ৰাহ্মণাদির নিন্দক, ভাক্ততত্ত্বজ্ঞানী মহাশয়ের কি দুবুদ্ধি, জনকাদির বৈষয়িক ব্যাপারে নিজমন:কল্পিত নিন্দকের উল্লেখ করিয়া আপনারদিগেরো জ্ঞানিতত্ত্ব সিদ্ধ করিতে ইচ্ছা করেন, যেমন সচ্চিদানন্দ শ্ৰীশ্ৰীকৃষ্ণের রাসলীলা দৃষ্টান্ত দিয়া পরদারগমনেও দোষাভাব সিদ্ধ করিয়া থাকেন, ভাল, জিজ্ঞাসা করি, কোন গুণসাগর উত্তমের দৃষ্টান্তে কোন দোষীসাগর অধমের কি দোষ রাশি খণ্ডন হয়, এবং রত্নাকর সমুদ্রের সহিত ও সুধাকর চন্দ্রের সহিত কি কূপের ও জ্যোতিরিঙ্গনের কোন অংশে দৃ[ ৫৫ ]ষ্টান্ত হয়, আর ইদানীন্তন জ্ঞানীদিগের বিষয়ে জনকাদির দৃষ্টান্তের এ তাৎপৰ্য্য নহে যে, এইারা তাহারদিগের তুল্য, এই বাক্যের দ্বারা শিষ্টাচরণে এইরূপ বোধ হয় কি না যে, ভাক্ততত্ত্বজ্ঞানী মহাশয়দিগের মনে২ এইরূপ অভিমান আছে যে, সকল লোক আমারদিগকে জনকাদির তুল্য জ্ঞান করিয়া থাকেন, এ প্রকার ভ্রান্ত কে আছে যে, ভাক্ততত্ত্বজ্ঞানী মহাশয়দিগকে জনকাদির তুল্য জ্ঞান করে, যদ্যপি অশ্বলোম অতি নিৰ্ম্মল এবং শূকর কুশমূলাহারীও হয়, তথাপি মলিন শ্বেত চামরের এবং অভক্ষ্যভক্ষক গোর কোন অংশে কি কখন তুল্য হইতে পারে ? এবং যথার্থজ্ঞানীর বিপক্ষ কে আছে, ভাক্ততত্ত্বজ্ঞানীর বিপক্ষ সৰ্ব্বকালেই আছে, কিন্তু অন্য যুগের ন্যায় ক্ষত্ৰিয় রাজা হইলে দুর্বল বিপক্ষ, কি প্ৰবল বিপক্ষ, তাহা বিলক্ষণরূপেই বোধ করিতেন, এবং সুজন ও দুৰ্জন সর্বকালেই আছে, সে সত্য, কিন্তু যে মহাশয়রা নারদকে দাসীপুত্ৰ, ব্যাস[ ৫৬ ]দেবকে ধীবরকন্যাজাত, পঞ্চ পাণ্ডবকে জারজ, ব্ৰহ্মাকে কন্যাগামী, মহাভারতকে উপন্যাস, দেবপ্রতিমাকে মৃত্তিকা, এবং শালগ্রামকে শিলা বলিয়া উপহাস করিয়া থাকেন, র্তাহারা সুজন, কি দুৰ্জন, তাহ জানিতে ইচ্ছা করি । এবং কোন দুৰ্জন দুগ্ধকে তক্র, শর্করাকে বালুক, শ্বেত চামরকে অশ্বলোম, সুবৰ্ণকে পিত্তল, পদ্মপুষ্পকে তাগার, সিংহকে কুকুর ও অশ্বকে গর্দভ বলিয়া নিন্দ করে, এবং কোন সুজনই বা তক্রকে দুগ্ধ, বালুকাকে শর্করা, অশ্বলোমকে শ্বেতচামর, পিত্তলকে স্বর্ণ, তগরপুষ্পকে পদ্ম, কুকুরকে সিংহ ও গর্দভকে অশ্ব বলিয়া প্ৰশংসা করেন ? কিন্তু কাৰ্য্যানুরোধে দণ্ডবাহককে কর্ণধার অর্থাৎ দাড়ীকে মাঝি বলিয়া উপহাস করিয়া থাকেন, “ধৰ্ম্মসংস্থাপনাকাজকীরা, তাহারদিগকে তৃতীয় প্রশ্নে যে, আত্মতত্ত্বজ্ঞানী কহিয়াছেন, সেও সেইরূপ উপহাসমাত্ৰ” তাহাতেই বুঝি, কর্ণধার সম্বোধনে দণ্ডবাহকের ন্যায়] [ ৫৭ ] আহিলাদে গদগদ হইয়া ভাক্ততত্ত্বজ্ঞানী মহাশয় আপনার জ্ঞানিত্ব যথার্থ করিতে প্ৰাণপণ যত্ন করিতেছেন, যেমন দৈবাৎ বৃহৎ নীলের কুণ্ডে পতিত, পরমায়ুর বলে পুনরুখিত ধূৰ্ত্ত শৃগাল, আপনার দিব্য নীল বর্ণ দেখিয়া বন্য পশুগণের নিকটে আপনার প্রতি বনদেবতার অনুগ্রহ প্ৰকাশ করিয়া পশুর রাজা হইতে বহু যত্ন করিয়াছিল, কিন্তু যুগসহস্ৰে শত সহস্ৰ যত্বেও কি কাক শুক, গর্দভ অশ্ব, এবং কুকুর সিংহ হইতে পারে, এ অনর্থ চেষ্টামাত্র, যেমন সেই নীলবৰ্ণ শৃগাল, পশুগণকে প্রতারণা করিয়া কিঞ্চিং কাল পশুর রাজা হইয়া পশ্চাৎ স্বভাবদোষে নষ্ট হুইয়াছিল, তেমন ভাক্ততত্ত্বজ্ঞানী মহাশয়ও স্বানুচর জীবগণের নিকটে কিঞ্চিৎ কাল জ্ঞানিত্যু