পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-৯২ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র তাহাতে বৃহস্পতি স্বয়ং বলিতেছেন, যেন অত্যন্ত বিস্ময়ের সহিত বলিতেছেন, এই যে বাকৃ, যাহা স্বস্ট পদার্থের নামকরণে প্রথমে আবিভূত হয়, তাহা কোন গুহার মধ্যে নিহিত ছিল ! কোন প্রেমের বলে সেই গুহা হইতে সে বহির্গত হইল ? “উত ত্ব; পশুন আদর্শ বাচম, উত ত্ব: শৃথন ন শৃণোতি এনাম”--লোকে ইহাকে দেখিয়াও দেখে না, শুনিয়াও শুনে না। “উতো তু অস্মৈ তত্ত্বং বিসন্ত্রে, জায়েব পত্যে উশতী সুবাসাঃ”—পত্নী যেমন শোভন বাস পরিয়া পতির নিকট যায়, ইনিও তেমনিই প্রেমভরে নিজের দেহ প্রকাশ করেন। বৃহস্পতি স্বয়ং বাকের পতি, র্তাহার পক্ষে এইরূপ ভাষাই সমুচিত। এই যে বাকৃ, ইহা বিশেষত: বেদবিদ্যা। বৃহস্পতিই বলিতেছেন,—“ঋচাং ত্ব; পোষমাস্তেপুপুষ্মান, গায়ত্ৰং ত্বে গায়তি শঙ্করীষু, ব্ৰহ্মা ত্বে বদতি জাতবিদ্যাং যজ্ঞস্য মাত্রাং বিমিমীত উ ত্বঃ”—এই বাকৃ হোতার মুখে ঋকৃরূপে বাহির হইয়া যজ্ঞকে পুষ্ট করেন ; উদগাতার মুখে শঙ্করী সামরূপে গীত হন ; অধ্বযু্যর মুখে যজুর্মন্ত্ররূপে যজ্ঞের শরীর নিৰ্ম্মাণ করেন ; ব্রহ্মা এই বিদ্যাকে যজ্ঞকৰ্ম্মে নিয়োগ করেন । অতএব এই বাকৃ অর্থে বিশেষতঃ বেদবাক্যকেই বুঝিতে হইবে । বৃহদারণ্যকের ভাষায় এই বেদবাক্য “মহতো ভূতস্য নিঃশ্বসিতম্” অর্থাৎ সেই মহাভূত ঈশ্ববের নিঃশ্বাসস্বরূপ। শতপথ ব্রাহ্মণের ভাষায় প্রজাপতি প্রজারূপে বহু হইবার কামনা করিয়া তপস্যা করিয়াছিলেন, এবং তপস্যার দ্বারা প্রথমে ব্রহ্মরূপ ত্রয়ী বিদ্যার প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই বেদবাণী পুরাণ কবি বিশ্ববিধাতার চতুমুখ হইতে প্রথমে সমীরিত হইরাছিল, বেদপন্থী ইহা মানিয়া লইয়াছেন। বলা হইয়াছে, “অনাদিনিধনা নিত্য বাগ, উৎকৃষ্ট স্বয়ম্বুবা”—স্বয়ম্ভু কর্তৃক উংস্কষ্ট হইলেও এই বাকৃ নিত্য ; ইহার আদিও নাই, নিধন ও নাই। খ্ৰীষ্টানদিগের জনকেশ্বর হইতে উৎপন্ন তনয়েশ্বরের —খ্রষ্টের বা শবারূপী ঈশ্বরের নিত্যত্বের কথা এই প্রসঙ্গে স্মরণ করুন। বেদভাষ্যকার সায়ণাচাৰ্য্য প্রত্যেক অধ্যায়ের আরম্ভেই "যস্য নিঃশ্বসিতং বেদাঃ” বলিয়| মহেশ্বরকে প্রণাম করিয়াছেন ; পরস্তু বলিয়াছেন, “যো বেদেভ্যোহখিলং জগৎ নিৰ্ম্মমে”—যিনি বেদবাক্য দ্বারা অখিল জগৎ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছেন। খ্ৰীষ্টানেরাও বলেন, পিতা ঈশ্বর শবারূপী পুত্র খ্ৰীষ্টের দ্বারায় সমস্ত লোক স্বষ্টি করিয়াছিলেন। বেদপন্থীও বলেন, শব হইতেই সমস্ত জগৎ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। পূৰ্ব্বমীমাংসা দর্শনের আচাৰ্য্যগণ কোনরূপ শরীরধারী দেবতা মানেন না, চলিত অর্থে ঈশ্বরও মানেন না অথচ তাহার। এই বেদবাক্যকে নিত্য এবং অপৌরুষের বলিয়া মানিয়া লইয়াছেন। বেদবাক্য মুত্তিহীন শব্দরূপে চিরকাল বিদ্যমান আছেন ; এই শব্দ ঋষিদিগকে দেখা দেন এবং মুক্তি গ্রহণ করিয়া ঋষিমুখে আত্মপ্রকাশ করেন। বেদবাক্যই বাগ দেবতা বা ব্রহ্ম। বেদমন্ত্রের সারভূত যে গায়ত্রী মন্ত্র, উহাকেই বিশেষতঃ বাগ দেবীর মূৰ্ত্তিরূপে গ্রহণ করা হইয়াছে। বস্তুত: গায়ত্রী একটি ছন্দের নাম ; এই ছন্দ স্বপণীরূপ ধরিয়া সোম বা অমরত আনয়ন করিয়াছিলেন । তিনি ছন্দের মধ্যে প্রধান “ছন্দসাং মাতা”। ভৈত্তিরীয় আরণ্যকের সময় হইতে আজি পর্য্যস্ত আমরা প্রাত্যহিক সন্ধ্যোপাসনার সময়ে “আয়াতু বরদা দেবী অক্ষরং ব্রহ্মসম্মিতং, গায়ত্রী ছন্দসাং মাতা ইদং ব্রহ্ম জুষস্ব ন;" এই মন্ত্রে গায়ন্ত্রীকে ‘ছন্দসাং মাতা’ এবং ব্রহ্মরূপিণী বলিয়া