পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G& রামেন্দ্রমুনজর রচনাসমগ্র আপীনতুঙ্গস্তনী। এমন রূপ আর হয় না। এই বাগ দেবতা সব্বদেবময়ী, সৰ্ব্বময়ী ; —যে-কোন দেবতার পূজায় বসিয়া যিনি পূজক, তিনি আপনাকে এই মাতৃকা সরস্বতীর সহিত অভিন্ন মনে করেন—আপনার প্রতি অঙ্গে অ আ ক খ ইত্যাদি বিবিধ বর্ণ বিন্যাস করিয়া আপনার স্থল দেহকে বাগ দেবতার বাঙ্ময় দেহরূপে কল্পনা করেন ; আপনার অস্তঃশরীরেরও চক্রে চক্রে ঐরূপ বর্ণ বিন্যাস করিয়া অস্তর্দেহকেও বাগ দেবীর বাঙ্ময় দেহরূপে কল্পনা করেন। তন্ত্রমতে পূজাকালে ভূতশুদ্ধির পরে এইরূপে মাতৃকা ন্যাস করিতে হয়। বাহিরের দেহে ও অস্তর্দেহে বর্ণ বিন্যাস দ্বার। বাগ দেবীর শব্দময় বাঙ্ময় দেহ রচনার নামই মাতৃকান্যাস। এইরূপে পূজায় বসিলে পূজকের সহিত বাগ দেবতার অভিন্নত কল্পিত হয় , জীবের সহিত ঈশ্বরের ঐক্য কল্পিত হয়। বৈদিক যজ্ঞে ইড়াভক্ষণের অভিপ্রায় যজমানের সহিত বাগ দেবতার— শব্দ ব্রহ্মের ঐক্য সম্পাদন। তান্ত্রিক পূজারও সেই একই অভিপ্রায়। খ্ৰীষ্টান তাহার বাগ দেবতাকে গ্রীকদের নিকট ধার করিয়া লইয়াছেন ; তাহাকে মুক্তি দিয়া খ্ৰীষ্টবিগ্রহে পরিণত করিয়াছেন। কিন্তু তিন এই শব্দব্ৰহ্মতত্ত্বকে অধিক দূর ফলাইতে পারেন নাই। বেদপন্থী যাহা ধরেন, তাহার চূড়ান্ত করিয়া ছাড়িয়া দেন। এত ক্ষণে আপনারা ইড়াভক্ষণের তাৎপৰ্য্য বুঝিলেন। হাসিবেন না, ইড়াভক্ষণ খ্ৰীষ্টানের দেবতা-ভক্ষণের অনুরূপ অনুষ্ঠান। ইড়াভক্ষণে বাগ দেবতাকে আত্মস্থ করা হয়, বাগ দেবতার সহিত সাযুজ্য স্থাপন হয়, অমৃতভোজন ঘটে। সোমপানেও ষে ফল, ইড়াভক্ষণেও সেই ফল। ইড়াভক্ষণের তাৎপৰ্য্য না বুঝিলে যজ্ঞাহুষ্ঠানের তাৎপৰ্য্য বুঝা যাইবে না—ইড়াভক্ষণেই যজ্ঞের সম্পূর্ণতা ও সার্থকতা। পুরাকালে বেদপন্থী সমাজে যজ্ঞানুষ্ঠান কতটা স্থান জুড়িয়া ছিল, এখন তাহা বুঝিতে পারিবেন। যজ্ঞের বিবরণ দিতে গিয়া যজ্ঞানুষ্ঠানকে আমি এ পর্য্যস্ত খুব সঙ্কীর্ণ অর্থে গ্রহণ করিয়াছি ; কিন্তু এখন খুব ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করিবার সময় আসিয়াছে। বেদের ব্রাহ্মণগ্রন্থের মধ্যে কথায় কথায় যজ্ঞ সম্বন্ধে উপাখ্যান দেখিবেন । সকলেই যজ্ঞ করিতেছে। রাজারা করিতেছেন, ঋষিরা করিতেছেন, অঙ্গিরোগণ করিতেছেন, আদিত্যগণ করিতেছেন, পিতৃগণ, সাধ্যগণ, দেবগণ, সকলেই যজ্ঞ করিতেছেন। এমন কি, গাভীগণ ও বৃক্ষগণও ষজ্ঞ করিতেছে। যজ্ঞ লইয়া দেবগণের সহিত অম্বরগণের কেবলই বিবাদ হইতেছে। যজ্ঞ দ্বারা দেবগণ অস্থরগণকে পরাজয় করিতেছেন। দেবতারা যজ্ঞকে খুজিয়া পাইতেছেন না, যজ্ঞ আপনি আসিয়া ধরা দিতেছেন ; দেবগণের সকল কামনা পূর্ণ করিতেছেন। মল্প যজ্ঞ করিয়া লুপ্ত মানববংশ রক্ষা করিতেছেন। সংবৎসররূপী অর্থাৎ কালরূপী প্রজাপতি স্বয়ং ষজ্ঞ করিতেছেন ; ঋতুগণ ও মাসগণ সেই যজ্ঞে ঋত্বিকের কৰ্ম্ম করিতেছেন। প্রজাপতির ইচ্ছা হইল, আমি একা আছি, বহু হইব । তিনি তপস্যা করিলেন ; তপস্যা করিয়া আপনার প্রাণের মধ্যে দ্বাদশাহ যজ্ঞ দেখিতে পাইলেন । সেই দ্বাদশাহ যজ্ঞকে আবিষ্কার করিয়া তিনি সেই যজ্ঞ করিলেন ; তাহাতেই তিনি বহু হইলেন ও প্রজাপতি হইলেন। দেখাদেখি ইন্দ্র দ্বাদশাহ যজ্ঞ করিলেন ; তাহাতে তিনি দেবগণের জ্যেষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ হইলেন। প্রজাপতি এক কালে গৃহপতি হইয়াছিলেন ; দেবগণও