পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : পুরুষ-যজ্ঞ సెస్సె দিনের অনুষ্ঠান নহে—মহাকাল ব্যাপিয়া ইহা চলিতেছে। এই ষজ্ঞের প্রায়ণও নাই, উদয়নও নাই, আরম্ভও নাই, সমাপ্তিও নাই ; কেন না, এই যজ্ঞই ত বিশ্বব্যাপার। বেদপন্থী সমাজে অগ্নিচয়ন বলিয়া একটা সংবৎসরব্যাপী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হইত। তৈত্তিরীয় এবং শতপথ ব্রাহ্মণে তাহার তাৎপৰ্য্য বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যাত হইয়াছে। এই অনুষ্ঠানে একটি বেদি গাথা হইত, তাহার নাম চিতি । ইটের পাশে ইট বসাইয়া, ইটের উপর ইট থাকে থাকে সাজাইয়৷ এই চিতি নিৰ্ম্মিত হইত। তজ্জন্য বক্ত ইষ্টকের প্রয়োজন হইত। এই চিতির মধ্যস্থলে উত্তরবেদি গড়িয়া সেখানে অগ্নির স্থাপনা হইত ; এবং সেই অগ্নিতে আহুতি দেওয়া হইত। কোথাও বা সংবৎসর ধরিয়া সত্ররূপে অগ্নিচয়নের অনুষ্ঠান হইত। অনুষ্ঠানভেদে এই অগ্নি নানাবিধ নাম পাইত। কোথাও নাম সাবিত্র অগ্নি ; কোথাও বৈশ্বস্তজ অগ্নি ; কোথাও বা চাতুহোত্র অগ্নি ; কোথাও নাম নাচিকেত অগ্নি । তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের শেষ ভাগে অন্য অগ্নির সহিত নাচিকেত অগ্নির চয়নের বিস্তৃত বিবরণ আছে। নাচিকেত অগ্নির প্রসঙ্গ আপনারা কঠোপনিষদে যম-নচিকেতা-সংবাদ মধ্যে পাইয়াছেন । মৃত্যু নচিকেতাকে এই অগ্নিচয়নে ইষ্টকের সংখ্যা ও ইষ্টক স্থাপনের প্রণালী এবং অগ্নির তাৎপৰ্য্য উপদেশ দিয়া বলিয়াছিলেন, তোমার নামেই এই অগ্নির নাম হইবে ; যে তিন বার এই নাচিকেত অগ্নির চয়ন করিবে, সে জন্ম-মৃত্যু অতিক্রম করিবে ও পরম শান্তি লাভ করিবে । তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণেও সেই উপাখ্যানটির উল্লেখ আছে । আর এক অগ্নির নাম আরুণকেতুক অগ্নি—তৈত্তিরীয় আরণ্যকের আরম্ভেই ইহার সবিস্তর বিবরণ ও ব্যাখ্যা আছে। উত্তরবেদির স্থানে গৰ্ত্ত করিয়া জল ঢালা হইত ; তাহার উপর পদ্মের পাতা, পদ্মের ডাটা, পদ্মফুল বিছাইয়া একখান পদ্মপত্রে সোনার পাতের উপরে সোনার পুরুষমৃত্তি রাখা হইত ; তাহার পাশ্বে একটা কুৰ্ম্ম-কাছিম রাখা হইত। অতঃপর সেখানে অগ্নি রাখিয়া অগ্নির চারি দিকে ইট সাজাইয়া চিতি প্রস্তুত হইত। এই অগ্নির নাম আরুণকেতুক অগ্নি । তৈভিরীয় আরণ্যক ইহার তাৎপৰ্য্য বুঝাইয়াছেন। স্বষ্টির পূৰ্ব্বে সমস্ত জলময় ছিল। ঋক্সংহিতার দশম মণ্ডলে বিখ্যাত নাসদাসীয় স্থক্তে এই জলের কথা আছে—“তম আসীত তমসা গুঢ়মগ্রে, অপ্রকেতং সলিলং সৰ্ব্বমা ইদম ;” সেই জলমধ্যে পদ্মপত্রে এক প্রজাপতি অবস্থিত ছিলেন । র্তাহার কামনা হইল—আমি হৃষ্টি করিব। এখানেও তৈত্তিরীয় আরণ্যক নাসদাসীয় স্থক্তের দোহাই দিয়া বলিতেছেন;—“কামস্তদগ্রে সমবৰ্ত্ততাধি, মনসে। রেতঃ প্রথমং যদাসীৎ”—অগ্ৰে কাম উৎপন্ন হইল, উহা মন হইতে বীজরুপে প্রথমে জন্মিল স্বষ্টিকৰ্ত্তার এই হুষ্টিকামনাকেই পৌরাণিকেরা প্রজাপতির মানস পুত্র মনসিজ কামে পরিণত করিয়াছেন। জলমধ্যে পদ্মপত্রস্থ প্রজাপতিতেও আপনার কারণসলিলশায়ী নারায়ণের নাভিপদ্মে উৎপন্ন ব্রহ্মাকে দেখিতে পাইবেন। সে কথা যাক। হৃষ্টি কামনা করিয়া প্রজাপতি তপস্যা করিলেন ও আপনার শরীর কম্পন করিলেন। শরীর হইতে কতকগুলি ঋষি জন্মিল—এক দল ঋষির নাম অরুণকেতু । প্রজাপতি দেখিলেন, জলমধ্যে একটি কুৰ্ম্ম—কচ্ছপ চরিতেছে। প্রজাপতি সেই কুৰ্ম্মকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি এখনই জমিলে? কুৰ্ম্ম বলিল না, আমি আগে