পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : পুরুষ-যজ্ঞ See আদিত্য চলিতেছেন, চন্দ্ৰম চলিতেছেন, নক্ষত্রেরা চলিতেছে। ইহাদের গতিক্রিয়া ক্ষাস্ত হইলে জগদ্যন্ত্রের যে অবস্থা হয়, গৃহস্থ যে দিন অধ্যয়ন না করেন, তাহার গৃহেরও সেই অবস্থা ঘটে।” এই শেষের বাক্যটি আমাদের সেনেট হাউসের দরজায় খোদাই করিয়া রাখা উচিত। মাহুষের জীবন এক পক্ষে পশুর জীবন—মানুষ অন্য পশুর মত খায়, লাফায় ও ঘুমায়, এবং অন্যকে বঞ্চনা করিয়া নিজের স্বার্থসাধন করে। আপাততঃ জীবনের এক মাত্র উদ্দেশ্য জীবনরক্ষা—পরের জীবন নষ্ট করিয়া আপন জীবনের রক্ষণ। প্রাণিবিদ্যা বা biology বিদ্যামতে মানবজীবনের আর কোন উদ্দেশ্য থাকিতে পারে না। কিন্তু এইরূপ জীবনে কোন রস নাই, কোন গৌরব নাই। মানবজীবনকে পশু-জীবনের উপরে রাখিতে হইলে জীবনে সম্পূর্ণ উন্ট তাৎপৰ্য্য দিতে হইবে। জীবনের প্রত্যেক ক্ষুদ্র কৰ্ম্মকে বৃহৎ করিয়া দেখিতে হইবে । মানুষের ক্ষুদ্র জীবনকে বিশ্বের জীবনের সহিত মিলাইয়া সমঞ্চস করিয়া দেখিতে হইবে । শাস্বের ভাষায় যে বৈশ্বানর অগ্নি বিশ্বজগতে সৰ্ব্বকৰ্ম্মের প্রেরণা করিতেছেন, সেই অগ্নি মানবের প্রাণকে ও জীবনের কৰ্ম্মে প্রেরণ করিতেছেন, মনে করিতে হইবে । এই বৈশ্বানর অগ্নিকেই অগ্নিচয়নাহুষ্ঠানে উত্তরবেদিতে আহরণ করিতে হয়—ইনিই বিরাট পুরুষরূপ প্রজাপতির প্রাণ, অতএব জীবের ও প্রাণ। প্রশ্নোপনিষৎ বলিতেছেন,—“স এশ বৈশ্বানরো বিশ্বরূপঃ প্রাণঃ অগ্নিরুদয়তে”—সেই বিশ্বরূপ বৈশ্বানরই জীবদেহে প্রাণাগ্নিরূপে উদিত হন। ই হারই প্রসাদে তুমি “অৎসি অন্নং, পশুসি প্রিয়ম্”—তুমি অন্ন ভোজন করিতেছ ও প্রিয় দর্শন করিতেছ। এই প্রাণের আকাঙ্খা মিটাইবার জন্যই যাবতীয় জীব অন্নের অন্বেষণে ভোগ্য বস্তুর অন্বেষণে ছুটিতেছে ; এবং সেই প্রাণাগ্নিতেই সেই অন্নের, সেই ভোগ্য বস্তুর সমর্পণ করিতেছে । ইহা এক-রকম নিত্য অগ্নিহোত্রের ব্যাপার ; প্রাণিমাত্রকেই আপন দেহে এই অগ্নিহোত্র অহরহঃ সম্পাদন করিতে হইতেছে। “যথেহ ক্ষুধিত বালা মাতরং পযুপাসতে, এবং সৰ্ব্বাণি ভূতানি অগ্নিহোত্রমুপাসতে”—স্কুধাৰ্ত্ত শিশু যেমন স্তন্যের জন্য মাতার নিকট উপস্থিত হয়, সেইরূপ সমস্ত ভূত এই অগ্নিহোত্রের সমীপে উপস্থিত হয়। বিশ্বরূপ প্রজাপতির দেহ ব্যাপিয়া এই অগ্নি সঞ্চরণ করিতেছেন ; প্রাণিদেহের অগ্নিতে অন্নাহুতি হইলে .সেই বিশ্বরূপী প্রজাপতির উদ্দেশ্যেই আহুতি হয় । “প্রজাপতিশ্চরসি গর্ভে অন্তঃ ত্বমেব প্রতিজায়সে, তুভ্যং প্রাণ প্রজাস্কিমা বলিং হরস্তি, যঃ প্রাণৈঃ প্রতিতিষ্ঠসি”— অহে প্রাণ, তুমিই প্রজাপতি হইয়া গর্ভে বিচরণ কর, এবং তুমিই জীবরূপে জন্মগ্রহণ কর ; সকল প্রাণ তোমাতে প্রতিষ্ঠিত আছে ; সকল প্রজা তোমার উদ্দেশে বলি আনিয়া উৎসর্গ করিতেছে । প্রাণের ভিতরে নিত্য আকাঙ্খার ও বাসনার আগুন জলিতেছে, তাহার তৃপ্তি আবশ্বক—ইহা তাহার নিত্য অগ্নিহোত্র। পশুধৰ্ম্মী মানুষ ক্ষুধা নিবারণের জন্য যে অন্ন ভোজন করে, তাহাকে কেবল একটা biological need মনে করিবেন না। তাহ সেই অগ্নিহোত্রের আহুতি—ইহার নাম প্রাণাগ্নিহোত্র। জীবন রক্ষার জন্য শেয়াল কুকুরের মত অন্নের গ্রাস গিলিয়া গলাঃধকরণ করায় কোন বিশিষ্টত নাই ; কিন্তু ঐ পাশবিক কৰ্ম্মকে নিত্য-সম্পান্ত অগ্নিহোত্ররূপে