পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2 ο Ψα রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দেখিলে উহাতে আর পাশবিকতার ক্লেদ থাকে না, উহা মানবিকতার গৌরবে মণ্ডিত হয়। ছান্দোগ্য বলিতেছেন,—“তদযদভক্তং প্রথমমাগচ্ছেত্তত হোমীয়ং, স যাং প্রথমামাহুতিং জুহুয়াৎ,তাং জুহুয়াৎ প্রাণায় স্বাহ ইতি, প্রাণতৃপ্যতি”–ভাতের যে প্রথম গ্রাস উপস্থিত হয়, তাহা হোমদ্রব্য ; প্রাণায় স্বাহা বলিয়া সেই ভাতের গ্রাস আহুতি দিবে, প্রাণ তাহাতে তৃপ্ত হইবে । কেবল নিজের প্রাণ কেন, বিশ্বের প্রাণ ইহাতে তৃপ্ত হইবে ; “সৰ্ব্বেষু লোকেষু সৰ্ব্বেষু ভূতেষু সৰ্ব্বেষু চাত্মস্থ হুতং ভবতি” ; এইরূপে যে আহুতি দেওয়া যায়, তাহা সৰ্ব্ব লোকে, সৰ্ব্ব ভূতে সৰ্ব্ব আত্মায় আহুতিরূপে অর্পিত হয় । তৈত্তিরীয় আরণ্যকের অন্তগত যাজ্ঞিকী উপনিষৎ মন্ত্রটিকে আরও স্পষ্ট করিতে চাহেন। অন্নগ্রাস গ্রহণের মন্ত্র হইবে—“প্রাণে নিবিষ্ট অমৃতং জুহোমি, প্রাণায় স্বাহ৷”—আমি প্রাণে নিবিষ্ঠ হইয়া প্রাণাগ্নিতে যে আহুতি দিতেছি, ইহা অমৃতাহুতি ; এই যে অন্ন, ইহা অমৃত । প্রাণ অপানাদি পাচ প্রাণের উদ্দেশে ঐরুপ পাচটি আহুতির পর সমাপ্তিতে বলা হইবে, “ব্রহ্মণি মে আত্মা অমৃতত্বায়”—আমার আত্মা ব্রহ্মে যুক্ত হইয়া অমৃত লাভ করুক । অঙ্গুষ্টানরত গৃহস্থেরা এখনও ভোজনকালে এইরূপে পঞ্চ গ্রাস লওয়ার প্রথা বজায় রাখিয়াছেন। কচিৎ কখনও ইষ্টিযাগ করিয়া ইড়া ভক্ষণে দরকার কি ? প্রত্যহ উদর পূরণের জন্য অন্ন ভোজনেই আমরা ইড়া ভক্ষণের অনুষ্ঠান সম্পাদন করিতে পারি। অন্নের প্রত্যেক গ্রাসই ইড়া ; অন্ন ভোজনের ব্যাপারটা নিতান্ত উদর পূরণের ব্যাপার মনে না করিয়া উহাকে আমরা প্রজাপতির উদ্দিষ্ট যজ্ঞে বৈশ্বানর অগ্নিতে অৰ্পিত হবিঃশেষ-ভক্ষণ মনে করিলে বিশ্বহিতার্থ নিযুক্ত আপনার দেহটাকে পুরুষযজ্ঞ সম্পাদনে সমর্থ রাখিবার উপায়রূপে মনে করিলে, কৰ্ম্মটা পাশবিকতার স্তর হইতে একবারে মানবিকতার স্তরে উঠিয়া পড়ে। এ দৃষ্টান্ত একটা ছোট দৃষ্টান্ত মাত্র । আসল কথা এই —আমার এই যে জীবন, ইহা বৈশ্বানর অগ্নির চয়ন ব্যাপার মাত্র। সারা জীবন ধরিয়া ইটের পাশে ইট গাথিয়া, ইটের উপর ইট বসাইয়া আমি পুরুষ-যজ্ঞের চিতি নিৰ্ম্মাণ করিতেছি, তাহার কেন্দ্রস্থলে বৈশ্বানর অগ্নির প্রতিষ্ঠা করিয়া সেখানে কেবলই আত্মাহুতি দিতেছি । এ কেবল ত্যাগের ব্যাপার ; ভোগের এখানে কোন অবসর নাই । এই ত পুরুষ-যজ্ঞ, এ ত বিশ্বযজ্ঞের অনুকরণ ; কেন না, বিশ্বযজ্ঞে বিশ্বকৰ্ম্ম আপনাকে ত্যাগই করিয়াছেন। এখানে আমিই যজমান, আমিই ঋত্বিক এবং আমিই দেবতা এবং আমার সমস্ত জীবনটাই যজ্ঞ বা আত্মাহুতি । বেদপন্থী এই জীবন-যজ্ঞের তত্ত্বটাকে খুব বড় করিয়া দেখিয়াছেন ; এত বড় করিয়াছেন যে, পশ্চিমের পণ্ডিতদের মধ্যে র্যাহার একটু স্বক্ষদশী, তাহাদের ইহা দৃষ্টি এড়ায় নাই। আপনাদের মধ্যে র্যাহারা কৌতুহলী, তাহারা Eggeling সাহেবের শতপথ ব্রাহ্মণের এবং Keith সাহেবের তৈত্তিরীয় সংহিতার অগ্নিচয়ন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গের ভূমিকা দেখিবেন। জীবনযজ্ঞ পুরুষ-ঘঞ্জেরই প্রকারভেদ, এবং ইহা ভোগের ব্যাপার নহে, ত্যাগের ব্যাপার। প্রত্যেক কৰ্ম্মকে যজ্ঞপুরুষ বিষ্ণু প্রতি অর্পণ করিতে হইবে ; বেদপন্থীর প্রতি র্তাহার শাস্ত্রের এই চূড়ান্ত আদেশ। “যৎ করোষি যদশাসি যজুহোসি দদাসি যৎ, তং কুরুত্ব মদৰ্পণমূ”—দান ধ্যান হইতে আহার নিদ্রা, নাচার্কোদ।