পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : যজ্ঞ—অগ্ন্যাধান ও অগ্নিহোত্র গৃহে যিনি বেদের আলোচনা করিতেন; তিনি ছিলেন ব্রহ্মচারী। ব্রহ্মচারী যে সকল আচার-নিয়ম পালন করিতেন, তাহার নাম ব্রহ্মচৰ্য্য। ষে সকল ছাত্র বেদবিদ্যার আলোচনাতেই মুগ্ধ হইয়া পড়িতেন, বেদের আলোচনা ছাড়িতে চাহিতেন না, তাহার হয়ত গৃহী হইতেন না, যাবজ্জীবন ব্রহ্মচৰ্য্য লইয়াই কাটাইতেন। আবার কোনও কোনও ছাত্র বেদের জ্ঞানকাণ্ডের চর্চায় এতটা মুগ্ধ হইয়া পড়িতেন যে, গৃহধৰ্ম্মে তাহদের বিতৃষ্ণ জন্মিত। র্তাহার। জ্ঞানপথের পথিক হইয়া একবারে সন্ন্যাসী হইয়া পড়িতেন, প্ৰব্ৰজা গ্রহণ করিতেন। এই আজীবন ব্রহ্মচারী এবং সন্ন্যাসী ব্যতীত অধিকাংশ ছাত্রই সমাবর্তনের পর গৃহে ফিরিয়। গৃহস্থ হইতেন। এই গৃহস্থদিগের সমষ্টি লইয়াই সমাজ । যে ব্যক্তি গৃহধৰ্ম্ম করে না, লোকালয় হইতে দূরে থাকিয়৷ চিরকাল বিদ্যাচর্চা অথবা জ্ঞানচর্চা লইয়াই জীবন কাটায়, সে সমাজের কেহ নহে। সমাজ তাহাকে পালন করে বটে, রক্ষা করে বটে, কিন্তু সে সামাজিক নহে। সমাবৰ্ত্তনের পর তবে বিবাহের অধিকার জন্মে । বিবাহ না করিলে গৃহস্থ হয় না, গৃহপতি হয় না। যে বিবাহ করে নাই, তাহার গৃহ নাই। মনে রাখিবেন, গৃহিণী গৃহমুচ্যতে। এই বিবাহ অনুষ্ঠানটা রুত্রিম অনুষ্ঠান। Malthus সাহেবের Pop:Intion ঘটিত প্রবন্ধ প্রচার হইতে বিবাহ অন্তষ্ঠানের ঔচিত্য লইয়া অনেক জল্পনা হইয়াছে। অনেকে বলিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, দরিদ্রের পক্ষে বিবাহ অধৰ্ম্ম ; আইনের জোরে তাহাদের বিবাহ বন্ধ করা উচিত। এখনও এক-শ বৎসর অতিক্রম হয় নাই, ইহারই মধ্যে হাওয়া ফিরিয়াছে। ইউরোপের উপস্থিত হাঙ্গামাট থামিয়া গেলে হয়ত শোনা যাইবে যে, আইনের জোরে সকলকে বিবাহে বাধ্য করা উচিত। অন্ততঃ রাষ্ট্রের কল্যাণার্থে সকলকে বিবাহে বাধ্য করা উচিত। রাষ্ট্রের কল্যাণ দেখিয়াই এ-কালে ধৰ্ম্মাধৰ্ম্মের নিরূপণ হয়। রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য বহু দেশে প্রত্যেক বালককে বিদ্যালাভে বাধ্য করা হইয়াছে। রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য হয়ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিবাহে বাধ্য করা হইবে। প্রাচীন ভারতবর্ষে রাষ্ট্রতন্ত্রের এত প্রভুত্ব ছিল না । তবে সমাজের কল্যাণ দেখিয়া ধৰ্ম্মাধৰ্ম্মের নিরূপণ হইত বটে। আইনের জোরে বাধ্যতা-প্রতিষ্ঠা ভারতবর্ষের ধাতুগত নহে। তবে ভারতবর্ষের সমাজব্যবস্থা কাৰ্য্যতঃ কয়েকটি বিষয়ে এই বাধ্যতার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিল। যে স্বেচ্ছাক্রমে ধাবজ্জীবন ব্রহ্মচারী থাকিবে, অথবা ব্রহ্মচর্য্যের পরেই সন্ন্যাসী হইবে, সে ত বিবাহ রিবেই না। তুাইনের জোরে তাহাকে বিবাহে বাধ্য করা এ দেশের সমাজ-ব্যবস্থা প্নও মনে আনিতে পারে না। কিন্তু যে গৃহস্থ হইবে, সে বিবাহে কাৰ্য্যতঃ বাধ্য। বাহ না করিলে সে ষোল আনা সামাজিকতা পাইবে না। বেদ-বিহিত সমুদয় কৰ্ম্মে তাহার অধিকার জন্মিবে না। কেন না, বেদ-বিহিত ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম সপত্নীক ইষ্ঠান করিতে হয়। ষে পত্নী গ্রহণ করে নাই, মানবের মর্ত্য জীবনের নিয়ামক দবগণের সহিত তাহার কোনও সম্পর্ক ঘটিতে পারে না। দেবগঃ মল্লযু-প্রদত্ত ভাগের অপেক্ষায় বসিয়া আছেন। যাহার পত্নী নাই, সে দেবতাকে যজ্ঞভাগ দিতে নে না ; পিতৃগণের সহিতও তাহর মাখামাখি সম্পর্ক ঘটে না । পিতৃগণ পুরুষপরদিত্ত পিণ্ডভোজনের অপেক্ষায় বসিয়া আছেন । যে ব্যক্তির পত্নী নাই, সে