পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ কথা : যজ্ঞ –অগ্ন্যাধান ও অগ্নিহোত্র « . পূত হইয়া দ্বিতীয় জন্ম, নূতন সামাজিক জন্ম পাইয়াছে, সেই ব্যক্তিই দ্বিজ। যে ব্রাহ্মণ অপরের ছেলে পড়ায়, অপরকে ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম করায়, সে দ্বিজ। যে ক্ষত্রিয় রাজকাৰ্য্য করে বা লড়াই করে, সে দ্বিজ । আর যে বৈশু গরু চরায়, লাঙ্গল ধরিয়া আপন জমিতে চাষ করে বা দোকান রাখে, সেও দ্বিজ। সমুদয় বেদবিদ্যায়, বেদের ষোল আনা কৰ্ম্মকাণ্ডে এবং জ্ঞানকাণ্ডে ইহাদের সকলেরই ষোল আনা অধিকার জন্মিয়াছে। সেই অধিকারে কেহ তাহাকে বঞ্চিত করিতে পারে না । সমাজস্থিতির জন্য ও লোকস্থিতির জন্য তাহাকে কতকগুলি সামাজিক বিধি মানিয়া চলিতে হইত, কতকগুলি রুত্রিম অনুষ্ঠান সম্পাদন করিতে হইত। এই কৃত্রিম অনুষ্ঠানগুলির সাধারণ নাম যজ্ঞ । সেই যজ্ঞের তাৎপৰ্য্য না বুঝিলে বেদপন্থী দ্বিজাতিসমাজের নিগৃঢ় তথ্য বুঝা যাইবে না, বেদপন্থী সমাজের জ্ঞানের ইতিহাস এবং কৰ্ম্মের ইতিহাস সম্যকৃরূপে বুঝিতে পারা যাইবে না, ভারতবর্ষের ইতিহাসের যাহা বিশিষ্টতা, তাহা বুঝা যাইবে না। অতএব আমি সবিনয়ে নিবেদন করিতেছি, আপনার অবধান করুন ; আমি যজ্ঞের কথা বলিব । মনে রাখিবেন, সৰ্ব্বদেশে এবং সৰ্বকালে মনুষ্য-সমাজ একটা রুত্রিম যন্ত্র । সর্বত্রই কতকগুলি কৃত্রিম অনুষ্ঠান অবলম্বন করিয়া সমাজবন্ধনের চেষ্টা হইয়াছে। সমাজ-যন্ত্রের জটিলতা কোথাও অধিক, কোথাও অল্প । তদনুসারে এই সকল রুত্রিম অনুষ্ঠানগুলির ও কোথাও বহুলতা, কোথাও অল্পতা । বহু স্থলে এই সকল অনুষ্ঠানের তাৎপৰ্য্য বুঝা যায় না। এক কালে হয়ত একটা তাৎপৰ্য্য ছিল, এখন তাহা খুজিয়া পাওয়া যায় না । পণ্ডিতেরা বৈজ্ঞানিক প্রণালী অনুসরণ করিয়া ঐ সকল অহুষ্ঠানের তাৎপর্য্য বুঝিবার চেষ্টা করেন। আজকাল anthropology অর্থাৎ মানববিদ্যা একটা বিজ্ঞানবিদ্যায় দাড়াইয়াছে। মানবতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা বৈজ্ঞানিক রীতি অবলম্বনে মানবসমাজের প্রত্যেক অনুষ্ঠানের তাৎপৰ্য্য অন্বেষণ করেন। মুখ্যতঃ দুইটা পথ অবলম্বন করিতে হয়। প্রথম, তুলনামূলক আলোচনা। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সমাজে যে সকল অনুষ্ঠান বর্তমানে প্রচলিত আছে, তাহাদিগকে একত্র করিয়া তুলনায় আলোচনা করিতে হয়। কোথায় সাদৃশু, কোথায় বৈষম্য আছে, কতটুকু সাদৃশু, কতটুকু বৈষম্য আছে, তাহ আলোচনা করিতে হয় । এইরূপ আলোচনায় অনেক অতৃষ্ঠানের তাৎপৰ্য্য বুঝিতে পারা যায়। দ্বিতীয়, ঐতিহাসিক আলোচনা। কোন ও একটা সমাজে অতি প্রাচীন কালে কিরূপ অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল, সেই দেশের পুরাতন ইতিবৃত্ত থাকিলে, পুরাতন সাহিত্য থাকিলে, তন্মধ্যে তাহার সন্ধান পাওয়া যায়। যে দেশে ধারাবাহিক সাহিত্য বা ধারাবাহিক ইতিবৃত্ত আছে, সে দেশের পুরাতন অনুষ্ঠানগুলি কিরূপে ক্রমশ: বিকৃতি বা পরিণতি লাভ করিয়াছে, তাহা দেখিতে পারিলে অনুষ্ঠানগুলির তাৎপৰ্য্য বুঝা যায়। দেখা যায়, বর্তমানে ষে অনুষ্ঠানের কোনও মানে বুঝা যায় না, এক কালে তাহার একটা মানে ছিল । বর্তমানে যাহা নিতান্ত উদ্দেশ্যহীন এবং নিরর্থক বলিয়া বোধ হয়, এক কালে তাহার একটা উদ্দেশু। —একটা অর্থ ছিল। একট। প্রচলিত দৃষ্টান্ত দিব। আপনারা শুনিয়া থাকিবেন, ইংরেজের বড়দিনের উৎসবে mistletoe নামক লতা দিয়া ঘর সাজাইয়া থাকেন। অন্য