পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\&) রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র লতায় না সাজাইয়া মিসিলটে দিয়া কেন সাজান হয়, এখন তাহার কোনও মানে পাওয়া যায় না । কিন্তু অতীত ইতিহাসে ইহার তাৎপৰ্য্য পাওয়া যায়। ইংরেজের দেশে যখন ইংরেজের আবির্ভাব হয় নাই, তখন ব্রিটনের ওক গাছের পূজা করিত। মিসিলটো লতা ওক গাছে পরগাছা হইয়া জন্মে। সে-কালের ব্রিটনের সেই লতার আলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস করিত। বড়দিনে স্থৰ্য্য উত্তর মুখে ঘুরিলে নববর্যের উৎসবে ড্র ইডের সমারোহ সহকারে ওক গাছ হক্টতে সেই লতা কাটিয়া আনিত এবং খণ্ড খণ্ড করিয়া যজমানদিগকে বিতরণ করিত । মিসিলটে। ঘরে থাকিলে ঘরে লক্ষ্মী বাধা থাকিত । মিসিলটো সৰ্ব্বব্যাধিবিনাশক । অতএব উহ। ঘরে ঘরে সযত্বে রাখা হইত। এখন সে ড্ৰইডও নাই, সে ব্রিটনও নাই ; মিসিলটোর মাহায্যেও কেহ বিশ্বাস করে না । কিন্তু ব্রিটন দেশ যাহাব। দখল করিয়া যাস করিয়াছে, প্রাচীন ধৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়া যাহার। খ্ৰীষ্টান হইয়াছে, সেই বিজেতা ইংরেজেরাও এখনও সেক্ট বড়দিনের উৎসবে পরাজিত ব্রিটনদের সেই পুরাতন প্রথা ত্যাগ করিতে পারে নাই। এখন এই অন্তষ্টান তাৎপৰ্য্যহীন ; কিন্তু এক কালে উহার বৃহৎ তাৎপর্য্য ছিল। ইতিহাস আলোচনায় তাহ আবিষ্কৃত হয়। ঐ বড়দিনের উৎসবটাই দেখুন না। তুলনামূলক আলোচনায় দেখা যায়, বড়দিনের উৎসব সকল জাতির মধ্যেই কোন-না-কোনও আকারে বিদ্যমান আছে। স্থৰ্য্য দক্ষিণ মুখে চলিতে চলিতে একদিন উত্তর মুখে ফেরে ; অতি অসভ্য জাতিও সেই দিনটাকে লক্ষ্য করে। সেই দিন শীত ঋতুর অবসান স্বচনা করে। সমস্ত পৃথিবী মূৰ্ত্তি বদলাইবার উদযোগ করে। সে দিনটা সকলেরই পক্ষে আনন্দের দিন, উৎসবের দিন। আমরাও উত্তরায়ণ-সংক্রান্তিতে নানা পুণ্য কৰ্ম্ম করি। পৌষ মাস পুণ্য মাস। পৌষ মাসে লক্ষ্মীপূজা, পিঠাপার্বণের উৎসব। যীশুখ্ৰীষ্টের কোন তারিখে জন্ম হইয়াছিল, কোনও খ্ৰীষ্টান তাহা জানে না । কিন্তু যীশুখ্ৰীষ্ট নূতন ধৰ্ম্ম প্রচার করিলেন, মানব জাতির ইতিবৃত্তে একট। নূতন পরিচ্ছেদ প্রবর্তন করিলেন। খ্ৰীষ্টানেরা কল্পনা করিয়া লইল, ঐ বড়দিনে চরাচর পৃথিবী যখন নব জীবনের উদ্যম করে, সেই দিনই খ্ৰীষ্টের জন্ম হইয়াছিল। খ্ৰীষ্টের আবির্ভাবের পূৰ্ব্বে বড়দিনের উৎসবে যে উৎসব অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল, তাহাকেই বিকৃত এবং রূপান্তরিত করিয়া খ্ৰীষ্টের জন্মোৎসবে পরিণত করা হইল। যাহার তাৎপর্য্য ছিল একরূপ, তাহাতে তাৎপর্য্য দেওয়া হইল অন্যরূপ । এই দৃষ্টান্ত হইতেই বৈজ্ঞানিক রীতির পরিচয় পাইবেন । বর্তমান কালে anthropology বিদ্যাটা খুব বড় বিদ্যা হইয়া দাড়াইয়াছে সন্দেহ নাই। কিন্তু উহার মধ্যে যতটা আস্ফালন আছে, ততটা ফল ধরে নাই। এখনও উহার পদে পদে মতদ্বৈধ আর সংশয়। পণ্ডিতে পণ্ডিতে এত মতভেদ যে, কোনও সিদ্ধান্তকে একবারে চাপিয়া ধরা যায় না । তাহাতে দুঃখিত হইবার কোনও কারণ নাই। এ বিদ্য। এখন, বিজ্ঞান-বিদ্যা । বিজ্ঞান-বিদ্যার ইহা দোষও বটে, গুণও বটে। কোন সিদ্ধাস্তকে একবারে পাকা করিয়া ধরা বিজ্ঞান-বিদ্যার স্বভাব নয় । জ্ঞানের বিস্তারের সহিত প্রত্যেক সিদ্ধান্তকেই পূর্ণতার এবং পরিণতির দিকে লইয়া যাওয়াট বিজ্ঞান-বিদ্যার কাজ। বিজ্ঞান-বিদ্যা ষে পথে চলিতেছে, সেই পথেই তাহাকে চলিতে