পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Եր রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র বিবরণে পরিপূর্ণ। কোন যজ্ঞে কি কি অনুষ্ঠান, তাহ ব্রাহ্মণ-গ্রন্থমধ্যে বিবৃত হইয়াছে। ব্রাহ্মণ-গ্রন্থ র্যাহারা প্রচার করিয়াছিলেন, তাহীদের নাম ছিল ব্রহ্মবাদী । তাহাদের কল্পনার দৌড় অসীম ছিল । কোনও স্থানেই তাহারা পিছ-পা হইতেন না। ব্রাহ্মণগ্রন্থ অধ্যয়ন করিলে আপনারা দেখিতে পাইবেন, তাহারা অনুষ্ঠানগুলির পর পর বিবরণ দিয়া যাইতেছেন এবং কোন অনুষ্ঠানের কি অর্থ কি তাৎপৰ্য্য, তাহা অসঙ্কোচে দ্বিধাহীন চিত্তে নির্দেশ করিয়া যাইতেছেন ; অত্যন্ত সরল ভাবে আপন আপন মত প্রকাশ করিয়া যাইতেছেন। র্তাহারা বলিয়৷ যাইতেছেন ; তাহাদের মুখ হইতে যে সকল বাক্য বাহির হইতেছে, তাহারা যেন তাহাদের জন্য আদৌ দায়ী নহেন। ঐ সকল বাক্যের অনুকূলে কোনও যুক্তি-তর্ক আছে কি না, ঐ সকল বিচারসহ হইবে কি না, ইহা বিবেচনা করিতে র্তাহাদের অবসর মাত্র নাই । ভিতব হইতে কে যেন তাহাদিগকে বলাইতেছেন, তাহারা বলিয়া যাইতেছেন । স্থানে স্থানে দেখা যায়, দুই জন ব্রহ্মবাদী দুই রকমের তাৎপৰ্য্য দিতেছেন। এক জন অপরের কথা খণ্ডন করিতেছেন। কিন্তু তাহাতেও কোনও পক্ষেরই কোনরূপ সঙ্কোচ নাই । উভয় পক্ষই আপনার কথা সমান জোরে বলিয়া যাইতেছেন। উভয়ের বাক্যই বেদবাক্য । বেদ কাহাকে বলে, যদি আপনার জিজ্ঞাসা করেন, তাহা হইলে আমি তাহার উত্তর দিতে পারিৰ না। আমাদের শাস্ত্রকারেরাও ইহার উত্তর দিতে পারেন নাই । তাহারা এই পর্য্যন্ত বলিয়া গিয়াছেন যে, বেদের দুই ভাগ—মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ । মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ, এই দুই লইয়াই বেদ । সামাজিকের পক্ষে মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ উভয়ই তুল্যমূল্য, উভয়ই বেদবাক্য, উভয়ই নিত্য এবং অপৌরুষেয় ; কোনও ব্যক্তিবিশেষের মন-গড বাক্য নহে। ব্যক্তিবিশেষে উহা প্রচার করিয়াছে মাত্র। র্যাহারা এই মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ প্রচার করিয়াছেন, তাহাদের নামই ঋষি । বেদের মন্ত্র গুলিকে তিন শ্রেণীতে ফেলা হয়—ঋকৃ, যজুঃ, এবং সাম। ঋকৃ মন্ত্রগুলি ছন্দে বাধা বাক্য, এ-কালে যাহাকে পদ্য বলে ; ইংরেজীতে verse বলা যাইতে পারে। যজুর্মগ্র গুলি ছন্দে বাধা নহে। ওগুলি গদ্য মন্ত্র ; ইংরেজীতে prose formula বলা হয়। সাম মন্ত্র বলিয়া পৃথকৃ মন্ত্র নাই । ঋকৃ মন্ত্রকে কোনও একটা স্বর দিয়া গাহিলেই উহা সাম মন্ত্রে পরিণত হয় । কোনও একটা verseএর বা পদ্যের ছন্দ বজায় রাখিয়া আওড়াইলে হয় ঋকৃ, আর স্থর দিয়া গাইলেই হয় সাম । যাজ্ঞিকেরা নিগদ মন্ত্র এবং প্ৰৈষ মন্ত্র বলিয়া আীব এক শ্রেণীর মন্ত্রের উল্লেখ করেন। কিন্তু সেগুলিও গদ্যময় বর্ণক্য । অতএব তাহাদিগকে যজুর্মন্ত্রের প্রকারভেদ বলিয়া মনে করা যাইতে পারে। ফলে ঋক্, যজুঃ আর সাম, এই তিন শ্রেণীর মন্ত্র ব্যতীত আর চতুর্থ শ্রেণীর মন্ত্র নাই। এই জন্যই মন্ত্রাত্মক বেদ-বিদ্যাকে ত্রয়ী বিদ্যা বলে। বেদ তিনখানা না চারিখানা, এই লইয়া একটা তর্ক আছে। আপনারা ঋক্, যজুঃ, সাম ও অথর্ব, এই চারি বেদের কথা শুনিয়াছেন। এ-কালের অনেক পণ্ডিতেরা বলেন,—ঋক্, যজুঃ, সাম, এই তিন বেদই প্রাচীন বেদ । চতুর্থ অথৰ্ব্ব বেদকে পরবত্তী কালে জোর করিয়া বেদের মধ্যে ফেলা হইয়াছে। এরূপ ভাবে ধরিলে উত্তরটা ঠিক হয় না। আসল কথ। এই যে, বেদের মন্ত্র তিন শ্রেণীর, কিন্তু বেদমন্ত্রের সংহিতা চারিখানা । বেদমন্ত্রের সংগ্রহের নাম