পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : যজ্ঞ—অগ্ন্যাধান ও অগ্নিহোত্র & সংহিতা । অধিকাংশ ঋকৃ ( মন্ত্র ) একত্র সংগ্ৰহ করিয়া যে গ্রন্থ সঙ্কলিত হইয়াছে, তাহাই ঋকৃসংহিতা। ঐরুপ যজ্ঞে ব্যবহার্য্য যজুর্মন্ত্রের সংগ্রহ একত্র করিয়া যজুঃসংহিতা সঙ্কলিত হইয়াছে। যে সকল ঋকৃ যজ্ঞানুষ্ঠানে গান করিতে হইত, সেই গুলিকে একত্র সংগ্ৰহ করিয়া সামসংহিতা সঙ্কলিত হইয়াছে । এইরূপে সঙ্কলিত মন্ত্র ছাড়া আরও কতকগুলি অতিরিক্ত মন্ত্র ছিল, সেগুলি সাধারণ যজ্ঞকার্স্যে ব্যবহৃত হঠত না, যেগুলি শাস্তি স্বস্ত্যয়ন প্রভৃতি কার্য্যের জন্য ব্যবহৃত হইত। সেইগুলিকে একত্র করিয়া অথৰ্ব্বসংহিতা সঙ্কলিত হইয়াছে। এই অথৰ্ব্বসংহিতার ও অধিকাংশ মন্ত্র ঋক মন্ত্র। ফলে ঋক্, যজুঃ, সাম ছাড়া আর চতুর্থ শ্রেণীর মন্ত্র নাই। বেদমন্ত্র তিন শ্রেণীর, কিন্তু বেদমন্ত্রের সংহিতা ব| collection চারিখানি । প্রত্যেক মন্ত্র কোনওনা-কোনও সময়ে কোনও-না-কোনও ব্যক্তি কর্তৃক প্রচারিত হইয়াছিল। প্রচারিত হইয়াছিল বলিলাম ; কেন না, কোন ব্যক্তি কোন বেদমন্ত্র রচনা করিয়াছেন, একথা বেদপন্থী কিছুতেই বলিতে চাহিবেন না । যিনি যে মন্ত্র প্রচার করিয়াছেন, তিনি সেই মন্ত্রের ঋষি । যে মস্ত্রে যে দেবতাকে লক্ষ্য করা হইয়াছে, সেই মন্ত্রেব সেই দেবতা। এতদ্ভিন্ন প্রত্যেক মন্ত্রের কোনও-না-কোনও কৰ্ম্মে, কোনও-না-কেনি “ অন্সষ্টানে বিনিয়োগ হইত। যাজ্ঞিকদের মতে প্রত্যেক মন্ত্রই কোনও-না-কেনিও কাজে লাগিবে, কোনও-না-কোনও অন্তষ্ঠানে প্রযুক্ত হইবে । অকেজো ময়ের কোনও সার্থকতা নাই । অতএব শুধু মস্ত্রের সংহিতা লইয়া, মন্ত্রেব সংগ্রহ-গ্ৰন্থ লইয়া সমাজের বিশেষ কোনও লাভ নাই । সামাঞ্জিকের অন্য বেদমন্ত্রগুলির সার্থকতা দেখাইতে হইবে। এই জন্য ব্রাহ্মণ-গ্রন্থের আবশ্যকতা | ব্রাহ্মণ-গ্রন্থে দেখান ইষ্টয়াছে —কোন মন্ত্র কোন কৰ্ম্মে প্রযুক্ত হয় ; কখন কি ভাবে প্রযুক্ত হয় ; সেই কৰ্ম্মে সেই মন্ত্রের সার্থকতা কি ; অন্য মন্থের প্রয়োগ না হইয়৷ সেই মন্থেরই প্রয়োগ হইল কেন । এই সকলের বিস্তৃত বিবরণ ব্রাহ্মণ-গ্রন্থে পাওয়া যায়। যে সকল ব্রহ্মবাদী এই সকল ব্রাহ্মণ-গ্রন্থের প্রচার করিয়াছেন, তাহারা ও ঋষি । তাহারা ও যেন ভিতরের প্রেবণাবলে মন্ত্রগুলির বিনিয়োগ এবং মন্ত্রগুলির তাৎপর্য্য জানিতে পারিয়াছিলেন এবং যাহা জানিতে পারিয়াছিলেন, তাহাই সমাজের কল্যাণের জন্য প্রচার করিয়া গিয়াছেন । এষ্ট ভিতরের প্রেরণা, এই Inspiration সকলের নাই । অতএব মন্ত্র যেমন বেদবাকা, মন্ত্র সম্পর্কে যে ব্রাহ্মণ প্রচারিত হইয়াছে, তাহাও বেদবাক্য । অতএব মন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ, এই উভয় লইয়াই বেদ । ফলে দাড়াইয়াছে এই যে, আমাদের বেদপন্থী সমাজের ভিত্তি এই ব্রাহ্মণ-গ্রন্থেই প্রতিষ্ঠিত হইয়া গিয়াছে। সমস্ত বেদপন্থী সমাজ ব্রাহ্মণ-গ্রন্থগুলিকে বেদবাক্য বলিয়া মানিয়া লইয়াছে এবং তদনুসারে সমাজের ব্যবস্থা স্থাপন করিয়াছে। ব্রাহ্মণ-গ্রন্থে যে সকল বিধিনিষেধ উপদিষ্ট হইয়াছে, বেদপন্থী সমাজের সমুদয় ধৰ্ম্মশাস্ত্রের মূল সেইখানে। এমন কি, স্পষ্ট করিয়া বলা হয়, বেদবাক্য অর্থাৎ ব্রাহ্মণ-গ্রন্থোক্ত বাক্য স্বতঃপ্রমাণ। উহাকে মানিয়া লইতেই হইবে। প্রচলিত ধৰ্ম্মশাস্ত্রের কোনও বাক্যের সহিত যদি সেই বেদবাক্যের বিরোধ থাকে, তাহা হইলে ধৰ্ম্মশাস্ত্রের সেই সব বাক্য অগ্রাহ। আগেই আপনাদিগকে বলিয়াছি, ভিন্ন ভিন্ন ব্রাহ্মণ-গ্রন্থের প্রচারকর্তা