পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : যজ্ঞ—অগ্ন্যাধান ও অগ্নিহোত্র S > বলিয়াছি, কৰ্ম্মে প্রযুক্ত হয় বলিয়াই মন্ত্রের সার্থকতা। যে মন্ত্র কোনও কাজে লাগে না, সে মন্ত্র নিরর্থক । মন্ত্র তিন শ্রেণীর,—ঋক্, যজু, সাম। যে সকল যজ্ঞে এই তিন শ্রেণীর মস্ত্রের ব্যবহার ছিল, সেখানে এক জন যাজকে কাজ চলিত না । একাধিক যাজক আবশু্যক হইত। কোন ঋত্বিকৃ ঋকৃ মন্ত্র আওড়াইতেন—স্পষ্ট ভাবে— উচ্চৈঃস্বরে। কেহ বা যজুর্মন্ত্র আওড়াইতেন— নিম্নস্বরে । কেহ বা সাম মন্ত্র গান করিতেন। বড় বড় যজ্ঞে এই তিন শ্রেণীর যাজক বা ঋত্বিকৃ অবিশুক হইত ;–ঋগ বেদী, যজুৰ্ব্বেদী ও সামবেদী। ঋগ বেদী প্রধান যাজকের নাম ছিল হোতা। ইনি ঋক্ মন্ত্র আওড়াইতেন। হোতা শব্দে আপনার হোমকারী বুঝিবেন না। হোতা শব্দ আহবানাথক হে ধাতু হইতে উৎপন্ন । যিনি ঋক্ মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া যজ্ঞস্থলে দেবতাকে আহবান করেন বা ডাকিয়া আনেন, তিনিই হোতা। হোতাকে আহুতি দিতে হইত না । যিনি আগুনে আহুতি দিতেন, তাহার নাম অধ্বযু্য। তিনি অগ্নিতে হব্য দ্রব্য নিক্ষেপ করিতেন এবং তাহাকেই যজ্ঞের উপযোগী হব্য দ্রব্য প্রস্তুত করিতে হইত। এই সকল কৰ্ম্মে তাহাকে যজুর্যন্ত্র আওডাইতে হইত। কাজেই অধ্বযু্য যজুৰ্ব্বেদী ঋত্বিকৃ। বড় বড় যজ্ঞে আহবানকৰ্ত্ত হোতার এবং আহুতিদাতা অধ্বযু্যর অন্যান্য সহকারী থাকিতেন। সাম গানের জন্য প্রধান ঋত্বিকের নাম উদগতি । যজ্ঞবিশেষে তাহারও সহকারী আবশ্যক হইত। ঋগ বেদী, যজুৰ্ব্বেদী এবং সামবেদী, এই তিন শ্রেণীর ঋত্বিকের কৰ্ম্ম পরিদর্শনার্থ, তাহাদের ভুলভ্রান্তি সংশোধনাৰ্থ আর একজন প্রধান ঋত্বিকৃ থাকিতেন। তাহার নাম ব্রহ্মা। এক হিসাবে তিনি সকলের শ্ৰেষ্ঠ । তিনি সকলের কৰ্ম্ম পরিদর্শন করিবেন। অতএব তিন বেদেই তাহার অভিজ্ঞতা আবখ্যক । তিনি ত্রিবেদজ্ঞ হইবেন। ব্রহ্মা নামেই র্তাহার শ্রেষ্ঠত্বের স্থচনা হইতেছে । কেন না, সে-কালে বেদবাক্যের নামই ছিল ব্রহ্ম । ব্রহ্মবাক্যের তাৎপৰ্য্য যাহাতে ব্যাখ্যাত হইয়াছে, বেদের সেই অংশের নাম ব্রাহ্মণ। র্যাহারা ব্রহ্মবাক্যের তাৎপর্য্য বুঝাইতেন, তাহার ব্রহ্মবাদী। বেদপন্থী সমাজে যে বর্ণের লোকের উপর এই ব্রহ্মবাক্য রক্ষার ভার অপিত হইয়াছিল, সেই বর্ণের নামও ব্রাহ্মণ । অতএব ঋত্বিকৃদিগের মধ্যে যিনি ত্রিবেদজ্ঞ এবং শ্রেষ্ঠ, তাহারই নাম ব্রহ্মা যজ্ঞবিশেষে এই ব্ৰহ্মারও সহকারী আবশ্যক হইত। যজ্ঞ মাত্রেই কৰ্ম্ম এবং প্রত্যেক কৰ্ম্মেরই কোনও-না-কোনও ফল আছে। সেই ফল ইহলোকেও পাওয়া যাইতে পারে, পরলোকেও পাওয়া যাইতে পারে। কোন কৰ্ম্মের কি ফল, তাহ যুক্তির দ্বারা পাওয়া যায় না, তাহ বিচার করিয়া পাওয়া যায় না। কোন কৰ্ম্মের কোন ফল, তাহ ব্ৰহ্মবাদী ঋষিরা তাহাদের বিশিষ্ট শক্তির দ্বারা—inspirationএর দ্বারা জানিতে পারিতেন। যজমানের হিতার্থ যজ্ঞকৰ্ম্ম অনুষ্ঠিত হইত। সপত্নীক যজমান যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিতেন ; উভয়ে তুল্যরূপে ফলভাগী হইতেন। যজমানের পত্নী যজ্ঞস্থলে উপস্থিত থাকিতেন । কিন্তু র্তাহাকে কোনও বেদমন্ত্র উচ্চারণ করিতে হইত না । বেদমন্ত্র যথারীতি অভ্যাস করিতে হইলে আচাৰ্য্যগৃহে গিয়া বহু বৎসর বাস করিতে হইত। কিন্তু স্ত্রীলোকের পক্ষে সেরূপ আচাৰ্য্য-গৃহবাসের সুবিধা বা সম্ভাবনা না থাকায় স্ত্রীজাতিকে ক্রমশ: বেদমন্ত্র