পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : যজ্ঞ—অগ্ন্যfধান ও অগ্নিহোত্র > వె পুত্রোৎপাদনের দ্বারা শোধ করিতে হয়। এরূপে যাহার পুত্র আছে, যে যজ্ঞ করে এবং যে ব্রহ্মচারী, সে ঋণমুক্ত হয়। অগ্নিহোত্ৰ যজ্ঞ সেই দেবঞ্চণ মোচনের জন্য অত্যাবশ্যক । অগ্নিহোত্ৰ যজ্ঞ নিত্যকৰ্ম্ম ; না করিলেই নয়। অতএব ইহা সকলের পক্ষে স্বসাধ্য হওয়া উচিত। ইহাতে অধিক সময় লাগে না। অধিক সরঞ্জাম বা ব্যয়বিধান আবশ্বক হয় না। যৎকিঞ্চিং দুধ থাকিলেই আহুতির কাজ চলিয়া যায়। যদি কোনও কারণে দুধ না পাওয়া যায়, তাহা হইলে একটু দধি বা দুটি চাউল বা অন্য কিছু আহুতি দিলেও চলে। যদি কোনও দ্রব্যই না পাওয়া যায়, তাহা হইলেও অগ্নিহোত্র বর্জন চলিবে না। অহং শ্রদ্ধাং জুহোমি—আমি শ্রদ্ধাই আহুতি দিতেছি, এই মন্ত্রে সঙ্কল্প করিয়া শ্রদ্ধাহোম করিবে । এই শ্রদ্ধাহোমের নামান্তর ভাবনাহোম বা মানসিক অগ্নিহোত্র। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ এক স্থানে বলিতেছেন, শ্রদ্ধাই যজমানের পত্নীস্বরূপ এবং সত্যই যজমানস্বরূপ। শ্রদ্ধা এবং সত্য একযোগে মিথুন হয়। মানসিক অগ্নিহোত্রে শ্রদ্ধা এবং সত্য এই মিথুনের সাহায্যে স্বৰ্গলোক জয় করা হয়। শ্রদ্ধাহোমে কোনও পার্থিব দ্রব্যের প্রয়োজন হয় না। কোনরূপ দক্ষিণাও দিতে হয় না। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ বলিতেছেন, শ্রদ্ধাহোমে মনুষ্যগণ, দেবগণ—এমন কি, সমুদায় জাগতিক দ্রব্যই দক্ষিণাস্বরূপ ৷ সন্ধ্যাকালে শ্রদ্ধাহোমে যজমান মনুষ্যগণকে দেবতার হস্তে দক্ষিণাস্বরূপে অর্পণ করেন । মতুন্যেরাও তখন নিক্রিয় হইয়া দেবগণের অধীন হইয়া পড়ে। আর প্রাতঃকালে শ্রদ্ধাহোমে যজমান দেবগণকেই দক্ষিণারূপে মনুষ্যের হস্তে অর্পণ করেন, তাই দেবতারা দিনের বেলায় মন্ত্রন্থের অধীন হইয়া মনুষের হিত সাধন করেন। ব্রহ্মবাদীদের এই উক্তি হইতে আপনার অগ্নিহোষ্ট্রের মাহাত্ম্য কতকটা বুঝিতে পারিবেন। অগ্নিশালায় অগ্নি অত্যন্ত যত্বের সহিত রক্ষা করিতে হইত এবং সেই অগ্নি যাহাতে নষ্ট বা অশুচি না হইতে পারে, তজ্জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। কোনরূপে অশুচি ঘটিলে তদনুযায়ী প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইত। একবারে নষ্ট হইয়া গেলে পুনরায় নূতন করিয়৷ অগ্নির প্রতিষ্ঠা করিতে হইত। অগ্ন্যাধ্যান অনুষ্ঠানের কথা আগে বলিয়াছি। অগ্নির পুনরাধান অনুষ্ঠানও তদনুরূপ। মানবতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা এই অগ্নিভক্তির মূল অন্বেষণ করিতে গিয়া হয়ত বলিবেন যে, এই অনুষ্ঠান মানুষের আদিম অসভ্য অবস্থার পরিচয় দেয় মাত্র। যে কালে সহজে অগ্নি উৎপাদনের উপায় ছিল না, তখন সৰ্ব্বদা বাড়ীর মধ্যে আগুন রাখিবার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা না করিলে চলিত ন। এখনও জামাদের পল্লীগ্রামে যেখানে দেয়াশলাইএর বাক্স এখনও প্রবেশ লাভ করে নাই, সেখানে আগুন রক্ষার জন্য মালসা জাগানর প্রথা আছে । মানুষের অসভ্য অবস্থায় এইরূপে অগ্নিরক্ষাটা প্রত্যেক গৃহস্থের religious dury করা হইয়াছিল। নতুবা হঠাৎ আগুনের দরকার হইলে আগুন পাওয়া যাইবে কিরূপে ? অগ্ন্যাধান এবং অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠানের মূল এইরূপ হইতে পারে। তাহাতে লজ্জিত বা দুঃখিত হইবার কোনও প্রয়োজন নাই। মানুষ নিজে বানর হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, ইহাতে যদি মহিষের লঙ্গার বিষয় না থাকে, তাহা হইলে সভ্য মানুষের ধৰ্ম্মাহুষ্ঠানও যদি অসভ্য মূল হইতে উৎপন্ন হইয়া থাকে, তাহাঁতে লজ্জার কারণ দেখি না। বেদপন্থী সমাজের