পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

있이 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র যে অবস্থার কথা বলিতেছি, সে সময়ে বেদপন্থী মানুষ অসভ্য ছিল না, ইহা নিশ্চয় । সে সময়ের অনুষ্ঠানগুলির গোড়ার তাৎপৰ্য্য যাহাই হউক, তৎকালে অন্যরূপ তাৎপর্য্য আরাপিত হইয়াছিল, এবং তৎকালে যে তাৎপৰ্য্য দেওয়া হইত, তাহাই সে কালের সামাজিক এবং গার্হস্থ্য জীবনের নিয়ামক ছিল। অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠানকে সেকালের লোকে কি চোখে দেখিতেন, তাহার পরিচয় আপনারা পাইলেন । আপনার দেখিলেন, এই গৃহস্থিত অগ্নি যেন সমস্ত গৃহস্থালীর একটা symbol । এই অগ্নিকে অবলম্বন করিয়া গৃহস্থালী ধুত ছিল । তিন অগ্নির মধ্যে গাহপত্য অগ্নি গৃহপতির প্রতিনিধিস্বরূপ। এক পক্ষে গৃহস্থ এবং অন্য পক্ষে দেবগণ এবং পিতৃগণের মধ্যে তিনি মধ্যস্থত করেন। গাহপত্যের অগ্নি তুলিয়াই আহবনীয় এবং দক্ষিণাগ্নি জালা হয় । আহবনীয় অগ্নি দেবগণের মুখ এবং দক্ষিণাগ্রি পিতৃগণের মুখ । এই মুখ দ্বারা তাহার। গৃহস্থের নিকট আপনাদের প্রাপ্য গ্রহণ করেন; এবং তদ্বিনিময়ে গৃহস্থের কল্যাণসাধনে তৎপর থাকেন। বেদপন্থী সমাজের থিয়োরি মতে সমাজ কতকগুলি গৃহের সমষ্টি মাত্র। গৃহটাই সমাজের unit । আর যিনি গৃহস্থ, তিনি সেই গৃহের সাময়িক রক্ষাকৰ্ত্তা মাত্র । গৃহস্থের পার্থিব জীবন দিন কয়েকের জন্য । তিনি সেই কয়েকটা দিন আপনার কৰ্ত্তব্য পালন করিয়া চলিয়া যান, পুত্রপৌত্রাদির উপর গৃহরক্ষার ভার পড়ে। গৃহটাই স্থায়ী। গৃহস্থ পুত্রপৌত্রাদিক্রমে গৃহস্থালীর ধারা রক্ষা করেন। গৃহস্থের যে ধনসম্পত্তি, যাহা তিনি দেবগণের বা পিতৃগণের প্রসাদে ভোগ করতেছেন, তাহা তাহার নিজস্ব নহে। তিনি তাহার রক্ষাকৰ্ত্ত মাত্র । পিতৃপিতামহ হইতে তিনি তাহ পাইয়াছিলেন, এবং পুত্রপৌত্রাদিকে তাহার অধিকার ছাড়িয়া দিতে তিনি বাধ্য আছেন। সেই ধনসম্পত্তি নষ্ট করিবার তাহার অধিকার নাই । কেন না, তিনি উহার রক্ষাকৰ্ত্তা মাত্র। সেই পৈতৃক সম্পত্তি নিজের জীবনে তিনি ভোগ করেন বলিয়াই তিনি অন্ততঃ পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, এই তিন পুরুষকে পিণ্ড দান করেন এবং আপনার জীবনাস্তে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, এই তিন পুরুষের নিকট পিণ্ডের দাবী করেন। এই দক্ষিণাগ্নিতে পিওপিতৃযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। এইরূপে এই অগ্নির সাহায্যে গৃহের অবিচ্ছিন্ন ধারা রক্ষিত হইয়া থাকে। এই হিসাবে দেখিলে এই অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠানকে গৃহস্থের পক্ষে কেবল ব্যক্তিগত ধৰ্ম্মানুষ্ঠান বলিয়া সঙ্কীর্ণ ভাবে লওয়া যাইতে পারে না। এই অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠান প্রকৃত পক্ষে সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। অগ্নিব দ্বারাই গৃহস্থের সহিত সমাজের সম্পূৰ্ব স্থাপিত হয়। অগ্নি রক্ষা করেন বলিয়াই তিনি ধনসম্পত্তি ভোগে অধিকারী এবং ধনসম্পত্তির অধিকারী বলিয়াই সমাজের অন্যান্য গৃহস্থের সহিত র্তাহার আদান-প্রদানের সম্বন্ধ । সমাজের অন্যান্য ব্যক্তি র্তাহার নিকট সাহায্য পায়, এবং তাহাকে সাহায্য দেয়। এইরূপে রাষ্ট্রের সহিতও তাহার সম্পর্ক ঘটে। অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠানের এই symbolic তাৎপৰ্য্য থাকাতেই ইহা গৃহস্থ-জীবনের প্রধান অনুষ্ঠান এবং সৰ্ব্বপ্রধান নিত্যকৰ্ম্ম বলিয়া গণ্য হইত, তাহাতে সংশয়ের হেতু দেখি না। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রশ্ন আসিয়া উপস্থিত হয়, সেই সকল প্রশ্নের আমি উত্তর দিতে পারিব না। ধর্মশাস্ত্রে আমার ততটুকু বিদ্যা নাই। স্বধী জনের সম্মুখে