পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : ইষ্টিযাগ ও পশুযাগ ૨ જે আজ্য হোম করেন । পুরোডাশ তৈয়ার করিবার সময় পিটুলির যৎকিঞ্চিৎ যাহা অবশিষ্ট ছিল, তাহা বিশ্বদেবগণের উদ্দেশে আগুনে দেওয়া হয়। দেবহোতার আহবানে যে সকল দেবতা যজ্ঞভাগ পাইবার জন্য আসিয়াছিলেন, তাহারা এখনও যজ্ঞস্থল হইতে যান নাই। অধ্বযু ফিরিয়া আসিয়া তাহাদের সকলের জন্য আহবনীয় অগ্নিতে একটু আজ্য অর্পণ করেন। তখন র্তাহারা চলিয়া যান। ইহার নাম সমিষ্ট-যজুর্হোম। বেদির উপরে যজ্ঞের সরঞ্জামগুলি রাখিবার জন্য যে সকল কুশ বিছান হইয়াছিল, তাহাও আহবনীয়ে ফেলিয়া দেওয়া হয়। যজ্ঞারম্ভে প্রণীত। নামক জল প্রণয়ন করিয়া যজ্ঞরক্ষার জন্য জাহবনীয়ের পূর্ব দিকে রাগ হইয়াছিল , যজ্ঞ সমাপ্ত হইল, এখন সেই জল বেদির উপর ঢালিয়া দেওয়া হয় । পুরোডাশের জন্য চাউল ঝারিয়া ষে তুষ ও ক্ষুদের গুড অবশিষ্ট ছিল, তাহী রাক্ষসদের প্রাপ্য। ইহাতেই তাহার খুসী হইবে । রাক্ষসদের উদ্দেশে ইহা ফেলিয়া দেওয়া হয়। এইবার যজ্ঞ সমাপ্ত হইল যজমান এখন দেবত্ব পাইয়াছেন ; এমন কি, দেবগণের মধ্যে পরম দেবতা যে বিষ্ণু, তিনি সেই বিষ্ণুপদের প্রার্থী। আপনারা জানেন, বিষ্ণু ত্রিপদ দ্বারা তিন লোক আক্রমণ করিয়া অধিকার করিয়াছিলেন। সমস্ত বৈদিক সাহিত্য বিষ্ণুব এই ত্রিপাদাক্রমণের মাহাত্ম্য-বৰ্ণনায় পূর্ণ। তদন্তকরণে যজমান তিন প। ফেলিয়৷ পূৰ্ব্বমুখে আহবনীয় পৰ্য্যস্ত যজ্ঞস্থল প্রক্রমণ করেন, ইহার নাম বিষ্ণুক্রম-প্রক্রমণ । পূৰ্বদিকে দেবতাদের স্থান ; যজমান পূর্বদিকে তাকাইয়া বলেন, আমি জ্যোতিতে গমন করিয়াছি ; জ্যোতির সহিত আমি মিলিত হইয়াছি। পরে ষজমান সূর্যের এবং গার্হপত্য অগ্নির উপস্থাপন করিয়া প্রার্থনা করেন,—“হে গৃহপতি অগ্নি, আমি যেন তোমা দ্বার স্বগৃহপতি হই ।” পুত্রের নাম উল্লেখ করিয়া বলেন,—“আমার এই পুত্র এই বীরকর্মকে অনুক্রমে বিস্তারিত করুক।” তৎপরে আহবনীয় অগ্নির উপস্থান করিয়া যজ্ঞের পূর্বদিন যে ব্রত গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহ বিসর্জন করেন । বিসর্জনের পর যজ্ঞশালার বাহিরে আসিয়া যজমান এবং ব্রহ্মা পুরোডাশের যে ভাগ তাহাদের জন্য রক্ষিত ছিল, তাহা ভক্ষণ করেন । সর্বশেষে ব্ৰহ্মা আহবনীয়ে সমিং দিয়া পূর্ণমাস ইষ্টি সমাপ্ত করিয়া দেন। যজ্ঞাস্তে ঋত্বিকৃদিগকে দক্ষিণ দিতে হয়। পূর্ণমাস-যজ্ঞ প্রত্যেক গৃহীর পক্ষে অবশ্বকৰ্ত্তব্য কৰ্ম্ম । ধনী দরিদ্র সকলকেই ইহ করিতে হইবে। দক্ষিণা ব্যয়সাধ্য হইলে চলিবে না । যজ্ঞের আরম্ভে দক্ষিণায়িতে চারি জন ঋত্বিকের উপযুক্ত ভাত চড়াইয়া দেওয়া হয়। উহা দক্ষিণাগ্নিতেই পদ্ধ হয়। এই অন্নই 'দক্ষিণ ; যজ্ঞশেষে ঋত্বিকের এই অন্ন ভোজন করেন ; ইহাতেই যজ্ঞ দক্ষিণাস্ত হয়। পূর্ণমাস-যজ্ঞের বিবরণ দিলাম। ইহাতে ইষ্ট্যিাগ জিনিসটা কি, তাহা আপনার বুঝিতে পারিবেন। এখন পশুযাগের কথা বলিতে চাহি। পশুযাগ নানাবিধ । তাহার মধ্যে একটি পশুযাগ অবশ্ব কৰ্ত্তব্য ; ইহার নাম নিরূঢ়-পশুবন্ধ। প্রতি বৎসর বর্ষাকালে পণিমায় বা অমাবস্যায় এই যাগ কৰ্ত্তব্য কাহারও মতে বৎসরে দুই বার কৰ্ত্তব্য ; উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ন সংক্রাস্তিতে । এই পশুযাগ অন্ত যাবস্ত্রীয় পশুযাগের প্রকৃতি । ইহারই বিবরণ দিলে সকল পশুযাগেরই মোটামুটি জ্ঞান জন্মিবে।