পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○や○ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র না, তাহাদের মধ্যেও নরবলির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। য়িহুদী, গ্রীক, রোমান, সকলেই এক কালে নরবলি দিত, তাহা আপনারা জানেন । আইফিজিনিয়ার গল্প, জেফথার দুহিতার গল্প আপনারা জানেন । ফিনিক প্রভৃতি সেমিটিক জাতির। সুসভ্য জাতি ছিল ; অথচ তাহাদের মধ্যে এই ভীষণ প্রথা বহুল ভাবে চলিত ছিল । দেবতাকে দিবার জন্য বড় ঘরের ছেলে পছন্দ করা হইত। জ্যেষ্ঠ পুত্রকে পছন্দ করা হইত। পিতার এক মাত্র পুত্রকে পছন্দ করা হইত। রোম-সাম্রাজ্যের যখন খুব পর্যক্রম, তখন সম্রাট এলাগাবেলাস নূতন করিয়া নরবলির প্রচলন করেন। সাম্রাজ্যের বড় বড় ঘরের ছেলে ধরিয়া আনিয়া বলি দেওয়া হইত। ব্যপারটা ভীষণ এবং লোমহর্ষকর । কিন্তু ইহার ভিতর কিঞ্চিৎ ধৰ্ম্মভাবও আছে। দেবতা নরমাংস খাইতে ভালবাসেন, এরূপ তাৎপৰ্য্য নয় ; তাৎপৰ্য্য ত্যাগস্বীকার ; যাহা সব চেয়ে মূল্যবান, যাহা সব চেয়ে প্রিয়, তাহাকেই উৎসর্গ করিতে পারিলে তবেই ত ত্যাগস্বীকার হয়। আপনারা শুনঃশেফের বৈদিক আখ্যায়িকা শুনিয়া থাকিবেন। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে এবং কৌষীতকি ব্রাহ্মণে এই আখ্যায়িকা আছে। ইক্ষাকুবংশের রাজা হরিশ্চন্দ্রের শত পত্নী সত্ত্বেও পুত্র হয় নাই। তিনি বরুণের নিকট মানসিক করিলেন, আমাকে পুত্র দাও ; সেই পুত্ৰই তোমাকে দিব। বরুণের বরে পুত্র জন্মিল। রাজা কিন্তু পুত্র দিতে পারিলেন না, নানা ওজর বাহির করিয়া বিলম্ব করিতে লাগিলেন । বয়স হইলে পুত্র বনে পলাইল । দেবতার ক্রোধে রাজার উদরী রোগ হইল । পুত্র রোহিত বনের মধ্যে অজীগৰ্ত্ত নামক এক ব্রাহ্মণকে দেখিতে পাইলেন। তাহার তিন পুত্র ছিল। রোহিত মনে করিলেন, অজীগর্তের একটি পুত্রকে খরিদ করিয়া পিতার নিকট পাঠাইয়া দিই। আমার বদলে তাহাকে দিলেই বরুণ খুসি হইবেন । ইহাকেই বলে নিষ্ক্রয়। তিন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠকে তাহার বাপ ছাড়িয়া দিল না ; কনিষ্ঠকে মা ছাড়িল না। অবশেষে মধ্যম শুনঃশেফকে রোহিত খরিদ করিয়া লইলেন । রাজা শুনঃশেফকে পশুরূপে পাইয়া যজ্ঞের আয়োজন করিলেন । যজ্ঞের পর্য্যগ্নিকরণ পর্য্যস্ত হইয়া গেল, কিন্তু শুনঃশেফকে বধ করিবার লোক পাওয়া যায় না। নরপশু-বধে কেহ রাজি হয় না। পিতা অজীগৰ্ত্ত উপস্থিত ছিল। সে মূল্য পাইয়া পুত্রকে বেচিয়াছিল ; আর কিছু মূল্য পাইয়। খড়গহন্তে পুত্রবধে উপস্থিত হইল। পুত্র তখন অগত্য দেবতাদিগকে ডাকিতে লাগিলেন। নানা দেবতার উদ্দেশে তাহার মুখ দিয়া ঋকুমন্ত্র বাহির হইতে লাগিল । এই ঋকুমন্ত্রগুলি ঋগ্বেদসংহিতার প্রথম মণ্ডলে পাওয়া যায়। দেবতারা খুঁসি হইলেন ; শুনঃশেফের বন্ধন খুলিয়া গেল। অজীগর্ভ তখন বলিলেন, বাবা শুনঃশেফ, আমার কাছে ফিরে এস। ঋত্বিকৃদিগের মধ্যে একজন ছিলেন স্বয়ং বিশ্বামিত্র। তিনি শুনঃশেফকে কোলে লইয়া বলিলেন, শুনঃশেফ, তুমি এই পিশাচ বাপটার কাছে যাইও না। আমি তোমাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করিলাম। আমার পুত্ৰগণের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ হইবে। শুনঃশেফের মুখ দিয়া ইতিপূৰ্ব্বেই ঋকমন্ত্র বাহির হইয়াছিল ; তদবধি তিনি ঋষি দেবরাত নামে প্রসিদ্ধ হইলেন। বিশ্বামিত্রের অনুগ্রহে তিনি জহ্ন বংশের আধিপত্য এবং গাধিবংশের দৈব কৰ্ম্মের অধিকারী হইয়া উভয় বংশের