পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা ; পশুষাগ ও ইষ্টষাগ Wo a গৌরব বাড়াইলেন। বেদপন্থী সমাজের যে যুগের কথা বলিতেছি, সে সময়ে নরষজ্ঞ প্রচলিত ছিল কি না, এ প্রশ্ন উঠে। শুনঃশেফের উপাখ্যান পড়িয়া প্রথমেই সন্দেহ জন্মে, তখন নরযজ্ঞ হয়ত প্রচলিত ছিল । পশ্চিমের পণ্ডিতেরা বৈদিক সাহিত্যের যথোচিত আলোচনা করিয়াছেন ; কিন্তু বেদপন্থী সমাজের কোন দোষ বা ক্রটি পাইলে তাহ। ঢাকিবার জন্য বিশেষ আগ্রহের পরিচয় দেন নাই । তাহারাও প্রায় একবাক্যে স্বীকার করিয়াছেন, সে সময়ে নরযজ্ঞ চলিত ছিল না । শুনঃশেফের গল্প, গল্প মাত্র । উহা ইতিহাস নহে। পণ্ডিতেরা প্রায় একবাক্যে বলেন, শুনঃশেফের উপাখ্যানটি পরবর্তী কালের কাল্পনিক উপাখ্যান । নরষজ্ঞ চলিত থাকিলে শুনঃশেফকে বধের জন্য লোকের অভাব হইত না । বিশ্বামিত্র, যিনি যজ্ঞের ঋত্বিক ছিলেন, তিনি ত শুনঃশেফের বাপের উপর চটিয়াই আগুন হইয়াছিলেন ; যজ্ঞ পণ্ড হওয়ায় তিনি খুসিই হইয়াছিলেন। শুনঃশেফও পিতাকে বলিয়াছিল—তুমি আমার বাপ নহ ; তুমি যে কৰ্ম্ম করিয়াছ, শূত্রেও তাহ পারে না। অতএব এই উপাখ্যান হইতে এইরূপ প্রতিপন্ন হয় না যে, নরযজ্ঞ সে সময়ে প্রচলিত ছিল। বেদে পুরুষমেধের কথা পাওয়া যায়। কিন্তু ইহাও নরষজ্ঞ নহে। পশ্চিমের পণ্ডিতেরা বলিয়াছেন যে, ইহা symbolical sacrifice. প্রাচীন বেদপন্থী সমাজে নরষজ্ঞ ছিল না, সে বিষয়ে মতভেদ নাই বলিলেই হয় । সে সব কথা এখন থাক। শুনঃশেফের উপাখ্যানে আপনারা দেখিলেন, রাজপুত্র রোহিত আপনার বদলে শুনঃশেফকে অর্পণ করিয়া দেবতাকে তৃপ্ত করিতে চাহিতেছেন। এইরূপ একের বদলে অন্যকে প্রদান, একের প্রতিনিধিরূপে অন্যকে প্রদান— ইহার নাম নিষ্ক্রয়—vicarious offering. যজ্ঞানুষ্ঠানে এই নিষ্ক্রয়ের প্রথা বহু দেশে প্রচলিত আছে। টাইলর সাহেবই নানা দেশ হইতে নানা দুষ্টাস্ত সংগ্ৰহ করিয়াছেন । খ্ৰীষ্টীয় ধৰ্ম্ম এই নিষ্ক্রয়ের থিয়োরির উপর প্রতিষ্ঠিত । সমস্ত মানবজাতি বাবা আদমের পাপে পাপী । সেই পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য sacrifice দরকার । য়িহুদীদের মধ্যে পাপ-ক্ষালনার্থ পশুবলির প্রথা প্রচলিত ছিল । জেহোবার মন্দিরে সহস্ৰে সহস্ৰে পশু বলি হইত। খ্ৰীষ্ট আসিয়া বলিলেন, পশু বলির আর প্রয়োজন নাই। মানুষ আপনাকে বলি না দিলে বিধাতার ক্রোধ যাইবে না ; নরবলি আবখ্যক । কিন্তু বিধাতা করুণাময় ; তিনি দেখিলেন, আমি নিজে দয়া না করিলে মানুষের পরিত্রাণ নাই। অতএব তিনি পুত্রকে মর্ত্যলোকে পাঠাইলেন। এই পুত্ৰই খ্ৰীষ্ট ; পিতাপুত্রে কোনও ভেদ নাই ; পিতাপুত্রে উভয়েই একাত্মা। ঈশ্বর এক বই দুই নহেন। কিন্তু পিতাও যেমন ঈশ্বর, পুত্রও ঠিক তেমনই ঈশ্বর। এ একরকম অচিস্ত্য ভেদাভেদের ব্যাপার। ভেদ সত্ত্বেও ভেদ নাই, এ হেঁয়ালি মানুষের অধিগম্য নহে। যাহাই হউক, খ্ৰীষ্ট মানবদেহ ধরিয়া অবতীর্ণ হইলেন। তিনি একাধারে ষোল আনা ঈশ্বর এবং ষোল অান মানুষ ; পরিপূর্ণ ঈশ্বর এবং পরিপূর্ণ মহিষ । পরিপূর্ণ মাহষ বলিয়াই তিনি সমস্ত মানবজাতির প্রতিনিধি। তিনি আপনাকে স্বেচ্ছাপূর্বক ঘঙ্গীয় পশুরূপে অপর্ণ করিলেন। তাহার রক্তে মানবজাতির