পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা ; পশুযাগ ও ইষ্টিযাগ 8X মাংস এবং আমার রক্ত ভোজন করা হইবে । ইহার তাৎপৰ্য্য এই যে, আমি যজ্ঞীয় পশুরূপে আপনাকে বলি দিলাম ; যজমানের পক্ষে হবিঃশেষ ভক্ষণ আবশ্যক— আমার রক্ত মাংস ভক্ষণ আবশ্যক। আমার তিরোভাবের পর তোমরা এইরূপে রুটি এবং মদ উৎসর্গ করিয়া ভক্ষণ করিও । ইহাতেই তোমাদের দৈনন্দিন যজ্ঞ সাধন হইবে । জেহোবার মন্দিরে আর পশু বলির প্রয়োজন হইবে না। তদবধি পৃথিবীর যাবতীয় খ্ৰীষ্টান এই অনুষ্ঠান পালন করিয়া আসিতেছেন । র্তাহার রুটি ও মদ উৎসর্গ করিয়া তাহা ভক্ষণ করেন। যথাবিধি মন্ত্রপাঠপূৰ্ব্বক উৎসর্গের দ্বারা ঐ রুটি খ্ৰীষ্টের মাংসে এবং মদ খ্ৰীষ্টের রক্তে পরিণত হয় । উহা খাইলে খ্রষ্ট্রেরই রক্ত এবং মাংস খাওয়া হয়। খ্ৰীষ্টসম্পাদিত মহাযজ্ঞের অনুকরণে র্তাহার আশ্রিতেরা এই যজ্ঞ HoffņR FITR I Řzfg = frè gệ= eucharistic sacrifice. ŘE বস্তুতই হবিঃশেষ ভক্ষণের ব্যাপার। ইহা দ্বারা খ্রষ্ট্রের সহিত খ্ৰীষ্টানের একাত্মতা সম্পাদিত হয়। এই জন্য এই অনুষ্ঠানের নাম Holy Communion । এ দেশের ব্রহ্মবাদীদের মধ্যে যেমন তর্ক উঠিয়াছিল, অগ্নি ও সোমের উদ্দিষ্ট পশুর মাংস নরমাংস কি না, সেইরূপ খ্ৰীষ্টানদের মধ্যেও তর্ক উঠিয়াছিল, বস্তুতই রুটি ও মদ খ্রীষ্টের মাংস ও রক্তে পরিণত হয় কি না ? বস্তুতই উহা রক্ত মাংসে পরিণত হয়, তাহ কোনও কেমিষ্ট বলিতে পারিবেন না। অথচ সমস্ত খ্ৰীষ্টান এক সময়ে একযোগে বলিতেন যে, উৎসগের পর রুটি রুটি থাকে না, মদ মদ থাকে না ; সত্য সতাই রক্ত মাংসে পরিণত হয়। র্যাহারা ভক্ত, তাহারা স্পষ্টই দেখিতে পাইতেন, উৎস্পষ্ট কটি হইতে রক্তবিন্দু ক্ষরিত হইতেছে। মদের ও রুটির এইরূপে রক্ত মাংসে পরিণতির নাম transubstantiation. রোমান এবং গ্রীক চার্চের সকল লোকেই অর্থাৎ বারো অান। খ্ৰীষ্টান এই বিংশ শতাব্দীতেও এই অলৌকিক পরিণতি ব্যাপারে বিশ্বাস করেন। গুরুকল্প ডাক্তার প্রফুল্লচন্দ্র রায় মহাশয় এখনই রাসায়নিক বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইবেন যে, রুটির মধ্যে কেবলই starch আছে ; উৎসর্গ দ্বারা উহা proteid এ পরিণত হয় নাই। র্তাহার শিষ্যস্থানীয় আমাকেও সেই কথায় সায় দিতে হইবে। অথচ ইউরোপের অধিকাংশ লোক এখনও বিশ্বাস করে, ঐ রুটি আর রুটি থাকে না ; মদ মদ থাকে না। এই বিশ্বাসে আঘাত করিলে তাহদের জীবনের গ্রন্থি ছিন্ন হইয়া যাইবে । আর বাহুল্যে কাজ নাই। এ বিষয়ে আবার আমাকে আসিতে হইবে । খ্ৰীষ্টীয় সমাজে যজ্ঞাতুষ্ঠানের তাৎপৰ্য্য যে একই রকম, তাহ দেখাইবার জন্যই এ প্রসঙ্গ আমি তুলিয়াছি। খ্ৰীষ্টানের দেবতা ইহুদীর দেবতারই রূপান্তর। ইহুদীর দেবতা রক্ত মাংস দুই চাহিতেন ; তাই খ্ৰীষ্ট রক্ত মাংস দুই দিয়াছিলেন । মদ হইল রক্ত ; রুটি হইল মাংস। আমাদের দেশে আধুনিক কালে মহাদেবী রক্তমাংসবলিপ্রিয়। কিন্তু বৈদিক দেবতারা রক্তপ্রিয় ছিলেন না। পশুর রক্ত রাক্ষসেরা পাইত ; দেবতারা কেবল মাংসেই সস্তুষ্ট থাকিতেন । পুরোডাশ বা রুটি মাংসের স্থানীয়। খ্ৰীষ্টানের রুটি যেমন মাংসস্থানীয়, আমাদের রুটিও তেমনই মাংসস্থানীয়। রক্তটা গেল কোথায় ? ঐতরেয় ব্রাহ্মণ তাহার উত্তর দিতেছেন। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ বলিতেছেন—