পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8。 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র নিঃসঙ্কোচে বলিতেছেন, —এই যে পুরোডাশদান, এতদ্বারা পশুরই আলস্তন হয় । যে যব বা ধান হইতে পুরোডাশ প্রস্তুত হয়, তাহাতে যে কিংশারু বা খড় লাগিয়া থাকে, তাহাই পশুর লোম। যে তুষ থাকে, তাহাই পশুর চৰ্ম্ম । যে রুটি প্রস্তুত হয়, তাহাই মাংস ৷ যে ক্ষুদ ফেলিয়া দেওয়া হয়, তাহাই রক্ত । কুলায় ঝাড়িয়া তুষের এবং ক্ষুদের কণা রাখিয়া দেওয়া হইত এবং যাগশেষে উহা রাক্ষসদিগকে দেওয়া হইত, ইহা পূর্ণমাসযাগ প্রসঙ্গে বলিয়াছি। এইরূপে রাক্ষসেরা তাহাদের প্রাপ্য রক্তের ভাগ পাইত । আমাদের দেবতারা রক্ত চাহিতেন না। খ্ৰীষ্টানের যজ্ঞে রক্তের স্থলে মদ দিতে হয় । বৈদিক যজ্ঞে দুই একটা স্থলে স্বরার প্রচলন দেখা যায়। সোঁত্রামণি যাগে সুরার প্রচলন ছিল। ক্ষত্রিয় রাজাদের রাজস্বয় প্রভৃতি যজ্ঞে স্বরার প্রচলন দেখা যায় । সাধারণতঃ যজ্ঞে স্বরা চলিত না। কিন্তু আর একটা মাদক দ্রব্য চলিত। উহ। সোমলতার রস । সোমযাগের কথা এইবার বলিতে চাহি । আপনারা ধৈর্য্য ধরিয়৷ প্রস্তুত থাকুন। সোমযাগ সোমযজ্ঞ অতি বৃহৎ ব্যাপার। ইহার অনুষ্ঠানগুলি অত্যন্ত জটিল। অনেক সরঞ্জাম আবশ্যক ; বহু ঋত্বিকু আবশ্বক ; ব্যয়-বিধানও যথেষ্ট । সকলের পক্ষে ইহ সাধ্য ছিল না। সেই জন্য ইহা নিত্যকৰ্ম্মের মধ্যে গণ্য হইত না। তবে ব্রাহ্মণের ঘরে পর পর তিন পুরুষের মধ্যে কেহ সোমযাগ না করিলে নিন্দ হইত। সেই ব্রাহ্মণকে দুব্রাহ্মণ বলিত । সোমযজ্ঞ আৰ্য্যজাতির অতি প্রাচীন অনুষ্ঠান। আর্য্যজাতির ভারতবর্ষে প্রথম প্রবেশের পূর্বেই ইহা প্রচলিত ছিল। প্রাচীন ইরাণীদের মধ্যে সোমযজ্ঞ চলিত ছিল । সোম স্বয়ং একজন দেবতা। দেবতাদের মধ্যে একজন রাজা। পরবর্তী কালে দেবতাদের মধ্যে চারি জন রাজার কথা শুনা যায়। এক এক রাজা এক এক দিকের অধিপতি। রাজা ইন্দ্ৰ পূৰ্ব্বদিকের, রাজা যম দক্ষিণ দিকের, রাজা বরুণ পশ্চিম দিকের, রাজা সোম উত্তর দিকের অধিপতি । দেবতা সোম দু্যলোকে অবস্থান করেন। পার্থিব সোম মৰ্ত্ত্যলোকে তাহার-প্রতিনিধিস্বরূপ। এই পার্থিব সোম একজাতীয় পাৰ্ব্বত্য উদ্ভিদ। হিমালয়ের উত্তরে মুজবান পৰ্ব্বতে ইহা পাওয়া যাইত। মূজবান পৰ্ব্বত কোথায় বলা যায় না। হয়ত ইহাই পরবর্তী কালে কৈলাস পৰ্ব্বতে দাড়াইয়াছে। কেন না, মূজবান পৰ্ব্বতে রুদ্র দেবতার বাস ছিল । বেদের মধ্যেই তাহার উল্লেখ আছে। এই রুদ্র দেবতা পরবর্তী কালে আমাদের মহাদেবে পরিণত হইয়াছেন। সোম সেই মহাদেবের চিহ্ন ! মহাদেব ললাটে বা মস্তকে সোমকলা ধারণ করেন। এখন আমরা সোম অর্থে চন্দ্ৰ বুঝি। ব্রাহ্মণ-গ্রন্থেও সোম এবং চন্দ্রকে এক বলিয়া গ্রহণ করা হইয়াছে। পশ্চিমের পণ্ডিতেরা সকলে ইহা মানিতে চান না। তাহারা বলেন, বৈদিক