পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

488 রামেন্দ্রমুন্দর রচনাসমগ্র কোন যজ্ঞ এক দিন, কোন যজ্ঞ একাধিক দিন ব্যাপিয়া অহষ্ঠিত হইত। এক দিনের যজ্ঞকে ঐকাহিক যজ্ঞ বলিত। দুই হইতে বারো দিনে সম্পাদ্য যজ্ঞের নাম অহীন । বারো বা বারোর অধিক দিন লাগিলে নাম হইত সত্র । কোন কোন সত্র সংবৎসর ধরিয়া অনুষ্ঠিত হইত। আমি কেবল আপনাদিগকে ঐকহিক অর্থাৎ এক দিনে সম্পাদ্য সোমষাগের বিবরণ দিব। এই শ্রেণীর সোমযাগের সাধারণ নাম জ্যোতিষ্ট্রোম। জ্যোতিষ্ট্রোম অন্ততঃ সাত রকমের ছিল ; অগ্নিষ্টোম, উকৃথ্য, ষোড়শী, অতিরাত্র, অত্যগ্নিষ্টোম, অপ্তোর্য্যাম এবং বাজপেয় । ইহার মধ্যে অগ্নিষ্ট্রোমই প্রকৃতি, অন্যগুলি তাহার বিরুতি মাত্র। অগ্নিষ্ট্রোমের প্রয়োগপদ্ধতি জানিলে অন্যগুলিরও পদ্ধতির মোট জ্ঞান জন্মিবে। ব্রাহ্মণ-গ্রন্থে যজ্ঞের পদ্ধতি ঠিক পাওয়া যায় না। পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানের তাৎপৰ্য্য, মন্ত্রের ব্যাখ্যা এবং তৎসম্পর্কে উপাখ্যানাদি নানা কথা ব্রাহ্মণ-গ্রন্থে রহিয়াছে। খাটি পদ্ধতিটুকু বুঝিবার জন্য শ্রেীতস্বত্র নামক স্মৃতিশাস্ত্রের সাহায্য লইতে হয়। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অবলম্বন করিয়া আশ্বলায়নের শ্রেীতসূত্র এবং শতপথ ব্রাহ্মণ অবলম্বন কাত্যায়নের শ্রেীতসূত্র রচিত হইয়াছিল। আমি ঐতরেয় এবং শতপথ, এই দুই ব্রাহ্মণ এবং আশ্বলায়ন এবং কাত্যায়ন, এই দুই শ্রেীতসূত্রের সাহায্য লইয়া অগ্নিষ্ট্রোমের বিবরণ সংকলন করিয়াছি। অগ্নিষ্টোম যজ্ঞ অত্যন্ত জটিল । উহার যথাযথ বিবরণ দিতে গেলে পরম সহিষ্ণু শ্রোতারও ধৈর্য্য থাকিবে না। সেই জন্য অনেক কাটছাট করিয়া যাহাতে একটা মোট জ্ঞান জন্মিতে পারে, এইরূপ বিবরণ উপস্থাপিত করিতে চাহি । গৃহস্থের অগ্নিশালায় সেমিযাগের স্থান সংকুলান হইত না। গ্রামের বাহিরে গিয়া যজ্ঞভূমি পছন্দ করা হইত। উহার নাম দেবযজন ভূমি। সেখানে দুইটি বেদি নিৰ্ম্মাণ করিতে হইত। একটি ঐষ্টিক বেদি, সোমযাগের আনুষঙ্গিক ইষ্টিযাগগুলির জন্য । তাহার পূর্ব দিকে আর একটা বড় বেদি, ইহার নাম সৌমিক বেদি বা মহাবেদি ; এই মহাবেদি অনেকটা পাশুক বেদির মত। ঐষ্টিক বেদির পার্থে যথাস্থানে আহবনীয়াদি তিন অগ্নির এবং ব্রহ্মাদি ঋত্বিকের স্থান থাকিত ; সমস্তই ইষ্টষাগের মত। এই বেদিকে ঘিরিয়া খুটির উপর আচ্ছাদন দিয়া যে যজ্ঞশালা নিৰ্ম্মিত হইত, তাহার নাম প্রাগ বংশশালা ; খুটির উপরের বঁাশগুলি পশ্চিম হইতে পূৰ্ব্বমুখে খাটান হইত, সেই জন্য নাম প্রাগ বংশশালা। মহাবেদির উপরেও ঐরূপ কয়েকটি শালা বা মণ্ডপ তৈয়ার করিতে হইত। পশ্চিমাংশের মণ্ডপটির নাম সদঃশালা ; মাঝখানে হবিৰ্দ্ধান মণ্ডপ ; আর বেদির দুই পার্থে দুইটি ছোট মণ্ডপ, নাম আগ্রীষ্ট্ৰীয় ও মার্জালীয় । সদঃশালার ভিতরে এক সারি অগ্নি থাকিত, অগ্নিস্থানগুলির নাম ধিষ্ণ্য। ধিষ্ণ্যের পাশ্বে বসিয়া ঋত্বিকের সোমযাগের মন্ত্র পাঠ করিতেন । মাঝখানে একটি ভূমুরের ডালের খুটি পোত থাকিত ; নাম ঔচুম্বরী শাখা— উদগাতা ও র্তাহার সহকারীরা ঐ ঔচুম্বরী স্পর্শ করিয়া সাম গান করিতেন। দুই পাশের দুই কুঠরিতেও দুইটি ধিষ্ণ্য বা অগ্নিস্থান থাকিত। মহাবেদির পূর্বাংশে উত্তরবেদি ও তাহার নাতি পাণ্ডক বেদির মতই ; উহার পূর্ব দিকে পশু বন্ধনের