পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : সোমযাগ is চন্দ্র অভিন্ন । ঋগ্বেদসংহিতার মন্ত্রমধ্যেও কয়েক স্থলে সোম অর্থে যে চন্দ্র, তাহা মনে করিতেই হয়। ঋগ্বেদসংহিতার দশম মণ্ডলে একটি প্রসিদ্ধ স্থত্ত আছে ; সূর্য্যকন্যা স্থৰ্য্যাকে তাহার ঋষি বলা হইয়াছে। ঐ স্থত্তন্মধ্যে স্থৰ্য্যারই বিবাহের বর্ণনা রহিয়াছে। অত্যন্ত গুরু গম্ভীর ভাষায় ঐ স্থক্তের আরম্ভ হইয়াছে। “পৃথিবী সত্য দ্বারা উত্তম্ভিত রহিয়াছে, দ্ব্যলোক স্থৰ্য্য দ্বারা ধৃত রহিয়াছে, আদিত্যগণ ঋতকে আশ্রয় করিয়৷ দু্যলোকে রহিয়াছেন ; সোমও ঋতের আশ্রয়ে ধৃত রহিয়াছেন। সোমের বলেই আদিত্যগণ বলীয়ান, সোমের বলেই পৃথিবী মহীয়সী । অথো নক্ষত্রাণামেষামুপস্থে সোম আহিত:—নক্ষত্রগণের সন্নিধানেই সোম অবস্থিত রহিয়াছেন।” নক্ষত্রগণের নিকটে যে সোম, সে সোমকে চন্দ্রের সহিত অভিন্ন মনে করা যাইতে পারে । লতা সোমকে সেই চন্ধের পার্থিব মূৰ্ত্তিও মনে করা যাইতে পারে। কিন্তু ঋষি পরক্ষণেই সাবধান হইয়া বলিতেছেন, “সোমং মন্যতে পপিবান যং সংপিষস্তি ওষধিম, সোমং যং ব্ৰাহ্মণা বিদু: ন তস্তাশ্নাতি কশ্চন”—ওষধি সোমকে পেষণ করিয়া লোকে মনে করে যে, সোম পান করিলাম, কিন্তু ব্রাহ্মণের যে সোমের নিগৃঢ় তথ্য জানেন, সে সোমকে কেহই পান করিতে পায় না । পুনরায় জোরের সহিত বলা হইতেছে, “ন তে অশ্নাতি পার্থিব:”—পৃথিবীর কেহই সোমকে পান করিতে পায় না। আবার বল। হইয়াছে, “যং ত্বা দেব প্রপিবন্তি তত আপ্যায়সে পুনঃ”—দেব সোম, তোমাকে যে পান করা যায়, তাহাতে তোমার ক্ষয় হয় না, তোমার বৃদ্ধিই হইয়া থাকে। এই সোম দেবতা কোন দেবতা ? ব্যাপারটা একটা হেঁয়ালির মত। পশ্চিমের পণ্ডিতেরা এখনও এই হেঁয়ালির রহস্ত ভেদ করিতে পারেন নাই। জৰ্ম্মান পণ্ডিত হিলিব্রান্ত জোরের সহিত বলেন, চন্দ্রই আর্য্য জাতির প্রধান দেবতা ছিলেন, চন্দ্রই সোম ; ঋকৃসংহিতায়ও সৰ্ব্বত্র সোম অর্থে চন্দ্র । অন্য পণ্ডিতেরা বলেন, ঋকৃসংহিতায় সোম সোমলতা মাত্র ; ক্রমশঃ তাহাতে চন্দ্রত আরোপিত হইয়াছে ; ব্রাহ্মণ-গ্রন্থ প্রচারের সময় তিনি একবারে চন্দ্র হইয়া গিয়াছেন। পণ্ডিতে পণ্ডিতে যখন বিতণ্ড, তখন আমাদের মত মূখের নিরস্ত থাকাই উচিত। কিন্তু চন্দ্রের সহিত পার্থিব সোমলতার এই সম্পর্ক কিরূপে কল্পিত হইল, মানববিজ্ঞানের পক্ষ হইতে তাহার একটু আলোচনা আবশ্বক । প্রশ্ন এই যে, চন্দ্রের ও সোমলতার সাদৃশু কোথায় ? নিতান্ত আন্দাজের উপর এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হইবে । সংস্কৃত সাহিত্যে বহু স্থলে উল্লেখ আছে যে, স্থৰ্য্য অস্তমিত হইলে সূর্য্যের তেজের কতকটা চন্দ্রে প্রবেশ করে ; কতকটা ওষধিমধ্যে প্রবেশ করে ; তাই রাত্রিকালে চন্দ্র উজ্জল হন, কোন কোন ওষধিও উজ্জল হয় । কোন কোন ওষধি—বন্য লতা বা বন্য উদ্ভিদ, রাত্রিতে উজ্জল হয় ; অর্থাৎ Phosphoresce করে। কথাটা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক নহে। বস্তুতই চাদের আলো এবং বুনো লতার phosphorescence স্থৰ্য্যরশ্মিরই পরিণতি মাত্র । J. হিমালয় পৰ্ব্বতে এইরূপ phosphorescent ওষধি আছে, কালিদাসের সময় হইতে কবিগণ তাহা বলিয়া আলিতেছেন। পাৰ্ব্বত্য.লতাগুলোর এই দীপ্তি কালিদাসের কবিচিত্তে বেশ একটা ধাক্কা দিয়াছিল। কুমারসম্ভবের আরম্ভেই “ভবস্তি যত্ৰৌষধয়ে রজন্তাম্