পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&98 রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র অর্থাং কালা, পিঙলা ও রাঙা মানুষে টোটেম মানে, ধলা ও হলদে মানুষে মানে না। টোটেমের কথা এখন থাক ; দেবতা খাওয়ার দৃষ্টান্ত দুই একটা আলোচনা করিব। মেক্সিকোতে এক কালে নরষজ্ঞ হইত। উহাদের প্রাচীন দেবতাদের নাম উচ্চারণ ভীষণ ব্যাপার। তাহাদের একটি দেবতার নাম ছিল—তেজকাৎলি পোকাস বা ঐরূপ একটা কিছু। বড় লোকের ছেলে ধরিয়া সেই দেবতার নিকট বলি দেওয়া হইত। কিছুকাল ধরিয়া বেচারাকে দেবতা বলিয়া মান্য করা হইত ; সে একাধারে মানুষ ও দেবতা হইত ; অবশেষে তাহাকে বধ করিয়া তার মাংস সকলে বাটিয়া খাইত। মেক্সিকোতে হুইজি-পুঞ্জলি নামে আর একটি দেবতা ছিল ; তাহার ময়দার মূৰ্ত্তি গড়িয়া সকলে খাইত ; মনে করিত, দেবতার মাংস খাওয়৷ হইতেছে । মিশর দেশের প্রধান দেবতা অসিরিসের নাম আপনারা শুনিয়াছেন। পশুমধ্যে বুষ অসিরিসের পার্থিব মূৰ্ত্তি বলিয়া পূজা পাইত। আমাদের গাভী যেমন ভগবতী মিশর দেশের বৃষ সেইরূপ ভগবান ছিলেন। তবে মিশর দেশে এই দেবতাটিকে বধ করিয়া তাহার মাংস সকলে মিলিয়া ভক্ষণ করিত । Encyclopaedia of Religion and Ethics to of foston,"From a very early stratum of religion comes the idea of feeding on the God.” গ্রীকদের মধ্যে, রোমানদের মধ্যে এইরূপ দেবতা খাওয়া প্রথা প্রচলিত ছিল কি না, তাহা লইয়া অনেক বাদানুবাদ ঘটিয়াছে। বাদানুবাদের হেতু আছে ; কেন না, গোড়া খ্ৰীষ্টানের জোরের সহিত বলিতে চাহেন যে, এই দেবতা খাওয়া ব্যাপারটা আমাদের খ্ৰীষ্টীয় ধর্মের বিশিষ্ট অনুষ্ঠান ; আর কোন ধৰ্ম্মে দেবতা খাওয়া নাই। র্যাহারা বৈজ্ঞানিক আলোচনার পক্ষপাতী তাহারা ইহা মানিতে চাহেন না । তাহারা বলেন, উহা সকল দেশে সকল সমাজেই আছে। কাজেই দুই দলে গণ্ডগোল বাধিয়া যায় ; সেই গণ্ডগোলের অস্ত হয় না । দেবতার উদ্দেশে পণ্ডবধ, এবং সেই পশুর মাংস ভক্ষণ বহু দেশেই আছে। কিন্তু সেই পশুটা দেবতা কি না, সেই পশুর মধ্যে দেবতা অধিষ্ঠিত থাকেন কি না, উহার মধ্যে দেবতার real presence আছে কি না, সেই পশু থাইলে দেবতাকে খাওয়া হয় কি না, দেবতাকে আত্মসাৎ করিয়া দেবতার সহিত একতাপ্রাপ্তি ঘটে কি না, ইহা লইয়াই তর্ক উঠে। খ্ৰীষ্টানেরা বলিতে চাহেন, এইরূপে দেবত্বলাভের প্রার্থনা করি—কেবল আমরা। অন্যে কেবল পশুমাংস খায়—উদর পূরণের জন্য ; বড় জোর দেবতার প্রসাদ পাইয়া নিজের উদর পূরণের ব্যবস্থা করে মাত্র। খ্ৰীষ্টানদের মধ্যে এই ব্যাপারটা একটা গৃঢ় রহস্য, একটা mystery ; অন্য জাতির ধৰ্ম্মাহুষ্ঠানে যদি ইহার অম্বরূপ কিছু থাকে, তাহা হইলে খ্ৰীষ্টানেরা বলিবেন, উহা শয়তানের কারসাজি । আজি কালি Mithraism লইয়া খুব আলোচনা হইতেছে। এই মিগ্র দেবতা প্রাচীন পারসীদিগের খুব প্রাচীন দেবতা ; বেদপন্থীদের প্রাচীন দেবতা মিত্রের সহিত ইনি অভিন্ন। বেদে ধিনি মিত্র, আবেস্ত শাস্ত্রে তিনিই মিঞ্জ। আমি ইহাকে মিত্রই বলিব। বেদে ইনি আদিত্যগণের মধ্যে অন্যতম ; ঋখেদসংহিতায় ইহাকে প্রায় সৰ্ব্বত্রই বরুণ দেবতার চিরসহচররূপে দেখিতে পাওয়া যায় –মিত্র