পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : গ্ৰীষ্টষজ্ঞ K۹ و এই আলোচনার পূর্বে আমার একটা কৈফিয়তের প্রয়োজন। আপনার মনে করিবেন না, খ্ৰীষ্টান সমাজের অনুরূপ অনুষ্ঠান আমাদের বেদপন্থী সমাজের মধ্যেও ছিল, এইরূপ প্রতিপন্ন করিয়া আমি বৈদিক ধর্মের মাহাত্ম্য বাড়াইবার চেষ্টা করিতেছি ; ইহাতে আমাদেরও গৌরব বাড়িবে। সেরূপ দুরভিসন্ধি আমার কিছুই নাই। তবে আমি এখানে তুলনামূলক আলোচনায় প্রবৃত্ত হইয়াছি ; বৈদিক ধর্মের সহিত খ্ৰীষ্টীয় ধর্মের কোন সাদৃশু যদি থাকে, তাহা স্পষ্ট করিয়া দেখান আমি কৰ্ত্তব্য বোধ করিতেছি । সেট না দেখাইলে বেদপন্থী সমাজে যজ্ঞাকুষ্ঠানের তাৎপৰ্য্য সম্পূর্ণ বুঝা যাইবে না। সেই সাদৃশু কোথা হইতে আসিল, কিরূপে ঘটিল, আপনার তাহার বিচার করিবেন। আমি এই সাদৃশ্ব অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইব । বৈদিক অনুষ্ঠানে পুরোডাশ বা রুটি দেওয়া হইত , আর সোমরস দেওয়া হইত । রুটিটা পশুমাংসেরই বদলে দেওয়া হইত ; সেই পশুমাংসে কোন দেবতা প্রতিষ্ঠিত ছিলেন কি না ; তাহা দেখিতে হইবে । রক্ত দেওয়া বেদপন্থীর পক্ষে নিষিদ্ধ ; কেন না, বেদপন্থীর দেবতা রক্ত খাইতেন না ; রক্ত রাক্ষসের প্রিয়। খ্ৰীষ্টের রক্ত অমরত্ব দিতে পারে ; কিন্তু আমাদের সোমরস রক্ত নহে ; উহা একবারে অমৃত । উহ! পান করিলে অমর হওয়া যায়—দেবত্ব পাওয়া যায়। কথের পুত্র প্রগাখ ঋষি বলিতেছেন, “অপাম সোমমমৃত অভূম, অগন্ম জ্যোতিরবিদাম দেবান”—আমি সোম পান করিয়া অমর হইয়াছি ; আমি জ্যোতি লাভ করিয়াছি ও দেবগণকে জানিয়াছি। এই পুরোডাশ আর সোমরস দেবতাকে দিতে হইত, আর ঋত্বিকের যজমান সহিত ইহা ভক্ষণ করিতেন। সোমরস পান ত অমৃত পান ; পুরোডাশ ভক্ষণের তাৎপৰ্য্য কি, তাহা আমাকে ভাল করিয়া বুঝিতে হইবে, এবং খ্ৰীষ্টীয় অনুষ্ঠানের তাৎপর্য্যের সহিত ইহার কোন মিল আছে কি না, তাহাও বুঝিতে হইবে। তৎপূৰ্ব্বে খ্ৰীষ্টীয় অনুষ্ঠানটার তাৎপৰ্য্য স্পষ্ট করিয়া বুঝা আবশ্বক। খ্ৰীষ্টজন্মের পর শওয়া তিন শ বৎসর অতীত হইয়াছে । সমস্ত রোমসাম্রাজ্যে খ্ৰীষ্টপূজা ছড়াইয়া পড়িয়াছে ; কিন্তু এখনও মিত্রপূজাকে ঠেলিয়া উঠিতে পারে নাই। খ্ৰীষ্টানের সমস্ত সাম্রাজ্যকে কতকগুলি এলাকায় ভাগ করিয়া ফেলিয়াছেন ; এক এক এলাকা এক এক বিশপের অধীন। রোমের সম্রাট, কাইসার কনষ্টান্টাইন এত দিন 'সন্দেহ দোলায় দোদুল্যমান' ছিলেন ; তুলাদণ্ডের এক পাল্লায় মিত্রকে, অন্য পাল্লায় খ্ৰীষ্টকে বসাইয়া তুলনা করিতেছিলেন। অবশেষে তিনি খ্ৰীষ্টের দিকে ঝুকিয়া পড়িলেন। খ্ৰীষ্টপূজা রোম সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধৰ্ম্ম হইল। কিন্তু ইতিমধ্যে তর্ক উঠিয়াছে, এই খ্ৰীষ্টটি কে ? ঈশ্বরের সহিত ইহার সম্পর্ক কি ? ইনি ঈশ্বরের পুত্র বটে, কিন্তু পিতা পুত্রের সমান কি না ? উভয়ে তুল্যমূল্য কি না ? পুত্র ষোল আন ঈশ্বর হইলে একেশ্বরবাদ থাকে কোথায় ? খ্ৰীষ্ট্রীয় সমাজে ইহা লইয়া দলাদলি রক্তারক্তি পৰ্য্যস্ত আরম্ভ হইয়াছে। কাইসার কনষ্টাণ্টাইন নাইসিয়৷ নগরে খ্ৰীষ্টীয় সঙ্গীতি আহবান করিলেন—বহু পূৰ্ব্বে অশোক যেমন বৌদ্ধ সঙ্গীতি ডাকিয়াছিলেন, সেইরূপ। নানা দেশ হইতে খ্ৰীষ্টান যাজকেরা আসিলেন ; হাজার জুই যাজক আসিলেন, তার মধ্যে তিন শতাধিক বিশপ। রাজপ্রাসাদের বড়