পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છ-૨ রামেজন্বন্দর রচনাসমগ্র দিয়া তাহার কিয়দংশ খাইতে হয় ; সোমযজ্ঞে সোমরস দেবতাকে দিয়া সোমরসের অবশেষ পান করিতে হয়। ইহাই হবিঃশেষ ভক্ষণ । ষজমান একা খাইলে চলে না ; ঋত্বিকৃ ও যজমানে একযোগে খাইয়া থাকেন। এই একযোগে খাওয়াই communion. ইহা একটা সামাজিক অনুষ্ঠান। গৃহস্থের সহিত এক দিকে সমাজের, অন্য দিকে দেবতার মিলন সাধনই এই communion. এই অনুষ্ঠান বিনা যজ্ঞ সম্পূর্ণ হয় না—ধরিতে গেলে এই অনুষ্ঠানেই যজ্ঞের সমাপ্তি। এই সঙ্কীর্ণ অনুষ্ঠানের একটা ব্যাপক তাৎপৰ্য্য আছে । সামাজিক জীবনে সেই তাৎপৰ্য্য প্রয়োগ করিতে হইবে। সেই তাৎপৰ্য্য অতুসারে সমাজমধ্যে জীবনযাত্রা চালাইতে হইবে । আমি দেখাইলাম, এই অনুষ্ঠান এক হিসাবে মানব-সাধারণ অনুষ্ঠান। নানা জাতির মধ্যেই ইহার অনুরূপ অনুষ্ঠান আছে। খ্ৰীষ্টীয় সমাজে এই হবিঃশেষ-ভক্ষণ অনুষ্ঠান eucharist ভক্ষণ। খ্ৰীষ্টানদের মতে এই eucharist ভক্ষণের তাৎপৰ্য্য আমি যথাশক্তি আজ বুঝাইয়াছি। বেদপন্থী সমাজে এই অনুষ্ঠানের তাৎপৰ্য্য বুঝিতে আগামী বারে চেষ্টা করিব। খ্ৰীষ্টীয় সমাজ যে তাৎপৰ্য্য দিয়াছেন, এবং তাহার বহু পুরাতন বেদপন্থী সমাজ যে তাৎপৰ্য্য দিয়াছেন, তাহার তুলনা করিলে আপনারা বিস্মিত হইবেন। এক পক্ষ অপর পক্ষের নিকট ধার করিয়াছেন কি না, সে প্রসঙ্গ আমি আদৌ তুলিব না। আমি সাদৃশ্য দেখাইয়াই নিরস্ত হইব। তার পরে আমি দেখাইতে চাহি, এই অস্থষ্ঠান অথবা এই অনুষ্ঠানের এই তাৎপৰ্য্য আমাদের বেদপন্থী সমাজ কিরূপ অত্যন্ত ব্যপক অর্থে গ্রহণ করিয়াছেন। আমি যে তুলনামূলক আলোচনা করিয়াছি, তাহাতে এই ব্যাপকতা বুঝিবার স্ববিধ হইবে। সুবিধা হইবে বলিয়াই আমি খ্ৰীষ্টযজ্ঞ সম্বন্ধে এতগুলি কথা বলিলাম ; নতুবা খ্ৰীষ্টযজ্ঞের কথা উত্থাপনের কোন প্রয়োজনই ছিল না। খ্ৰীষ্টানের নিকট যাহার নাম eucharist, বেদপন্থীর নিকট তাহার নাম ইড়া । এই ইড়ার অর্থ বুঝিতে হইবে। আপনারা জানিবেন, সঙ্কীর্ণ অর্থে এই ইড়া-ভক্ষণে যজ্ঞের সমাপ্তি ; কিন্তু ব্যাপক অর্থে এই ইড়া-ভক্ষণে মানবজীবনের সম্পূর্ণতা । মানবের গার্হস্থ্য জীবন এবং সামাজিক জীবন, এমন কি, মানবের আধিভৌতিক জীবন এবং আধ্যাত্মিক জীবন, মানবের পার্থিব জীবন এবং অপার্থিব পারমাধিক জীবন— এক কথায় সমগ্র মানবজীবনের এই ইড়া-ভক্ষণেই সম্পূর্ণত এবং সমাপ্তি এবং সার্থকতা। ইহাই আমাদের religion এবং ইহাই আমাদের ethics. এই ইড়া-ভক্ষণের অর্থ এবং তৎপরতা বুঝাইয়া বেদপন্থী সমাজের ভিত্তি কোথায়, বেদপন্থী সমাজের গাথনী কোথায়, তাহা আমি বাহির করিতে চাহি। আর একবার মাত্র আপনাদের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া আমি এই পরম তত্ত্ব বুঝাইবার জন্য আমার ক্ষুদ্র শক্তি অর্পণ করিব। আপনাদিগকে তজ্জন্য প্রস্তুত থাকিতে অনুরোধ করিতেছি।