পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষজ্ঞ কথা : পুরুষ-যজ্ঞ br i হয় । সম্প্রদায়-ভেদে মন্ত্রের ভিন্নতা আছে ; কেহ বা বাগ দেবতারূপী খ্ৰীষ্টকে আহবান করেন, কেহ বা Holy Ghostকে আহবান করেন ; কেহ বা Trinityকে আহবান করেন। অনেকের মতে এই আহবানমন্ত্র পাঠের পরই দেবতার আবির্ভাব হয় ও রুটি মাংসে পরিণত হয়। খ্ৰীষ্টপন্থীর যজ্ঞে যেরূপ, বেদপন্থীর যজ্ঞেও ঠিক তদনুরূপ অনুষ্ঠান আছে। প্রধান দেবতার উদ্দেশে পুরোডাশ আহুতি দিয়া যাহা অবশেষ থাকে, তাহাকে খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করিতে হয়। এক খণ্ডের নাম প্রাশিত্র, উহা ব্ৰহ্মা ভক্ষণ করেন। আর এক খণ্ড অগ্নীৎ ভক্ষণ করেন ; ইহার নাম ষড়বত্ত । আর এক খণ্ড চারি অংশে ব্রহ্মা, হোতা, অধ্বযু ও অগ্নীৎ, এই চারি জনে ভক্ষণ করেন ; ইহার নাম চতুৰ্দ্ধাকৃত ভাগ। আর দুই খণ্ড ব্রহ্মা ও যজমান যজ্ঞসমাপ্তির পর ভক্ষণ করেন, উহা ব্ৰহ্মার ভাগ ও যজমানের ভাগ। এইরূপে পুরোডাশকে কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করার নাম পুরোডাশের অবদান ; ইংরাজীতে traction বা breaking. এই সকল ভাগ ব্যতীত যজমান ও ঋত্বিকৃ, সকলের একযোগে ভক্ষণের জন্য একটা ভাগ থাকে, ইহার নাম ইড়া। ইহা রাথিবীর জন্য একখানি কাঠের পাত্র থাকে ; উহার নাম ইড়াপাত্র। পূর্ণমাস যাগে অধ্বযু্য পুরোডাশের খণ্ড কাটিয়া লইয়া সেই ইড়াপাত্রে রাখেন। প্রথমে ইড়াপাত্রে একটু ঘি ঢালা হয় ; সেই ঘিয়ের উপরে দুইখানা পুরোডাশ হইতে দুই খণ্ড কাটিয়া রাখা হয় ; আবার একটু ঘি ঢালা হয়। এইরূপে নীচে উপরে ঘি-মাখান পুরোডাশখণ্ডের নাম ইড়া। অধ্বযু হোতার আঙলে ঘি মাখাইয়া দেন। হোতা সেই আঙুল দিয়া আপনার ঠোট মাজেন। অধ্বযু হোতাকে ইড়াপাত্র ধরিতে দেন। যজমান ও ঋত্বিকেরা সকলে ইড়াপাত্র স্পর্শ করিয়া থাকেন। হোতা কতকগুলি মন্ত্র পাঠ করেন। এই মন্ত্রে ইড়া-দেবতাকে সমীপে আহবান করা হয়। মন্ত্র পাঠের নাম ইড়ার উপহান ; ইংরাজীতে Invocation, এই আহবানের পর ইড়াদেবী পুরোডাশখণ্ডে আবির্ভাব করেন। তৎপরে আর কয়েকটি অনুষ্ঠানের পর সকলে মিলিয়৷ ইড়া ভক্ষণ করেন। ইড়া-দেবতাকেই ভক্ষণ করা হয়। খ্ৰীষ্টপন্থীর ও বেদপন্থীর অনুষ্ঠানে কতটা মিল, তাহ দেখিলেন । এই ইড়া-দেবতাটি কে ? ইউকেরিষ্টের খ্ৰীষ্ট স্বয়ং যজমান, স্বয়ং পশু, স্বয়ং দেবতা— বাগ দেবতা—Word of God. তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ বলিতেছেন, “যজমানো বৈ পুরোডাশঃ”—এই যে পুরোডাশ, ইহা যজমানই ; পুরোডাশ আহুতির দ্বারা যজমান আপনাকেই আহুতি দিতেছেন। আপনার নিষ্ক্রয়রপে তিনি পশু দিতে পারিতেন ; কেন না, “পশবঃ পুরুষঃ,” পশুগণই পুরুষস্বরূপ অর্থাৎ মহন্তস্থানীয়। এখানে যজমান সেই পশুর পরিবর্তে পুরোডাশখণ্ড দিতেছেন। অতএব সেই পুরোডাশখণ্ড বা ইড়া পশুস্থানীয়। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণই আবার বলিতেছেন,— ‘পশবো বৈ ইড়া”— এই যে ইড়া, ইহা ত পশু । খ্ৰীষ্টানের রুটি যেমন খ্ৰীষ্টরূপী পশুর মাংস, এই ইড়াও সেইরূপ যজমানরূপ পশুর মাংস ৷ ভাল কথা, হোতা তবে মন্ত্রের দ্বারা কোন দেবতাকে আহবান করিলেন ? এই দেবতারও নাম ইড়াদেবী। আপনার এই ইড়াদেবীকে চেনেন কি ? আশ্চৰ্য্য হইবেন, ইড়াদেবী স্বয়ং বাগ দেবতা ; সমস্ত বৈদিক সাহিত্য এক কালে ইহার মাহাত্ম্য-বর্ণনায় পূর্ণ ছিল। ৰে মন্ত্ৰে ইড়াকে আহবান করা হয়