পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা । পুরুষ-যজ্ঞ ウs এটি বশিষ্ঠের। এইরূপ দশটি মন্ত্র আছে। প্রত্যেক মস্ত্রেই ইড়া, ভারতী ও সরস্বতী, এই তিনটি নাম পাইতেছেন। ইহাদিগকে “তিস্রো দেব্যঃ” বলা হইতেছে, অথচ ইহারা তিনে এক । কেন না, এক এক মন্ত্র এক এক দেবতারই উদ্দিষ্ট । ইহার মধ্যে ভারতীর ও সরস্বতীর নাম আজি পৰ্য্যন্ত আপনাদের স্বপরিচিত । এই দুই নামই বাগ দেবীর নাম। ইড়াদেবীকে আপনার ভুলিয়াছেন, কিন্তু ভারতী ও সরস্বতী যদি বাগ দেবী হন, তাহা হইলে ইড়াও বাগ দেবী। অতি প্রাচীন কালে হয়ত ইহারা পৃথকৃ দেবতা ছিলেন ; কালে মিশিয়া এক হইয়া গিয়াছেন। ঋগ বেদে সরস্বতী বহু স্থলে নদীর নাম। এখন সরস্বতী নদী লুপ্ত, কিন্তু এক কালে ইনি বেগবতী ছিলেন । এ কালে যেমন গঙ্গার মাহাত্ম্য, সেকালে সেইরূপ সরস্বতীর মাহাত্ম্য ছিল । ব্রহ্মাবৰ্ত্ত দেশে সরস্বতীতীরে ব্রহ্মবাদীরা বেদেব কৰ্ম্মকাণ্ড-প্রতিষ্ঠার সহিত বেদপন্থী সমাজের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে গল্প আছে যে, একদা ঋষিগণ সরস্বতীতীরে সত্র আরম্ভ করিয়াছিলেন । কবষ নামে একটি লোক সেখানে উপস্থিত ছিল ; সে দাসীপুত্র এবং অব্রাহ্মণ । ঋষিরা তাহাকে মরুভূমিতে খেদাইয়া দিলেন । পিপাসাৰ্ত্ত কবষের মুখ হইতে ঋকৃমন্ত্র বাহির হইতে লাগিল। মন্ত্ৰ শুনিয়। স্বয়ং সরস্বতী মরুভূমিতে স্রোত ফিরাইয়। তাহার কাছে আসিলেন এবং কবষের পিপাসা শাস্তি করিলেন । তদবধি কবষ ঋষি হইলেন । কবষের মন্ত্রগুলিও সোমযজ্ঞে স্থান পাইল । এই মন্ত্রগুলির নাম অপোনপত্রীয় মন্ত্র। সোমযজ্ঞের দিন প্রত্যুষে যখন একধনা' নামক জল আনা হয়, তৎপূৰ্ব্বে হোতা এই মন্ত্রগুলি পাঠ করেন। যে সরস্বতীর এই মাহাত্ম্য, সেই সরস্বতী উত্তর কালে বেদবাক্যের দেবতা বা বাগ দেবতা বলিয়া গৃহীত হইবেন, তাহাতে বিস্ময় নাই । তাহার পর ভারতী । ইনি হয়ত ভরতবংশের কুলদেবতা ছিলেন। এই ভরতবংশের কীৰ্ত্তিবর্ণনায় আমাদের সাহিত্য পূর্ণ। কালিদাসেব প্রসাদে দুষ্মন্তপুত্ৰ সৰ্ব্বদমন ভরতের নাম কে না জানে! ঐতরেয় ব্রাহ্মণে দেখিবেন, ঋষি দীর্ঘতম দুষ্মন্তপুত্র ভরতকে রাজস্থয় যজ্ঞে অভিষেক করিয়াছিলেন। আরও দেখিবেন, তিনি পুথিবীর অস্ত পর্য্যস্ত জয় করিয়া একশ ত্রিশটি অশ্বমেধ যজ্ঞ করিয়াছিলেন। কালিদাসের দিলীপ মহাবল পুত্র রঘুর সাহায্যেও শতক্ৰতু হইতে পাবেন নাই। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ বলিতেছেন, মনুষ্য যেমন হস্ত দ্বারা দু্যলোক স্পর্শ করিতে পারে না, সেইরূপ ভরতের কৃত মহাকৰ্ম্ম পূৰ্ব্বে বা পরে কেহ করিতে পারেন নাই। এই ভরতবংশের কীৰ্ত্তিকাহিনী লইয়া মহাভারত । অধিক কি বলিব, এই ভরতের নাম হইতেই আমাদের ভারতবর্ষ। এই ভরতবংশের কুলদেবতা ভারতী ক্রমে বেদপন্থীর প্রধান দেবতা হইয়াছেন। সরস্বতীর ও ভারতীর পরে ইড়াদেবী। ঋগ্বেদে ইহার একটা বিশেষণ মচুম্বতী বা মানবী। এই বিশেষণটি কিরূপে আসিল, তাহার সন্ধানের জন্য শতপথ ব্রাহ্মণে যাইতে হইবে । শতপথ ব্রাহ্মণের গল্পটি বলিব । আপনারা বৈবস্বত মন্থর নাম জানেন। কালিদাসের ভাষায় ছন্দের মধ্যে যেমন প্রণব, রাজাদের মধ্যে তিনি সেইরূপ আদ্য রাজা ছিলেন। সেই মন্ত্র একদিন প্রাতঃকালে হাত-মুখ ধুইতেছিলেন। হাতের কাছে একটি মাছ আসিল । মাছ