পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শবাকথা ? বাঙ্গালা ব্যাকরণ Σ ο ΦΕ অকুষ্ঠিতভাবে সেই ভাণ্ডার লুঠ করিয়া আমাদের বাঙ্গালী ভাষার শরীরে অলঙ্কার পরাও, কেহই চৌর্য্যবৃত্তির জন্য দণ্ডিত করবে না । কিন্তু এইখানে একটু তর্ক আসিয়া পড়িবে। খাট বাঙ্গালা শব্ব দ্বারা ভাষার সৌষ্ঠব ও সৌন্দৰ্য্য সাধিত হইতে পাবে না, ইহা স্বীকারে অনেকে কুষ্ঠিত হইবেন। ইংরেজী দৃষ্টান্ত সম্মুখে আছে। অনেক ইংবেজী লেখক ভাষার সৌষ্ঠবের জন্য মুখভরা, গালভর বিজাতীয় লাটিন শব্দের বহুল ব্যবহার করিযাছেন ; প্রচলিত দৃষ্টাস্ত জনসনের ভাষা । কিন্তু অনেকে আবার খাটি ই-বেজী, যাহাকে নিতান্ত homely আখ্যা দেওয়া যাইতে পাবে, এরূপ শব ব্যবহাব কবিযাও মধুর ললিত সুন্দর রচনা করিয়াছেন। ইংরেজী বাইবেলের ভাষা, যাহাতে গালভবা লাটিন শবের স্থান নাই বলিলেই চলে, সৌষ্ঠবে ও সৌন্দর্য্যে সেই ভাষা ইংবেজী সাহিত্যে অদ্বিতীয়। লাটিন শব্দের আডম্বর না থাকিলেও টেনিসনের লকসি হলের ভাষায় ছন্দের ধ্বনি কানে মেঘগর্জনের মত বাজিতে থাকে ; সংস্কৃত মন্দাক্রাস্ত ছন্দও অনেক সময় তাহাব নিকট হারি মানে। যাহার প্রতিভাবান, যাহাবা ক্ষমতাবান, র্যাহাবা ওস্তাদ, র্তাহাদেব হাতে ঘোষবান সংস্কৃত শব্দের প্রয়োজন নাই ; চলিত বাঙ্গাল শব্দেরই সাহায্য লইয়া তাহাবা প্রচুর পরিমাণে রস স্বষ্টি করিতে পারেন। রসম্বষ্টি যে কেবল শব্দের গুণে হয়, এমন নহে ; শব-নির্বাচন ও শব্দ-বিন্যাসের গুণেও হয়। ক্ষমতাশালী লেখকের হাতে সকলই সম্ভব। দুষ্টান্তও যথেষ্ট আছে। চণ্ডীদাস অথবা কৃত্তিবাস সাধু সংস্কৃত শব্দ অধিক ব্যবহার করেন নাই। তাহাদের ভাষায় র্যাহারা রস পাইতে অক্ষম, তাহাদিগকে আমরা কৃপাপাত্র বলিয়৷ নির্দেশ করিতে কুষ্ঠিত হইব না। পণ্ডিত শরচ্চন্দ্র শাস্ত্রী মহাশয় ‘ভাবতী’ পত্রিকায় লিখিয়াছেন যে, বাঙ্গালা ভাষা হিন্দী মরাঠী প্রভৃতি অন্যান্য প্রাদেশিক ভাষা হইতে উৎকর্ষ লাভ করিয়াছে, তাহাব কারণ এই যে, বাঙ্গালায় যথেষ্ট পবিমাণে সংস্কৃত শব্দ প্রয়োগ চলে ; হিন্দী প্রভৃতিতে চলে না। ভাষার এইরূপ নমনীয়তা আবশ্বক, তাহাতে সন্দেহ নাই। সংস্কৃত শব্দ লইয়া যদি সম্পত্তি বাড়ান চলে ও তাহাতে কোন বিঘ্ন না থাকে, তাহাতে মন্দ কি ? কিন্তু অনেকে হয়ত পাণ্টাইয়া বলিবেন, উহা বাঙ্গালা ভাষার দুর্বলতার চিহ্ন। যে ভাষা অন্য ভাষা হইতে শব্দ গ্রহণ না করিয়া কাজ চালাইতে পারে না, সে ভাষা সেই পরিমাণে দুৰ্ব্বল, বাঙ্গালা ভাষা যে দুৰ্ব্বল, তাহার নানা লক্ষণ আছে। বাঙ্গালায় রাগ করা চলে না, গালি দেওয়া চলে না। বাগ করিতে হইলে আমবা হিন্দীর সাহায্য লই ; ইংরেজীনবিস লোকে ইংরেজী চালান। ইহা বাঙ্গালার পক্ষে উৎকর্ষের চিহ্ন নহে। শাস্ত্রী মহাশয় বোধ হয় এরূপ আবদার করিলেন না যে, সাহিত্যের ভাষায় গালি দিবার কোন কালে প্রয়োজন হইবে না। যদি প্রয়োজন হয়, তখন সংস্কৃতশব্দভূষিত সাধু ভাষা কতটা সফল হইবে, বিবেচ্য বটে। চোবকে ডাকিবার সময় ‘ওরে চোর" না বলিয়া ‘আরে চেীর’ বলিতে পণ্ডিত মহাশয়েরাও কুষ্ঠিত হইবেন। বিশুদ্ধিবিচারের পূর্বে বিশুদ্ধি কাহাকে বলে, বুঝিবার চেষ্টা কৰ্ত্তব্য। বাঙ্গালী ভাষায় বহুল পরিমাণে সংস্কৃত শব্দের প্রয়োগ আছে। সাহিত্যের ভাষাতেও আছে ; কথাবাৰ্ত্তার ভাষাতেও আছে। এই সকল শব্দ খাট সংস্কৃত শব্দ ; বাঙ্গালা ভাষা