পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকশিক্ষা * দিয়াছেন, এবং বসিয়া বসিয়া দেখিতেছেন, চেষ্টা দ্বারা আমরা তাহা বাড়াইয়া লই কি না । বস্তুতঃ আমার চেষ্টা দ্বারা জ্ঞান ও শক্তি, উভয়ের পরিমাণ বাড়াইয়া লইতে পারি, এবং সেই উদ্দেশ্যেই পৃথিবীর যাবতীয় পাঠশালা স্থাপিত হইয়াছে। নানাবিধ জ্ঞানের মধ্যে নিজের শক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান একটু বিশেষ আবশ্যক। আমাদের মধ্যে যে শক্তি নিগৃঢ় ভাবে সঞ্চিত আছে, তাহা আমরা অনেক সময় জানিতে পারি না ; এই জ্ঞানটাকে ফুটাইয়৷ তোল শিক্ষার একটা বিশেষ উদ্দেশু । ব্যক্তির হিতের জন্য, সমাজের হিতের জন্য .এইরূপ জ্ঞান বৰ্দ্ধনার্থ ও শক্তি বৰ্দ্ধনার্থ শিক্ষার ব্যবস্থা কল্পিত হইয় থাকে। কিন্তু এই কল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা কোথাও সম্পূর্ণ ফল লাভ করিতে পারে নাই। দুঃখের বিষয় যে, কল্পিত শিক্ষাপ্রণালী ব্যবস্থাদোষে অনেক সময় উদ্দেশ্যের প্রতিকূল হইয়া দাড়ায় এবং মহন্তত্বের উৎকর্ষ সাধনে সাহায্য না করিয়া, বরং বিঘ্ন উপস্থিত করে। লেখা, পড়া ও খড়ি পাতা, মানবজাতির শিক্ষাঘটিত ইতিহাসে এই তিনটা অতি অদ্ভূত উদ্ভাবনা । জ্ঞানবৃদ্ধির ও শক্তিবৃদ্ধির এমন উৎকৃষ্ট উপায় আর উদ্ভাবিত হয় নাই। যে লিখিতে পড়িতে ও খড়ি পাতিতে শিখিয়াছে, সে যেন একটা নুতন জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কৰ্ম্মেন্দ্রিয় লাভ করিয়াছে। বিধাত যে কয়ট ইন্দ্রিয় দিয়াছেন, ইহা তাঁহার উপর অতিরিক্ত লাভ । এই কৃত্রিম ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে মনুষ্যের বল কতটা বাড়িয়া গিয়াছে, তাহার ইয়ত্ত করা যায় না। এই কৃত্রিম ইন্দ্রিয়লাভে কাহাকেও বঞ্চিত রাখা সাধ্যপক্ষে উচিত নহে। প্রত্যেক বালক বালিকা যাহাতে এই নূতন সামর্থ্য লাভের সুযোগ পায়, তজ্জন্য সমাজের সমবেত চেষ্টার প্রয়োগ করা কৰ্ত্তব্য। লোকশিক্ষা নূনকল্পে এই ত্ৰিবিধ বিদ্যাতে—লেখা পড় ও খড়ি পাতাতে আবদ্ধ হওয়া উচিত। কিন্তু নূনকল্পে যাহা আবশ্বক, তাহারও স্বব্যবস্থার জন্য এত দিন পর্য্যন্ত কোন দেশে কোন সমাজ বা রাষ্ট্র সমুচিত চেষ্টা করিয়া উঠিতে পারে নাই। অল্প দিন হইল, কয়েকটা দেশে—যেখানে রাষ্ট্রশক্তি অত্যন্ত স্বব্যবস্থ ও বলীয়ান হইয়া উঠিয়াছে—সেইরূপ কয়েকটা দেশে, আপামর সাধারণকে নিম্নশিক্ষালাভে বাধ্য করিবার চেষ্ট হইতেছে ; এবং সেই নজির দেখিয়া আমাদেরও চোখ ফুটিয়াছে, এবং দেশের রাষ্ট্রশক্তি যাহাদের করায়ত্ত, র্তাহাদের দ্বারে নিম্নশিক্ষা বিস্তারের ব্যবহার জন্য দরখাস্ত দাখিল করিতে আমরাও উষ্ঠত হইয়াছি। বলা উচিত, হালের নিম্নশিক্ষা কেবল লেখা পড়া ও খড়ি পাতাতেই আবদ্ধ নাই । এখন উহাকে আর একটু উচ্চ স্তরে তুলিবার চেষ্টা হইয়া থাকে. পাঠশালার ছাত্র লিখিতে পড়িতে শিথিবী মাত্র তাহাকে পুথির সাহায্যে বা শিক্ষকের সাহায্যে খানিকট অতিরিক্ত জ্ঞানদানের চেষ্টা করা হয়। যতটুকু দান করা যায়, জীবনের পথে চলিবার সময় তাহাতে ততটুকুই সাহায্য ঘটবে, এই উদ্দেশ্য। e বাহু জগতের সঙ্গে কারবারের জন্য আপনার শরীটটা সুস্থ ও সবল রাখা অত্যন্ত আবখ্যক ; কাজেই জীবনতত্ত্ব ও জগৎতত্ত্ব সম্বন্ধে দুই দশটা মোট কথা জানিলেই লাভ। সামাজিক জীবকে সমাজের সঙ্গে কারবার করিতে হইবে, অতএব নিজের দেশের সম্বন্ধে,