পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ջ eԵ- রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র সঙ্কীর্ণ প্রদেশমধ্যে আবদ্ধ, তাহাও এই শ্রেণীর মধ্যে আসিবে। আবার অসংখ্য পারিভাষিক শব্দ, যাহা চাষার ব্যবসায়ে, তাতির ব্যবসায়ে, মুদির ও ময়রার ব্যবসায়ে, আদালতে জমিদারি সেরেস্তায়, এইরূপ নানা স্থানে প্রচলিত, তাহা সেই সেই শ্রেণীবিশেষের মধ্যেই, চলিত আছে ; অপর সাধারণের নিকট সেই সকল শব্দরাশি পরিচিতও নহে এবং সুবোধ্যও নহে। কিন্তু সেই শবরাশিও এই শ্রেণীর বাঙ্গালা শব্দের মধ্যেই আসিবে। এই বিশাল শব্দসমূহের সংখ্যানির্দেশ অল্প জনের বা অল্প দিনের কাজ নহে। বহু কালের ও বহু জনের সমবেত চেষ্টায় এই কাৰ্য্য কতক পরিমাণে সম্পন্ন হইতে পারে। কিন্তু এই কাৰ্য্য স্বসম্পন্ন না হওয়া পৰ্য্যন্ত আমাদের বাঙ্গালা ভাষার ধাতু কি, মজ্জা কি, শোণিত কি, অস্থি কি, তাহার নিরূপণ হইবে না। এই শবরাশির মধ্যে কতিপয় শব্দ বিদেশ হইতে বিজাতীয় লোকের সংস্রবে বাঙ্গালায় প্রবেশ লাভ করিয়াছে। তাহাদের সংখ্যা নিতান্ত অল্প না হইলেও সাহিত্যের মধ্যে তুলনায় মুষ্টিমেয়। অবশিষ্ট সমস্ত শব্দ আবার দুই শ্রেণীর। কতক শব্দ সংস্কৃত ভাষা হইতে উৎপন্ন। সংস্কৃত শবাই কালসহকারে রূপান্তরিত হইয়া ঐ সকল শব্দে পরিণত হইয়াছে। সংস্কৃত শব্দই একবারে বিকৃত হইয়াছে অথবা সংস্কৃত শব্দ ক্রমশঃ প্রাচীন প্রাক্লতে ও প্রাচীন প্রাকৃত হইতে আধুনিক প্রাক্লতে বা বাঙ্গালায় পরিণত হইয়াছে। এক শ্রেণীর পণ্ডিত আছেন, তাহদের মতে সংস্কৃত ভাষা, যাহা পাণিনি প্রভৃতি আচার্য্যেরা আলোচনা করিয়াছেন ও যাহা প্রাচীন সংস্কৃত-সাহিত্যে শরীরবদ্ধ হইয়াছে, সেই সংস্কৃত ভাষা কস্মিন কালে জনসমাজে লোকমুখে কথাবাৰ্ত্তার ভাষারূপে প্রচলিত ছিল না। কাজেই তাহাদের মতে সংস্কৃত ভাঙ্গিয় প্রাকৃত বা বাঙ্গালা উৎপন্ন হয় নাই ; প্রাচীন কালে প্রচলিত কোন লৌকিক ভাষা বিকৃত হইয়াই প্রাকৃত বাঙ্গালা প্রভৃতি উৎপন্ন হইয়াছে। সে বিচারে এখানে প্রয়োজন নাই। প্রাচীন কালে একটা প্রাচীন ভাষা ছিল সন্দেহ নাই ; সেই ভাষাই কালসহকারে বিকৃত হইয়া প্রাচীন প্রাক্লতে ও আধুনিক প্রারতে পরিণত হইয়াছে, ইহা অস্বীকার কেহ করিবেন না। আমরা যাহাকে সস্থতমূলক বাঙ্গালা শব্দ বলিয়া নির্দেশ করিতেছি, তাহার অধিকাংশই এইরূপে উৎপন্ন । কিন্তু এই স স্কৃতমূলক খাটি বাঙ্গাল শব্দ ব্যতীত আর এক শ্রেণীর বাঙ্গাল শব্দ আছে, সংস্কৃতের সহিত তাহার কোন সম্পর্কই নির্ণয় করিতে পারা যায় না ; সংস্কৃত কোন শব্দের সহিতই তাহাদের জাতিগত সম্বন্ধ নাই ; এই সকল শব্দকে দেশজ শব বলা হয়। এই শ্রেণীর শবের মূল কি, আমরা জানি না। হয়ত সংস্কৃত শবই এত বিকার লাভ করিয়াছে যে, এখন আর তাহাদের চেনা কঠিন। পরিষদের ভূতপূর্ব সভাপতি শ্রযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় এইরূপ দেশজস্বরূপে গৃহীত বহু শব্দের সংস্কৃত মূল নির্ণয়ের চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিথ তথাপি এমন শব্দ অনেক আছে, যাহা প্রকৃতই দেশজ অর্থাৎ যাহা সংস্কৃতের সহিত সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন। দৃষ্ঠাস্তের অভাব হইবে না। হইতে পারে যে, বাঙ্গালা দেশে অনাৰ্য্য, মোগল, দ্রাবিড় বা অন্য কোন বংশের আদিম নিবাসী যাহারা ছিল, তাহাদেরই ভাষা হইতে এই সকল শব্দ গৃহীত হইয়াছিল। আৰ্য্যাধিকারের সহিত তাহাদের অস্তিত্ব আৰ্য্যগণের সহিত মিশিয়া গিয়াছে। হয়ত