পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* > * রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রাচীন বাঙ্গালা সাহিত্যের ধ্বংসাবশেষ, যাহা এ-কালে সম্মার্জনীসংস্কৃত হইয়া পরিমাজ্জিত বা অৰ্দ্ধমঞ্জিত ও অমাজ্জিত অবস্থায় বৰ্ত্তমান আছে, তাহাই তাহার সাক্ষী। সে দিন পরিষং সভায় কোন সদস্য বলিয়াছিলেন, প্রাচীন গ্রন্থকারেরা ইতর সাধারণের জন্য পুস্তক লিখিতেন, পণ্ডিত জনের জন্য লিখিতেন না সেই জন্যই উহার অসাধু শব্দের প্রশ্রয় দিয়াছেন । কাবণটা খুবই সঙ্গত ; বস্তুতই চণ্ডীদাস ও কৃত্তিবাস ও রামপ্রসাদ সাধারণের জন্যই সাধারণের বোধ্য ভাষাতেই রচন। করিয়া,ছলেন ; এমন কি, ভাবতচন্দ্রেরং সেইরূপ অসাধু প্রবৃত্তি যে একবারেই ছিল না, এমন বলা যায় না । কারণ যাহাই হউক, প্রাচীন সাহিত্যে খাটি বাঙ্গাল শব্দেব প্রচুব প্রয়োগ ছিল, এ-কালের অপেক্ষ বহুলতর প্রয়োগ ছিল। সেই প্রাচীন সাহিত্যেব ভাষা বর্তমানে অতুকরণীয় না হইতেও পারে ; কিন্তু সেই প্রাচীন সাহিত্যকে আমরা বাঙ্গালা সাহিত্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছি । সেই অসাধুভাষাবহুল সাহিত্যের লোপ হউক, এ ইচ্ছা বোধ হয় কেহই করেন না । বরং তাহাব উজাব বিধানের জন্যই আজকাল একটা উংকট আগ্রহ দেখা যাইতেছে। সাহিত্য-পরিষং লুপ্ত সাহিত্যের উদ্ধার প্রধান কৰ্ত্তব্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন। আরও একটু স্পষ্ট বলা ভাল । বাঙ্গালার প্রাচীন লেখকেরা যে পণ্ডিতসেবিত সাধুভাষা ব্যবহার না করিয়া ইতরজনসেবিত ইতরঞ্জনবোধ্য অসাধু ভাষার প্রশ্ৰয় দিয়া গিয়াছেন, সে জন্য আমরা যতই পরিতপ্ত হই না কেন, তাহাদের রচনা বাঙ্গালা সাহিত্য হইতে নির্বাসিত করিতে কেহই চাহিবেন না। আধুনিক সাধুশববিহুল সাহিত্যের পনর আনা লুপ্ত হইলেও আমরা সবিশেষ দুঃখিত হইব না ; কিন্তু যদি কেহ চণ্ডীদাসের অথবা রামপ্রসাদের গানের সাহিত্য হইতে নিৰ্ব্বাসন ব্যবস্থা করিতে চাহেন, আমরা তাহাব জন্য তুষানলের ব্যবস্থা করব। ফলে আধুনিক ও প্রাচীন বাঙ্গাল সাহিত্যে খাট সংস্কৃত ও খাটি বাঙ্গালা যত শব্দের ব্যবহার আছে, সকলই বাঙ্গাল। । সম্পূর্ণ কোষগ্রন্থ সঙ্কলনকালে ইহাদের কাহারও প্রত পক্ষপাত প্রদর্শন চলিবে না । কেহ হয়ত বলিবেন, কোষগ্রন্থের উদ্বেগু ত অৰ্থ বুঝান। দুৰ্ব্বোধ্য শবাই অভিধানে স্থান পাইবে। স্বপোধ্য শব্দ, সকলেই যাহার অর্থ বুঝে, অর্থাৎ অধিকাংশ খাটি বাঙ্গালী শব্দ অভিধানে প্রবেশ করাইয়া অভিধানের কলেবর অকারণে ফাপাইবার প্রয়োজন কি ? এ প্রশ্নেরও বোধকরি উত্তর অবিশ্বক। প্রথমতঃ সকল শব্দ সকলের নিকট স্ববোধ্য নহে ; আপনাব নিকট যাহা স্ববোধ্য, আমি তাহ হয়ত বুঝি না। এ স্থলে সকল শব্দের সমাবেশই নিরাপং ; সঙ্কলনকৰ্ত্তার বিবেচনার উপর ভার দিলে অনেক শব্দ এ ডাইয়া যাইতে পারে। দ্বিতীয়তঃ, খাটি সংস্কৃত শব্দের সঙ্কলনকালে এই আপত্তি উঠ না ; তখন সরল ও দুরূহ সকল শব্দই নিধিত্বশেষে গৃহীত হয়। সংস্কৃত কোষকারোও সরল সৰ্ব্বজনবোধ্য শব্দগুলিকে কোষগ্রন্থে স্থান দিতে আপত্তি কবেন নাই। তৃতীয়তঃ, কেবল শব্দের তাৎপৰ্য্য &বাঝানই অভিধানের উদ্বেগু নহে । অভিধানে অর্থবিচারের সহিত বুৎপত্তি