পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

338 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র সকল শবের তাৎপৰ্য্য লইয়া, ব্যাখ্যা ও ব্যুৎপত্তি লইয়া আলোচনা করিয়াছেন ও অপরকে সেইরূপ আলোচনার জন্য আহবান করিয়াছেন মাত্র। ঐ সকল শবের সকলগুলিই থাটি বাঙ্গালা শব্দ ; কতক সংস্কৃতমূলক, কতক বা দেশজ । কতকগুলি সাহিত্যে স্থান পাইয়াছে, কতক হয়ত সাহিত্যে এ পর্য্যস্ত স্থান পায় নাই ; কতকগুলি হয়ত প্রকৃতই গ্রাম্য অপশব্দ, উহাদের সাহিত্যে স্থান দেওয়া উচিতও নহে। কিন্তু তিনি তাহাদের অর্থ বিচার করিয়াছেন : তাহারা কোথা হইতে আসিল, কিরূপে সিদ্ধ বা নিম্পন্ন হইল, তাহার বিচারে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। কিন্তু কোথাও তিনি এ কথা বলেন নাই যে, তোমরা সাহিত্যের সাধু ভাষায় এই সকল শব্দের প্রয়োগ করিও। তাহার সকল প্রবন্ধ অনুসন্ধান করিয়া এইরূপ দুরভিসন্ধির স্পষ্ট বা অস্পষ্ট চিহ্ন আমি কোথাও পাই নাই। যদি কেহ পাইয়া থাকেন, দেখাইয়া দিলে উপকৃত হইব । স্বীকার্য্য যে, রবীন্দ্রনাথ পরিষৎ-পত্রিকাতে খাটি বাঙ্গাল শব্দেরই ৰ্যাকরণবিষয়ক আলোচনা করিয়াছেন । ইহাও স্বীকার্য যে, সেই সকল শব্দের মধ্যে অনেক অসাধু শব্দ রহিয়াছে, অনেক গ্রাম্য শব্দ রহিয়াছে, যাহা সাধু সাহিত্যে আদৃত হয় না ও আদৃত হইবে না। বস্তুতই তন্মধ্যে অনেক শব্দ আছে, যাহা প্রকৃতই slang, অপভাষা ও গ্রাম্য ভাষা । এই অপভাষার আলোচনাই অনেকের প্রীতিকর হয় নাই । তাহারা হয়ত মনে ভাবিয়াছেন, এই সকল শব্দের প্রতি লেখকের একটা আস্তরিক আকর্ষণ আছে ও অনুরাগ আছে ; তিনি ব্যাকরণ আলোচনা উপলক্ষ্য করিয়া ঐ সকল অপশব্দ সাহিত্যে চালাইতে চাহেন, এবং যদিও সম্প্রতি উহাদের ব্যবহারে সাহসী হন নাই, ভবিষ্যতে কোন দিন ব্যবহার করিয়া ফেলিবেন । অর্থাৎ তিনি যখন মাছের তেলের সম্বন্ধে প্রবন্ধ লিখিতেছেন, তখন কোন দিন মাছের তেল মাখিয়াই ফেলিবেন ; যখন শেয়ালের জীবতত্ত্ব আলোচনা করিতেছেন, তখন কোন দিন শেয়াল পুষিয়া দরজায় রাখিবেন। লেখকের স্পষ্ট ও তীব্র ভাষা সত্ত্বেও যদি কাহারও এইরূপ আশঙ্কা থাকে, সেই আশঙ্কা দূর করিবার উপায় নাই। পরিষৎ-সভায় তিনি যে প্রবন্ধ পড়িয়াছিলেন, যাহা তৎপরে "বঙ্গদর্শনে’ বাহির হইয়াছে, এবং পরিষদে বাদপ্রতিবাদের উত্তরে তিনি অতি স্পষ্ট ভাষায় আপনার প্রকৃত উদেখা যেরূপে জ্ঞাপন করিয়াছিলেন, তাহার পর যে ওরূপ সন্দেহ কিরূপে থাকিতে পারে, তাহা অামার বুদ্ধিতে কুলায় না। অথচ দেখিতেছি, অনেকেরই সন্দেহ যায় নাই। এখনও অনেকেই অত্যন্ত আগ্রহের সহিত তর্ক করিতেছেন, সাহিত্যের ভাষায় গ্রাম্য শব্দের সমাবেশ বাঞ্ছনীয় নহে; যেন রবীন্দ্রনাথ গ্রাম্য শবের ব্যবহারেরই সমর্থন করিয়াছেন। এ স্থলে কোন উপায় দেখি না । রবীন্দ্রনাথ বিতণ্ডায় নামিয়া অতি তীক্ষ অস্ত্র প্রয়োগ করিয়াছেন ; তথাপি তাহাদের যদি অনুভূতির সঞ্চার না হইয়া থাকে, তাহা হইলে বস্তুতই উপায় নাই। ত্বগ ভেদাং শোণিতস্রাবাং মাংসস্ত ক্রথনাদপি, আত্মনে যে ন জানন্তি, র্তাহাদের প্রতি বাক্যপ্রয়োগ নিরর্থক। সাহিত্যে অপভাষার ব্যবহার করিব কিনা, এ কথাটাই বর্তমান ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। কেন না, কেহ তাহা বলে নাই। কিন্তু অপভাষার ব্যাকরণ