পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b- রামেজয়ন্দর রচনাসমগ্র সমাজের সম্বন্ধে, রাষ্ট্রের সম্বন্ধে, যাহা কিছু জানা যায়, তাহাই লাভ ; আর নিজের দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের বাহিরে যে অন্য দেশ, অন্য সমাজ ও অন্য রাষ্ট্র বর্তমান আছে, তাহার সম্বন্ধেও যতটা স্পষ্ট ধারণা থাকে, তাহাও লাভ । সেই সঙ্গে সমাজের সহিত মানুষের যে দেনা-পাওনা আছে, অর্থাং কৰ্ম্মশালায় প্রবেশ করিলে সমাজ প্রত্যেকের উপর যতটুকু দাবি রাখিবে, এবং সমাজের নিকট প্রত্যেকে যেটুকু প্রত্যাশা করিবে, সেটুকু কিছু পূৰ্ব্ব হইতে জানিয়া রাখিলেও মন্দ হয় না। লাভ আছে বলিয়াই আজকাল নিম্নশিক্ষার মধ্যে ভূগোল, ইতিহাস, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও শরীরবিজ্ঞান সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ উপদেশ দিবার চেষ্ট হইতেছে ; ইহা উত্তম কথা । আধুনিক নিম্নশিক্ষার প্রণালী এইরূপে নানা শাস্থে কিঞ্চিৎ জ্ঞানদানের চেষ্টা করে ; পরস্তু তার চেয়েও একটু অধিক কাজ করিতে চায়। উপযুক্ত ব্যবস্থার দ্বারা দেশের বালক-বালিকাকে কিছু না কিছু জ্ঞান দেওয়া যাইতে পারে ; কিন্তু লোকাভাব, ধনাভাব, সময়াভাব প্রভৃতি নানা অভাবে এইরূপে উপদিষ্ট জ্ঞানের মাত্রা বড় অধিক হয় না। এমন কি, বালকের যে বিদ্যাটুকু উপার্জন করে, ব্যবহারকালে তাহা প্রয়োগ করিতে পারে না। তাই আজকাল বুদ্ধিমান লোকে বলিতে আরম্ভ করিয়াছেন যে, জ্ঞানদানের চেষ্টা অপেক্ষ জ্ঞানাহরণে ক্ষমত সঞ্চারের চেষ্টা করিলে ভাল হয়। ফলে চাষার ছেলে,—সম্ভবতঃ ভবিষ্যতে যে রাজমন্ত্রী হইবার কোনও অবসর পাইবে না ব। যে কালিদাসের মত কবি বা নিউটনের মত বৈজ্ঞানিক হইবার সুযোগ পাইবে না— যাহাকে লাঙ্গল ধরিয়৷ জমি হইতে ফসল তুলিতে হইবে,—তাহাকে দশটা হইতে পাচটা পর্যন্ত ইস্কুলে পুরিয়া সমগুণশ্রেট ও সস্তৃয় সমুখান, যবক্ষার জান ও রোমরস, ইব্রাহিম লোদি ও জুসপ ফাৰ্ণাণ্ডেজের বিবরণ মুখস্থ করাইবার অদ্ভুত চেষ্টা সম্পূর্ণ নিরর্থক ও ভয়াবহ। ইহাতে তাহার কোন লাভ হয় না ; প্রত্যুত ক্লোমরসের আলোচনায় পিত্তরসে বিকার জন্মে, এবং সভূয় সমুখান ও ইব্রাহিম লোদির বিভীষিকাজাত দুঃস্বপ্নে অনিদ্রারোগ উপস্থিত হয়। শিক্ষার্থী বালকের জ্ঞানবৃদ্ধি শক্তিবৃদ্ধির পরিবত্তে এইরূপ শিক্ষার প্রণালী তাহার নৈসৰ্গিক শক্তিকে সঙ্কুচিত করে, ও জীবনের পথে দক্ষতার পরিবত্তে। শোচনীয় অক্ষমতা আনিয়া দেয়। যদি কোন কৃষকসস্তানে বিস্মার্কের বা কালিদাসের বা নিউটনের অঙ্কুর গজাইবার সম্ভাবনা থাকে, সেই অঙ্কুরকে টিপিয়া মারিবার এমন উৎকৃষ্ট উপায় আর নাই। এইরূপ শিক্ষার বিস্তার অপেক্ষা ইহার কবল হইতে শিক্ষার্থীকে রক্ষণ করাই সামাজিকের পক্ষে কৰ্ত্তব্য বলিয়া মনে করি । প্রকৃতি ঠাকুরাণী, যিনি মানবশিশুকে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় সংসারের রণক্ষেত্রে প্রেরণ করিয়াছেন, মানবসমাজ সেই শিশুর শক্তিবৃদ্ধি ও সামর্থ্য লাভ পক্ষে কতটা ব্যবস্থা করিবে না করিবে, সে বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকেন নাই। এ বিষয়ে মানবশিশুর প্রতি র্তাহার মমত্বের পরিচয় নানারূপে পাওয়া যায়। মানবশিশু ভূমিষ্ঠ হইয়াই বাহ জগতের সহিত ঘনিষ্ঠ পরিচয়লাভে স্বভাবের প্রেরণাতেই প্রবৃত্ত হয় ; এবং প্রকাগু বৈজ্ঞানিকের মত পর্য্যবেক্ষণ ও পরীক্ষাকার্য্যে—observation ও experiment কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়। দিবানিশি সে ইচ্ছাপূর্বক ও আনন্দের সহিত এই কৰ্ম্মে ব্যাপৃত থাকে ; ইহার জন্য প্রলোভন বা শাসন কিছুমাত্র আবশ্বক হয় না । মাষ্টারের বেতেরও দরকার হয় না ; রাঙা ফিতায় বাধা প্রাইজের বহিও দিতে হয় না। তাহার এই জ্ঞান-তৃষ্ণার