পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છે.૨૨ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র ‘সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা’য় সেই সেই নিয়মের আবিষ্কারের জন্য সুধীমণ্ডলীকে আহবান করা হইয়াছে মাত্র। শ্ৰীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় সাহিত্য-পরিষৎ-সভার মুখপাত্র স্বরূপে স্বধী জনকে এই কাৰ্য্যে অগ্রসর হইবার জন্ত আবেদন করিয়াছেন মাত্র। বালকগণের জন্য বাঙ্গালা ব্যাকরণ-রচনা তাহাদের উদ্দেশ্য নহে। বাঙ্গালা ভাষার ব্যাকরণ এখনও গঠিত হয় নাই। বাঙ্গালা ভাষার নিয়মসকল অদ্যাপি অনাবিষ্কৃত । এই সকল নিয়ম যখন আবিষ্কৃত হইবে, তখন বাঙ্গালায় পাণিনি নিজ প্রতিভাদ্বারা পূর্বাচার্য্যগণের আবিষ্কার-সকলের সমন্বয় করিয়| বাঙ্গালা ভাষার ব্যাকরণ শাস্ত্র সম্পূর্ণ করিবেন। তার পরে সেই ব্যাকরণ বালকদিগের জন্য প্রচারিত হইবে । সেই পাণিনির জন্মের এখনও অনেক বিলম্ব। এখনও তাহার জন্মের সময় হয় নাই । আমাদিগকে র্তাহার আবির্ভাবের জন্য আয়োজন করিতে হইবে । আমরা ক্ষুদ্র শক্তি প্রয়োগে বহু দিনে যদি সোপান গডিয়া রাখিতে পারি, তাহা হইলে তিনি যখন আবির্ভূত হইবেন, তখন নেই সোপানের দ্বারা উচ্চে আরোহণ করিবেন। অথবা তিনি যে মন্দির গড়িবেন, আমাদিগকে তাহার জন্য পড় খুঁটি চুন কাঠ ইষ্টক প্রস্তর সংগ্ৰহ করিয়া রাথিতে হইবে। যদি কাহারও সাধ্য থাকে, আটালিকার নকৃশাটাও তৈয়ার করিয়া রাথিবেন , কাহারও সাধ্য থাকে, দুই-একটা ভিত্তিপত্তন করিয়া রাখিবেন মাত্র | মান্যবর ইন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় মহাশয় যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা এই অর্থে যথার্থ } ব্যাকরণ শাস্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণের এখনও সময় হয় নাই, কিন্তু উপাদান-সংগ্রহের সময় হইয়াছে। সাহিত্য-পরিষৎ এখনই সম্পূর্ণ ব্যাকরণ রচনা করিতে পারিবেন, এরূপ কেহ আশা করেন না ; সাহিত্য-পরিষদের কোন বর্তমান বা ভাবী সদস্য যদি নকৃশাটা প্রস্তুত করিতে পারেন বা আটালিকার কোন ভগ্নাংশ গডিয়া যাইতে পারেন, তাহা হইলেই তাহার কৃতিত্ব ধন্য হইবে। উপাদান-সংগ্রহ সাহিত্য-পরিষদের সাধ্য। কেন না, উপাদান-সংগ্ৰহ মজুরের কাজ ; ইহাতে কেবল পরিশ্রম আবশ্যক। সংগৃহীত উপাদানগুলি যথাস্থানে সাজাইয়া গোছাইয়া রাখিতে যে বুদ্ধিটুকু দরকার, তাহ থাকিলেই যথেষ্ট । ভবিষ্যতে যিনি ব্যাকরণ-রচনা-কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত হইবেন, তাহাকে যেন মশলা খুজিয়া লইতেই দিনক্ষেপ না করিতে হয়। রবীন্দ্রনাথ সেই মশলা সংগ্রহের জন্য সকলকে আহবান করিয়াছেন, এবং এই মজুরের কাজে যদি কেহ অপমান বোধ করেন, এই কৰ্ম্মকে হেয় কাৰ্য্য জ্ঞান করেন, সেই আশঙ্কায় স্বয়ং মজুরের কাজ গ্রহণ করিয়া অন্যের অনুকরণীয় হইয়াছেন মাত্র। তজ্জন্য তিনি ধন্য ; তজ্জন্য তিনি কৃতজ্ঞতার ভাজন ; তজ্জন্য সাহিত্য-সমাজ তাহার নিকট ঋণবদ্ধ । তিনি পাণিনি-স্থলাভিষিক্ত হইবার স্পৰ্দ্ধ করেন নাই ; তবে ভবিষ্যতের পাণিনি যে অট্টালিকা নিৰ্ম্মাণ করিবেন, তাহার কোন ক্ষুদ্র অংশের নকৃশার আঁচড় ফেলিবার চেষ্টা করিয়া যদি সফল হইয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহাকে তাহার প্রাপ্য পুরস্কার না দিলে চলিবে কেন ? সাহিত্য-পরিষদের সহকারী সভাপতিদ্বয়ের উদেশ্ব আমি এইরূপ বুঝিয়াছি ; এবং পরিষদের সম্পাদক-স্বরূপে উপাদান-সংগ্রহের জন্য পণ্ডিতগণকে আহবান করিয়াছি।