পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শৰাকথা ঃ বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ১২৭ থাকিলে ভাষার সৌষ্ঠবাৰ্থ বসন ভূষণ প্রভৃতির একটু হানি হইত, কিন্তু তাহার অস্থিমজ্জা মাংসপেশী সবল ও সমর্থ হইত। তবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কর্ষণ করিতে গিয়া কৃষিষন্ত্রের সৌষ্ঠব অপেক্ষা কাৰ্য্যকারিতার উপর অধিক দৃষ্টি রাখিতে হয়। যেখানে মাটি খুব দড়, সেখানে এমন অস্ত্র প্রয়োগ করিতে হইবে, যাহাতে সেই শক্ত মাটিতে চাষ চলে। যখন শুষ্ক নিরেট জ্ঞানের আলোচনা লক্ষ্য করিতে হইবে, তখন ভাষার পূর্ণতার দিকেই বেশী দৃষ্টি রাখিতে হয়। বিজ্ঞানের পরিভাষা গঠনের সময় এই কয়টি কথা মনে রাখিতে হইবে। যে শব্দটি প্রয়োগ করিবে, তাহার যেন একটি স্বনিদিষ্ট, বাধাবাধি, সীমাবদ্ধ, স্পষ্ট তাৎপৰ্য্য থাকে। প্রত্যেক শব্দ একটি নিদিষ্ট অর্থে ব্যবহার করিবে ; সেই শব্দটি আর দ্বিতীয় অর্থে প্রয়োগ করিবে না, এবং সেই অর্থে দ্বিতীয় শব্দের প্রয়োগ করবে না। এই হইল বৈজ্ঞানিক পরিভাষার মূল স্বত্র। এই মূল স্বত্রে দৃষ্টি রাখিয়া ভাষা প্রণয়ন করিলে বৈজ্ঞানিক পরিভাষার যাহা মুখ্য উদ্দেশ্য তাহা স্বচারুরূপে সম্পাদিত হইবে। জ্ঞানবৃদ্ধিসহকারে বিজ্ঞানের ভাষার পরিধি ও প্রসার বিস্তৃত হয়। ভাষা নুতন ভাবে গঠিত হয়। নূতন শব্দ সঙ্কলন করিতে হয় ; নূতন শব্দের প্রণয়ন করিতে হয়। উল্লিখিত কয়েকটি স্বত্র মনে রাখিয়া পরিভাষা প্রণয়নে প্রবৃত্ত না হইলে উদেশ্ব সাধনে ব্যাঘাত ঘটে। সুতবাং র্যাহারা জ্ঞান প্রচারে ব্রতী, তত্ত,প্রচার ও সত্যপ্রচার র্যাহাদের ব্যবসায়, তাহাদিগকে বিষয়ের গৌরববোধে সাবধান হইয়া চলিতে হইবে । পাশ্চাত্য জাতির সহিত আমাদের সম্পর্ক ঘটিয়াছে। পাশ্চাত্য জাতির বহুশ্রমহৃত জ্ঞানভাণ্ডার আমাদের সম্মুখে প্রসারিত হইয়াছে। আমরা ইচ্ছা করিলে অপরের সমাপ্ত এই অতুল সম্পত্তি আমাদের নিজস্ব করিয়া লইতে পারি। ইহাতে ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত বা জাতিগত বিরোধ বা বৈরিতা নাই। এক্ষণে যদি আমরা অলস হইয়া এই ঐশ্বৰ্য্য আত্মসাৎ করিতে পরাঙ মুখ হই, তাহাতে যে ক্ষতি, যে লজ্জা, যে পাপ হইবে, আমাদিগকেই তাহার ফলভাগী হইতে হইতে হইবে। আমরা যদি আমাদের গৌরব রাখিতে চাই, তবে আমাদের প্রাচীনকালে শিষ্য যেরূপ বিনয়ের সহিত অবনতশিরে গুরুসমীপে উপস্থিত হইত, সেইরূপ বিনয়ের সহিত শিক্ষার্থিরূপে পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের নিৰ্ম্মিত বিজ্ঞানমন্দিরের স্বারস্থ হইতে হইবে। কিন্তু এই জ্ঞানার্জনের পথে বিদেশীয় ভাষা প্রধান অন্তরায়স্বরূপে অবস্থিত রহিয়াছে। ফরাসী হয়ত আশা করেন, তাহার ভাষা কালে বিশ্বজগৎকর্তৃক গৃহীত হইবে ; ইংরেজ হয়ত আশা করেন, তাহার ভাষা বিশ্বভাষা হইয়া দাড়াইবে ; কিন্তু সম্প্রতি সে আশা স্বদূরপরাহত। শুনা যায়, অনেকে সাৰ্ব্বভৌমিক ভাষা সৃষ্টির জন্য প্রয়াস পাইতেছেন ; কিন্তু এখনও সেদিন আসিতে বিলম্ব আছে। সুতরাং পাশ্চাত্য জ্ঞান অর্জন করিতে গেলে বিজাতীয় অনাত্মীয় ভাষার সাহায্য গ্রহণ না করিলে চলিবে না । পাশ্চাত্য জাতির উপাজিত জ্ঞানরাশি আত্মসাৎ করিবার জন্য আমাদিগকে পাশ্চাত্য