পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3tro রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র খাটি দেশীয় পরিচ্ছদ হইতেই তাহার উত্তর মিলিতে পারে। চটজুতার প্রতি র্তাহার একটা আত্যস্তিক আসক্তি ছিল বলিয়াই তিনি যে চটজুতা ভিন্ন অন্য জুতা পারে দিতেন না, এমন নহে। আমরা যে স্বদেশের প্রাচীন চটি ত্যাগ করিয়া বুট ধরিয়াছি, ঠিক তাহ দেখিয়াই যেন বিদ্যাসাগরের চটর প্রতি অনুরাগ বাড়িয়া গিয়াছিল। বাস্তবিকই এই চটিজুতাকে উপলক্ষ করিয়া মাত্র একটা অভিমান, একটা দৰ্প ৰ্তাহার অভ্যস্তর হইতে প্রকাশ পাইত। যে অভিমান ও দপের অনুরোধে নিতান্ত অনাবশুক হইলেও মুটের মাথা হইতে বোঝা কাডিয়া নিজের মাথায় তুলিয়া পথ চলিতেন, এই দৰ্প ঠিক সৈই দৰ্প । আচারবিষয়ে অন্যের অনুকরণ দুবের কথা বিদ্যাসাগবের চরিত্রে এমন দুই একটা পদার্থ ছিল, যাহাতে পাশ্চাত্য মানব হইতে র্তাহাকে পৃথকৃ করিয়া রাখিয়াছিল। এই প্রকৃতিগত পার্থক্য দেখিয়াই আমরা বিদ্যাসাগরের অসাধারণত্ব অনুভব করি । পাশ্চাত্য দেশে ফিলানথুপি নামে একটা পদার্থ আছে, তাহার বাঙ্গালা নাম মানবপ্রীতি। এই মানবপ্রীতি কোন সঙ্কীর্ণ সমাজের মধ্যে আবদ্ধ নহে; সমস্ত মানবসমাজ এই হিতৈষণার বিষয়ীভূত এবং ইহাও বলা যাইতে পারে যে, এই হিতৈষণা পলিটিকাল ইকনমি শাস্থেরও সম্পূর্ণ বিরোধী নহে। এই লোকহিতৈষণ ইউরোপ হইতে বাহির হইয়া দিগ দিগন্তে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, এবং ইহার প্রভাবে যে কত অলৌকিক ঘটনার, কত অসাধারণ স্বার্থত্যাগের উদাহরণ মিলিয়াছে, তাহার সংখ্যা নাই। এই লোকহিতৈষণার প্রকৃতির মধ্যে এমন একটা কিছু আছে, প্রাচ্য দেশে তাহার তুলনা মিলে না। আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিতর এমন একটা স্মৃত্তি রহিয়াছে, যেন তাহা আপনাকে সামলাইতে না পারিয়! আপনা হইতে উছলিয়া বাহির হয়, এবং অন্ত কোন মূৰ্ত্তি ধারণের স্ববিধা না পাইলে এই মানবপ্রীতির ও বিশ্বহিতৈষণার আরুতি পরিগ্রহ করে। যে স্ফুক্তির বশে ইংরাজের ছেলে সাতার দিয়া নায়াগারা পার হইতে গিয়া জীবনকে অবলীলাক্রমে বিসর্জন দেয়, এই হিতৈষণাও যেন সেই অমানুষিক স্কৃত্তি হইতেই উদ্ভূত। এই পরার্থপরতার মূলে যেন ব্যক্তিগত স্মৃত্তি বৰ্ত্তমান রহিয়াছে। আপনার ব্যক্তিত্ব যেন নিজের ভিতর স্থান না পাইয়া অপরের উপর সবেগে বিক্ষিপ্ত হইতেছে। প্রাণের প্রবাহ যেন আপনার বেগ আপনি সহিতে না পারিয়া পরের দিকে ধাবিত হইতেছে। পরের উপকার যেন ইহার মূখ্য উদ্দেশু নহে ; আপনার মিজত্বের অভিব্যক্তিই যেন তাহার প্রণোদক । বিদ্যাসাগরকে এইরূপ ফিলান্‌থ পিষ্ট বলা চলে না। বিদ্যাসাগরের লোকহিতৈষিত সম্পূর্ণ অন্য ধরণের। বিদ্যাসাগরেব লোকহিতৈষিত সম্পূর্ণ প্রাচ্য ব্যাপার। ইহা কোনরূপ নীতিশাস্থের, ধর্মশাস্ত্রের, অর্থশাস্ত্রের, বা সমাজশাস্ত্রের অপেক্ষা করিত না । এমন কি, তিনি হিতৈষণাবেশে যে সকল কাজ করিয়াছেন, তাহার অনেকই আধুনিক সমাজতত্ত্ব মঞ্জুর করিবে না। কোন স্থানে দুঃখ দেখিলেই যেমন করিয়াই হউক তাহার প্রতীকার করিতে হইবে, একালের সমাজতত্ত্ব সৰ্ব্বদা তাহা স্বীকার করিতে চাহে না । কিন্তু দুঃখের অস্তিত্ব দেখিলেই বিদ্যাসাগর তাহার কারণাঙ্গুসন্ধানের অবসর পাইতেন না। লোকট অভাবে পড়িয়াছে জানিবা মাত্রই বিদ্যাসাগর সেই অভাবমোচন না করিয়া