পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9*१ রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র হইবার তাহার অবসর ছিল না। এমন দিন কধে আসিবে, যে দিন মন্ত্রক্সসমাজ সাম্প্রদায়িক কোলাহলের হস্ত হইতে নিষ্কৃতি পাইবে ; যে দিন আপামর সাধারণ বিতণ্ড ত্যাগ করিয়া বিদ্যাসাগরের অতুবৰ্ত্তী হইয়া মন্তয্যের প্রতি কর্তব্যনির্ণয়ে মন দিতে অবকাশ লাভ করিবে । বিদ্যাসাগর এক জন সমাজসংস্কারক ছিলেন। সমাজসংস্কারের কথাটা উত্থাপন করিয়া অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করিতে যদি নিতান্ত আতঙ্ক জন্মে , তাহাতে শ্রোতৃবর্গের নিকট মার্জনার ভিখারী হইতেছি। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্রের উপাসনায় প্রবৃত্ত হইয়া কথাট একবারে না তুলিলেও চলে না। তিনি নিজেই বলিয়াছেন, বিধবা বিবাহে পথ-প্রদর্শন তাহার জীবনের সর্বপ্রধান সৎকৰ্ম্ম । বস্তুতই এই বিধবা বিবাহ ব্যাপারে আমরা ঈশ্বরচন্দ্রের সমগ্র মূৰ্ত্তিটা দেখিতে পাই। কোমলতা ও কঠোরতা উভয় গুণের আধাররূপে তিনি লোকসমক্ষে প্রতীয়মান হয়েন। প্রকৃতির নিষ্ঠুর হস্তে মানবনির্যাতন তাহার কোমল প্রাণকে দিবানিশি ব্যথিত রাখিত ; দুৰ্ব্বল মল্পর্ঘ্যের প্রতি নিষ্করুণ প্রকৃতির অত্যাচার তাহার হৃদয়ের মৰ্ম্মস্থলে ব্যথ। দিত ; তাহার উপর মকুন্তাবিহিত, সমাজবিহিত অত্যাচার তাহার পক্ষে নিতান্তই অসহ্য হইয়াছিল। বিধাতার কৃপায় মানুষের দুঃখের ত আর অভাব নাই, তবে কেন মাহুষ আবার সাধ করিয়া আপন দুঃখের বোঝার ভার চাপায়। ইহা তিনি বুঝিতেন না , এবং ইহা তিনি সহিতেনও না। বালবিধবার দুঃখদর্শনে তাহার হৃদয় বিগলিত হইল ; এবং সেই বিগলিত হৃদয়ের প্রস্রবণ হইতে করুণামন্দাকিনীর ধারা বহিল। স্করনদী ধখন ভূমিপৃষ্ঠে অবতরণ করে, তখন কার সাধ্য যে, সে প্রবাহ রোধ করে । বিদ্যাসাগরের করুণার প্রবাহ যখন ছুটিয়াছিল, তখন কাহারও সাধ্য হয় নাই যে, সেই গতির পথে দাড়াইতে পারে। দেশাচারের দারুণ বাধ তাহ রোধ করিতে পারে নাই । সমাজের ক্রকুটভঙ্গিতে তাহার স্রোত বিপরীত মুখে ফিরে নাই। এইখানে বিদ্যাসাগরের কঠোরতার পরিচয় । সরল, উন্নত, জীবন্ত মনুষ্যত্ব লইয়া তিনি শেষ পর্য্যন্ত স্থিরভাবে দণ্ডায়মান ছিলেন , কাহারও সাধ্য হয় নাই ষে, সেই মেরুদণ্ড নমিত করে। কিন্তু এই সমাজসংস্কার ব্যাপারেও বিদ্যাসাগরের একটু অসাধারণত্ব দেখা যায়। প্রথমতঃ বিধবাবিবাহে হস্তক্ষেপের পূৰ্ব্বে তিনি পিতা-মাতার অনুমতি চাহিয়াছিলেন। দ্বিতীয়তঃ, বিধবাবিবাহের শাস্ত্রীয়তা প্রতিপাদনে তিনি প্রয়াসী হইয়াছিলেন। এই দুইটাই আমাদের পক্ষে চিন্তনীয় বিষয় । সম্প্রতি আমরা নীতিশাস্ত্র হইতে মরাল কারেজ’ নামক একটা সামগ্রী প্রাপ্ত হইয়াছি * কৰ্ত্তবাবুদ্ধির প্ররোচনায় স্বার্থবিসর্জন ব্যাপারটা যে কোন দেশের একচেটিয়া নহে, তাহা সদা সৰ্ব্বদা আমরা ভুলিয়া যাই। আমাদের প্রাচীন ভারতভূমিতেও এই কৰ্ত্তব্যের জন্য স্বার্থ-বিসর্জনের উদাহরণ ভুরি-পরিমাণে পাওয়া যাইতে পারে। তৰে ছুঃখের বিষয় ষে, অন্যত্র যে সব ঘটনায় ঢঙ্কানিনাদ হইয়া থাকে, এ দেশে তাহার

  • Moral courage.

}