পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ు ఫి 8 রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র তুলনা করা এবং সমাজের অন্তর্গত দেশাচারকে জীবশরীরোগত ব্যাধিজনক বিস্ফোটকের সহিত তুলনা করা একটা প্রথা হইয়া দাড়াইয়াছে। জীববিদ্যার অন্তর্গত আধুনিক নিদানশাস্ত্রে বিস্ফোটকের উৎপত্তির যে কারণ নির্দেশ করে, তাহাতে এই তুলন। সঙ্গত বলিয়া বোধ হয় না। বাহির হইতে রোগের বীজ শরীরমধ্যে লব্ধপ্রবেশ হইয়া বিস্ফোটকের স্বষ্টি করে । কিন্তু সমাজ-শরীরের অস্তভূক্ত পুরুষপরম্পরাগত প্রথাগুলিকে সকল সময়ে বাহির হইতে, আগত বলিতে পারা যায় না। সমাজ-শরীরের বয়ঃক্রমানুসারে তাহারা জৈবিক নিয়ম মতেই আপন হইতে উৎপত্তি, বৃদ্ধি ও লয় পায় । সমাজ-শরীরকেও ঠিক জীবশরীরের মত দুরন্ত প্রকৃতির মধ্যে অবস্থান করিয়া সহস্র প্রতিকূল শক্তি হইতে আত্মরক্ষা করিয়া চলিতে হয় ; এবং সেই আত্মরক্ষার প্রয়াসফলে তাহাতে বিবিধ অঙ্গ ও বিবিধ অবয়ব ও বিবিধ যন্ত্রের বিকাশ হয় । জীবশরীরের মধ্যে কতকগুলা অবয়বের চিহ্ন দেখা যায় । শরীরবিজ্ঞানে তাহাদিগকে vestigial organ আখ্যা দেয়। এই ক্ষুদ্র অবয়বগুলার জীবন ধারণে ও জীবন রক্ষণে কোনরূপ উপকার দেখা যায় না ; বরং সময়ে সময়ে তাহারা জীবনের সংহারক হইয়া উঠে। সাধারণতঃ তাহার। তাহাদের নিরর্থক, অনাবশ্বক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সমগ্র দেহের নিকট হইতে পুষ্টির ভাগ ও শক্তির ভাগ গ্রহণ করিয়া জীবনের প্রতিকূলতাই সাধন করে। ইহারা জীবনযাত্রার প্রতিকূল হইলেও আধুনিক জীববিদ্যার মতে বিস্ফোটকের বা ব্যাধির স্থানীয় নহে। জীবের ইতিহাসে এমন সময় ছিল, তখন তাহারা জীবনের পক্ষে অবিশ্বক ছিল, তখন তাহারাও জীবনের আনুকূল্য সাধনে নিযুক্ত রহিত। তদানীন্তন বহিঃপ্রকৃতির সহিত যুদ্ধব্যাপারে জীবদেহকে সমর্থ করিবার জন্য তাহাদের আপনা হইতে বিকাশ হইয়াছিল। বহিঃপ্রকৃতির পরিবর্তনসহ তাহাদের আবশ্যকতা অন্তহিত হইয়াছে, এবং প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচনে কাজেই তাহাদের অস্তিত্বও বিলোপের অভিমুখে ক্রমশঃ অগ্রসর হইতেছে। সমাজ-শরীরে দেশাচারগুলাও কতকটা যেন সেইরূপ। সমাজের অতীত ইসিহাসে বিশেষ প্রয়োজন সাধনের উদ্দেশে তাহাদের আবির্ভাব হইয়াছিল , এখন সেই প্রয়োজনের অভাব হওয়ায়, তাহারা অনাবশ্বক ও জীবনেব যন্ত্রণাদায়ক হইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন বিনা অন্য কোন প্রণালী নাই, যাহাতে তাহদের উচ্ছেদ সাধন করিতে পারে। প্রাকৃতিক নিৰ্ব্বাচন সময়সাপেক্ষ ; এবং সেই দিনের প্রতীক্ষ করাই সঙ্গত। সমাজ-শরীরের চিকিৎসক তুমি বিস্ফোটকভ্ৰমে যেখানে-সেখানে ছুরিকা চালাইলে সৰ্ব্বত্র স্বফল নাও হইতে পারে। আমার যে সকল বন্ধুবর্গের অনুগ্রহবশে আজি আমি বিদ্যাসাগরের চরণোপাস্তে ভক্তির পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের অবকাশ পাইয়াছি, তাহাদের নিকট আস্তরিক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিয়া, এই প্রবন্ধের উপসংহারে প্রবৃত্ত হইব। আমাদের দেশে জীবনচরিত লেখা প্রচলিত নাই, এবং কোন ব্যক্তির জীবনচরিত লিখিতে প্রবৃত্ত হইলেও তাহার উপকরণ উপযুক্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না। বিদ্যাসাগরের জীবনচরিত রচনা করিয়া যাহার জাতীয় সাহিত্যের এই কলঙ্ক অপনোদনের