পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>ぐり রামেক্সমুন্দর রচনাসমগ্র টানাপাখা, ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি সরঞ্জাম আবশ্বক—তার পর অধ্যক্ষ, অধ্যাপক, শিক্ষক— ইহার বেতন এত টাকা, ইনি হপ্তায় এত ঘন্টার অধিক কাজ করিবেন না—ইনি এত ঘণ্টা পড়াইবেন, এতগুলি কাগজ দেখিবেন, এতক্ষণ বিশ্রাম করিবেন—সমস্ত কাটায় কাটায় বন্দোবস্ত। তার পর কেরানী, উপকেরানী, দপ্তরী, দরোয়ান, পিয়ন ইত্যাদি। তদুপরি লাইব্রেরি, লেবরেটারি ইত্যাদি ত আছেই। সকল বিষয়েই কর্তৃপক্ষ খুঁটিনাটি আইন বাধিয়া দিয়াছেন। বিদ্যালয় ত হইল—তার পর বিদ্যালয় পরিচালন করিবে কে ? যিনি উদ্যোগকারী, যিনি মূলধনী—যিনি ক্ষতির সম্ভাবনা সত্ত্বেও বিদ্যালয় খুলিতে বসিয়াছেন, তিনি বিদ্যালয়কে বিদ্যাবিপণিতে পরিণত করিয়া ফেলিবেন, এই আশঙ্কা থাকে , তাহার মূলধন হইতে চক্রবৃদ্ধির নিয়মানুসারে কুসীদ আদায় করিয়া লইবেন, এই আশঙ্কা থাকে। তাই কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের পরিচালনার নিরঙ্কুশ প্রভুত্ব র্তাহার উপর দিতে চাহেন ন!—পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ লোক লইয়া কমিটি নিযুক্ত হয়। কমিটি মাসে মাসে অধিষ্ঠান করেন, খরচপত্রের ব্যবস্থা করেন, শিক্ষক হইতে পিয়ন পর্যন্ত বাহাল বরতরফ করেন, কোন শিক্ষক মায়ের শ্রাদ্ধে তিন দিনের উপর পাচ দিন কামাই করিলে তাহার মাহিনী কাটেন, কোন শিক্ষক ক্লাসে গিয়া কয় মিনিট ঘুমাইয়া থাকেন, তাহার আলোচনা করেন—এব’ কমিটির যিনি সেক্রেটারি, তিনি গুরুগম্ভীর ভাবে এই সকল বিরাট মীমাংস খাতার মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন। এবং সেক্রেটারি কোন বানান ভুল করিলেন কি না, তাহ। দেখিয়া সভাপতি সেই লিপি মঞ্জুর করেন । বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে দবোয়ানকে অতিক্রম করিয়া আপিস,—সেখানে কেরানীবৰ্গে বেষ্টিত হইয়া আপিসের অধ্যক্ষ অধিষ্ঠিত। বিদ্যালাভার্থী ছাত্রগণ সভয়ে, স্পন্দিতহৃদয়ে, আপিস-ঘরের দুয়ারে, বারাণ্ডায় কাতার দিয়া দণ্ডায়মান এবং প্রবেশ করি, কি না করি, এই সন্দেহদোলায় দোতুল্যমান। কেন না, আপিসের যিনি কত্তর্ণ, তাহার মুখ গম্ভীর ; র্যাহারা তাহার অধীন, তাহাদের মুখ আরও গম্ভীর—এবং সকলেরই মুণ্ড সম্মুখে রক্ষিত খাতাব প্রতি বদ্ধদৃষ্টি। খাতার কাছে খাতা, খাতার উপরে খাত, মেঝের উপর, টেবিলের উপর, ছাদের নীচে, সর্বত্রই খাত,—সমচতুভূজ, সমচতুরস্ৰ, দীর্ঘচতুরস্র, বহুবিধ খাত। এহেন খাতা-প্রাকাররক্ষিত দুর্গমধ্যে প্রবেশ লাভ করিয়া দুইটা মিষ্টবাক্য উপহার না পাইয়। যদি কোন ছাত্র প্রবেশিকা জমা দিয়া খাতার মধ্যে নাম লেখাইয়া নিস্ক্রান্ত হইতে পারে, তাহার ছাত্র-জীবন ধন্য। প্রবেশাস্তে বিদ্যালাভের ব্যবস্থা । কর্তৃপক্ষ নির্দেশ করিয়া দিয়াছেন, কোনশাস্ত্রের কতটুকু অধ্যয়ন করিতে হইবে, কোন, শাস্ত্র সম্পর্কে কয়খানি বহি পড়িতে হইবে, কোন, বহির কোন পাতাটা বর্জন করিতে হইবে, কোন শাস্ত্র সম্পর্কে কত ঘণ্ট লেকচার হইবে, ঘণ্টার অর্ধ ষাট মিনিট, কি ছত্রিশ মিনিট, কতগুলি লেকৃচার শুনিতে হইবে এবং কত গুলি ফাকি দেওয়া চলিবে-লেকচার শুনিতে শুনিতে কত মিনিট কাল ঘুমাইয়া পড়িলে সেই শ্রবণক্রিয় অগ্রাহ হইবে ইত্যাদি—অতএব এ সকল বিষয়ে শিক্ষক বা শিক্ষার্থী, কাহারও কোন ভূশ্চিস্তার প্রয়োজন নাই। কিন্তু লেকচার অনেক সময়ে এ কানে ঢুকিয়া ওকান দিয়া বাহির হইয়া যায় এবং কোন শিক্ষকই ইহা নিবারণ করিতে পারেন না ; কাজেই মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীকে পরখ করিয়া বাজাইয়া লওয়া দরকার হয় ; সপ্তাহে