পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

స్ప్రే রামেক্সস্বন্দর রচনাসমগ্র সেই আদর্শের আবির্ভাব সম্ভবপর হইয়া থাকে, তাহা হইলে আমাদের প্রাচীন পূজনীয়া জননীর দেহে নবজীবন সঞ্চারের আশা কি কখনই ফলিবে না ! কিন্তু ভবিষ্কৃতের ঘনান্ধকার ভিন্ন করিয়| দীপবৰ্ত্তিকা আনয়ন করিবে কে ? কে বলিবে, আমাদের পরিণতি কোথায় ? মহাপুরুষের আবির্ভাব ভারতভূমিতে নূতন ঘটনা নহে। আশা যে, মহাপুরুষের আবির্ভাবই ভারতের উদ্ধারসাধানে সমর্থ হইবে। কিন্তু ভবিষ্যতের সেই মহাপুরুষ কোথায়? দগ্ধাস্থিপঞ্চরময় ভারতের এই মহাশ্মশানে এই মৃত জাতির শবদেহে নূতন জীবন সঞ্চার করিকে কে ? বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বার বৎসর অতীত হইল, বঙ্কিমচন্দ্র তাহার খামাঙ্গিনী জননীর অঙ্কদেশ শূন্ত করিয়া চলিয়া গিয়াছেন ; কিন্তু এত দিন আমরা তাহার স্মৃতির সুন্মানার্থ কোনরূপ আয়োজন আপশুক বোধ করি নাই। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতি আমাদের কৰ্ত্তব্যবৃদ্ধি যে এত দিন জাগে নাই, তাহা আমাদের অবস্থার পক্ষে স্বাভাবিক। বার বৎসর পরে যদি সেই কৰ্ত্তব্যবুদ্ধি জাগিয়া থাকে, সেই প্রবৃদ্ধিসাধনে আমাদেব কৃতিত্ব বিচাৰ্য্য বিষয়। বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং কোন তপোলোকে বা সত্যলোকে অবস্থিত হইয়াও মর্ত্যলোকে তাহার দুঃখিনী জননীকে আজও ভুলিতে পারেন নাই , – সেইখানে বসিয়া "তুমি বিদ্যা, তুমি ধৰ্ম্ম, তুমি হদি, তুমি মৰ্ম্ম, ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে" বলিয়া কাতরকণ্ঠে গান গাহিতেছেন ;- আর মানবের অশ্রুতিগোচর সেই সঙ্গত সপ্তকোটি কণ্ঠে কলকল নিনাদ উত্থাপিত করিয়া বঙ্গভূমিকে জাগ্রত করিয়াছে। আমাদের কৰ্ত্তব্যবুদ্ধি আজ যদি জাগিয়া থাকে, স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্রই আমাদিগকে জাগাইয়াছেন, আমাদের উহাতে কোন কৃতিত্ব নাই । বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতির উপাসনার জন্য আজিকার সভা আহূত হইয়াছে ; এবং যাহার এই উপাসনার আয়োজন করিয়াছেন এবং এই উপাসনাকৰ্ম্মকে সম্ভবতঃ সাংবৎসরিক অনুষ্ঠানে পরিণত করিতে ইচ্ছা করেন, র্তাহারা, কি কারণে জানি না, আজিকার অনুষ্ঠানের প্রধান ভার আমার উপর অর্পণ করিয়াছেন। আমার প্রতি র্তাহাদিগের এই অহৈতুকী শ্রদ্ধার পরিচয় পাইয়া ও বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতি আমার ভক্তিপ্রকাশের অবসর লাভ করিয়া আমি যুগপৎ গৰ্ব্ব ও আনন্দ অনুভব করিতেছি, কিন্তু যোগ্যতর পাত্রে এই ভার অপিত হইল ভদ্রমণ্ডলীকে বঞ্চিত হইতে হইত না । কেবল ষে সময়োচিত বিনয়প্রকাশের জন্য আমি এ কথা বলিতেছি, তাহা নহে ; বঙ্কিমচন্দ্র ষে বিস্তীর্ণ বঙ্গীয়-সাহিত্যের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব গ্রহণ করিয়া তাহার সহবর্তী ও পরবর্তী অম্লচরগণের পথপ্রদর্শক হইয়া গিয়াছেন, আমিও সেই বঙ্গীয়-সাহিত্য-ক্ষেত্রের এক প্রান্তে এক সঙ্কীর্ণ পথ আশ্রয় করিয়া মন্দগতিতে ধীরে ধীরে পদক্ষেপে সাহসী হইয়াছি; ইহাই আমার জীবনের কাজ ও ইহাই আমার জীবিকা। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র তাহার প্রতিভার অত্যুজ্জল আলোকবত্তিক হস্তুে করিয়া সাহিত্যক্ষেত্রের ষে বে অংশ প্রদীপ্ত করিয়াছিলেন, সেই সেই অংশে অামার “প্রবেশ নিষেধ”। আমি । দূর হইতে সেই আলোকের উজ্জল দীপ্তিতে মুগ্ধ হইয়াছি মাত্র, কিন্তু বঙ্কিমচন্ত্রের ভাগ্যবান সহচরগণের ও অনুচরগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করিতেও আমি অধিকারী মহি।