পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় Ε ο Σ. করিয়া অবশেষে অপমৃত্যুদ্বারা শাস্তিলাভে বাধ্য হইয়াছিলেন। এই চারিটি মনুষ্যের বিভিন্ন দশার চিত্র সম্মুখে রাখিয়া আমরা কখনও মানবচরিত্রের মহিমা দেখিয়া স্পদ্ধিত ও গৰ্বিবত হইতে পারি, কখনও বা জাগতিক শক্তির সম্মুখে মানবের দৌৰ্ব্বল্য দেখিয় ভীত হইতে পারি। বঙ্কিমচন্দ্র মানবজীবনের ও জগদ্বিধানের এই সমস্যা— এই গোডার কথা অতি সুন্দর চিত্রে চিত্রিত করিয়াছেন এবং এই জন্য তিনি উচ্চশ্রেণীর কবি । আজিকার দিনে বঙ্কিমচন্দ্রের অদৃশ্ব হস্ত আমাদের জাতীয় জীবনকে যেরূপে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করিতেছে, তাহাতে ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্র যতই উচ্চ স্থানে অবস্থান করুন, বঙ্কিমচন্দ্রের অন্য মূৰ্ত্তির পদপ্রাস্তে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করিতে আজ ব্যগ্র হইব, ইহা স্বাভাবিক। বঙ্কিমচন্দ্ৰ কত দিক হইতে আমাদের জীবনের উপর প্রভুত্ব করিতেছেন তাহার গণনা দুষ্কর। ইংরেজীতে একটা বাক্য চলিত হইয়াছে, যাহার মূলে গ্রীক নাই, সে জিনিষ জগতে অচল। বলা বাহুল্য এখানে জগং অর্থে কেবল পাশ্চাত্য দেশ বুঝায়। আমরা যদি ঐ বাক্যকে ঈষৎ পরিবত্তিত করিয়া বলি যে যাহার মূলে বঙ্কিমচন্দ্র নাই, সে জিনিষ বাঙ্গালা দেশে অচল, তাহ হইলে নিতান্ত অত্যুক্তি হইবে না। ইংরেজী গতিবিজ্ঞানে একটা শব্দ আছে—মোমেন্টম , বাঙ্গালায় উহাকে বেীক’ শব্দে অমুবাদ করিতে পারি। বঙ্কিমচন্দ্র যে কয়েকটা জিনিষকে ঝোক দিয়া ঠেলিয়া দিয়া গিয়াছেন, সেই কয়টা জিনিষ বাঙ্গালা দেশে চলিতেছে । সেই জিনিষগুলা গতি উপার্জনের জন্য যেন বঙ্কিমচন্দ্রের হস্তের প্রেরণার অপেক্ষায় ছিল ; বঙ্কিমচন্দ্র হাত দিয়া ঠেলিয়া দিলেন, আর উহা চলিতে লাগিল, তাহার পর আর উহা থামে নাই । দুষ্টান্তস্বরূপ প্রথমে নবেলের কথাটাই ধবা যাক। বঙ্কিমবাবুর পূর্বেও অনেকে বাঙ্গালা নবেল লিখিয়াছিলেন ; তাহাতে কিসের ষেন অভাব ছিল । ইংরেজানবিস অনেক লেখক ইংরেজী নবেলের অনুকরণে বাঙ্গালা নবেল লিখিয়াছিলেন , কিন্তু কি-একটা অভাবের জন্য উহা বাঙ্গালা-সাহিত্যে লাগে নাই। বঙ্কিমচন্দ্র নবেল লিখিলেন, আর এক দিনেই বাঙ্গালায় সাহিত্যের একটা নূতন শাখার স্বষ্টি হইল। স্রোতস্বতীর যে ক্ষীণ ধারা প্রবাহিত হইতেছিল, এখন উহ নূতন পথ পাইয়া বিপুলকায় গ্রহণ করিয়া, শত উপশাখার সৃষ্টি করিয়া দেশ ভাসাইয়া জলপ্লাবন উপস্থিত করিল। সকলেই জানেন যে, এই জলপ্লাবনে সাহিত্যক্ষেত্র ভাসিয়! যাইবার উপক্রম হইয়াছে। বলা বাহুল্য, বাঙ্গলার অধিকাংশ নবেলই অপেয়, অদেয় ও অগ্রাহ ; কিন্তু ইহার জন্য বঙ্কিমচন্দ্র দায়ী নহেন । ইহাতে দেশের দারিদ্র্যের ও দুরবস্থারই পরিচয় দেয়। বঙ্কিমচন্দ্রের কৃতিত্বের ইহাতে অঙ্গহানি হয় না। এখন হয়ত বাধ বাধিয়া দেশকে এই প্লাবন হইতে রক্ষা করিবার সময় উপস্থিত হইয়াছে, কিন্তু এই মুদ্রাষন্ত্রের স্বাধীনতার দিনে সেইরূপ বাধ বাধিবার কোন উপায় দেখি না। বঙ্কিমচন্দ্রের পর র্যাহারা নবেল লিখিয়াছেন, তাহারা যদি প্রকৃতপক্ষে বঙ্কিমচন্দ্রের অম্বুবতী হইয় সৌন্দৰ্য্য-স্বটিকেই কাব্যরচনার মুখ্য উদ্বেগু করিতেন, তাহা হইলে আমাদের এতটা আতঙ্কিত