পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 a to রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র সাৰ্ব্বভৌমিক ধৰ্ম্মের সন্ধান পাইয় পুলকিত হইয়াছিলেন ; এবং তাহার পরে বঙ্গজননীর আর এক জন সস্তান ঈশোপনিষদ গ্রন্থের পরিত্যক্ত পাতার মধ্যে সেই ধৰ্ম্মের সন্ধান পাইয়া আপনাকে ধন্য মানিয়াছিলেন । মহাত্মা রামমোহন রায় ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রুতিবাক্যের যে অর্থ গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহা আমি গ্রহণ কবিতে পারি নাই । কিন্তু তাহার। ভারতবর্ষকে স্বকীয় সামর্থ্যের উপর আত্মপ্রতিষ্ঠা করিতে আহবান করিয় ভারতবাসীর যে জ্ঞানীন্ধতা অপনোদন করিয়া গিয়াছেন, তজ্জন্য আমি র্তাহাদের স্বদেশে জন্মিয় ধন্য হইয়াছি । এ কথা গোপন করিবার প্রয়োজন নাই যে, ঐ দুই মহাপুরুষের অন্তবৰ্ত্তীরা ধৰ্ম্মতত্ত্বের অনুসন্ধানের জন্য বিদেশে যাত্রা আবশ্বক বোধ করিয়াছিলেন এবং অন্য দেশের অন্য জাতির শাস্ত্র হইতে সাৰ্ব্বভৌমিক ধৰ্ম্মের সার সঙ্কলনে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। ধৰ্ম্মপিপাসুর পিপাস যদি তাহাদিগকে পানীয় অন্বেষণে পুথিবী-ভ্রমণে বাধ্য করে, তাহাতে দুঃখিত হইবার কোনই কারণ নাই। এই বিদেশ যাত্রীদিগের পরিশ্রমেব জন্য আমরা তত দুঃখুিত নহি, কিন্তু বিদেশের আকর্ষণে তাহারা স্বদেশী সামগ্রীর প্রতি যদি উপেক্ষ বা অবজ্ঞা প্রদর্শন করিয়া থাকেন, তাহার জন্য ক্ষোভ করিবার হেতু আছে। যাহাই হউক, ধৰ্ম্মতত্তের অনুসন্ধানে বিদেশ পৰ্য্যটন অনাবশ্যক হইলেও আমরা ঐ অনাবশ্বক পরিশ্রমে প্রবৃত্ত হইয়াছিলাম ; এমন সময়ে বঙ্কিমচন্দ্র আমাদিগকে আপন ঘরে প্রত্যাবর্তনের জন্য ডাক দিলেন। শিক্ষিত বাঙ্গালী সেই আহবান শুনিল ও মাতৃমন্দিরে, আনন্দমঠে ফিরিয়া আসিতে সঙ্কোচ বোধ করিল না । গীতাশাস্ত্র ধৰ্ম্মের কেবল সাৰ্ব্বভৌমিক সনাতন অংশের উপদেশ দিয়া নিরস্ত হন নাই, প্রাদেশিক ধৰ্ম্ম ও যুগধৰ্ম্মের তত্ত্বও ঐ শাস্থের প্রতিপাদ্য । কয়েক সহস্ৰ বৎসর ধরিয়া ভারতবাসী গীতাশাস্থে যে সহস্রশীর্ষ পুরুষের মুখনিঃস্তত অভয়বাণী শুনিয়া আসিতেছে, তাহার সহস্র অক্ষি সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ও ব্রহ্মাণ্ডের ক্ষুদ্রতম অংশে নিবদ্ধ আছে। অতএব ঐ শাস্ত্রের উক্তির মধ্যে প্রাদেশিক ধর্মের ও যুগধৰ্ম্মের মহাত্ম্য-কীৰ্ত্তন দেখিয়া বিস্মিত হইতে হইবে না । যুগধৰ্ম্ম সংস্থাপনের জন্য যিনি যুগে যুগে সস্তৃত হন, তিনি ধৰ্ম্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রের মহাহবের যুগে কোন মূৰ্ত্তিতে সস্তৃত হইয়াছিলেন, মহাভারতের মহাসাগর মন্থন করিয়া ভারতবাসীর নিকট লুপ্তপ্রায় সেই মূত্তির উদ্ধারের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র যত্নপর হইয়াছিলেন। লুপ্তপ্রায় বলিলাম, তাহার একটু তাৎপৰ্য্য আছে। ভারতবর্ষের বৈষ্ণব-সম্প্রদায় ভগবানের যে মূৰ্ত্তিকে পূজার জন্য আগ্রহের সহিত গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহা কুরুক্ষেত্রে সংশপ্তক সেনার সম্মুখীন পার্থসারথির মূৰ্ত্তি নহে, তাহ বৃন্দাবনবিহারী গোপীজনবল্লভ বংশীবদনের মূৰ্ত্তি ; নবনীতচের উদুখলবদ্ধ বালগোপালের মূৰ্ত্তি ; তাহ বৎসকুলের সহিত কেলিপর যমুনাপুলিনবিহারী গোপসখার মূৰ্ত্তি ; – যে মূৰ্ত্তিতে ভগবান শ্ৰী-করবৃত মোহন মুরলীর প্রত্যেক রন্ধ্র শ্ৰীমুখমারুতে পূর্ণ করিয়া তমুদগত স্বরস্রোতে বিশ্বপ্রকৃতির মন্মস্থলে আনন্দের ধারা সঞ্চার করেন, উহা সেই মূৰ্ত্তি। ঈশ্বরের ঐশ্বৰ্য্যমণ্ডিত মূৰ্ত্তি ভারতবর্ষের উপাসকসম্প্রদায়ের সম্পূর্ণ তৃপ্তি জন্মাইতে পারে নাই ; ভারতবাসী ঐশ্বর্যের অপেক্ষ মাধুর্য্যের উপাসনায় পক্ষপাতিত দেখাইবে, ইহাতেও বিস্মিত হইব না। বঙ্কিমচন্দ্র