পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা ; মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ રે જ જ মহাভারতসাগর মন্থন করিয়া যে মূৰ্ত্তিকে স্বদেশবাসীর সম্মুখে স্থাপন করিয়া ছিলেন, তাহা যুগধৰ্ম্মপ্রবর্তকের মূৰ্ত্তি , তাহ ধৰ্ম্ম রাজ্যসংস্থাপকের মূৰ্ত্তি—ধর্মের সহিত অধৰ্ম্মের সংঘর্ষ উপস্থিত হইলে যে মৃত্তি গ্রহণ করিয়া তিনি সম্ভূত হন, উহ! সেই মূৰ্ত্তি ; রাষ্ট্রবিপ্লব উপস্থিত করিয়া যিনি রাষ্ট্র রক্ষা করেন, উহ। তাহার মুত্তি ; জীবন-সংগ্রামে জীবন ধ্বংস করিয়া যিনি জীবন রক্ষা করেন, উহ। র্তাহার মূত্তি ; লোকস্থিতির অনুরোধে যিনি নিব্বিকারে ও নিম্বরুণ হইয়া বস্কন্ধরাকে শোণিতক্লিন্ন দেখিয়া থাকেন, উহ। তাহারই মূত্তি। ধিনি বিশ্বজগতের রন্ধে রন্ধে সঞ্চারিত করুণাপ্রবাহের এক মাত্র উৎস, তিনি যে কি কারণে ও কি উদ্দেশে এই নিষ্করুণ মুক্তি পরিগ্রহ করিয়া জীবরক্তে বসুধী সিক্ত দেখিতে বাধ্য হন, তাহা তিনিই জানেন ; মনুষ্যের শাস্ত্র এখানে মূক , অথব৷ এই মূৰ্ত্তি গ্রহণ সেই সনাতনী মায়ার সহিত অভিন্ন – যাহা হইতে এই বিশ্বজগতের জন্মদি, যাহা হইতে জীবের জীবন, যাহা হইতে জীবনে বহিঃপ্রকৃতির সহিত অস্তঃপ্রকৃতির নিরস্তর সামঞ্জস্য স্থাপনের চেষ্ট ঘটিতেছে, যাহা হইতে মানবের সকল দুঃখের নিদান সেই খ্ৰীষ্টানকথিত পাপপ্রবণতার উৎপত্তি হইয়াছে ; অথবা কবির ভাষায় বলিতে পারি,—ইহ সেই আধ-সত্য, জ্ঞানী যখন র্তাহার আত্মার মধ্যে জগৎকারণের সন্ধান পাইবেন, যখন তিনি আপনাকেই এই জগদভ্ৰাস্তির কাবণ বলিয়া জানিতে পরিবেন, যখন তাহার অপূর্ণ জগতস্বপ্ন উদ্বোধনে বিলীন হইবে, তখন সেই মহাস্বপ্নভঙ্গ দিনে যে আধ-সত্য— সতে্যুব সমুদ্রমাঝে হ'rয যাবে লীন । বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠে’ আর বঙ্কিমচন্দ্রের ‘ক্লষ্ণচবিত্রে আমরা এই যুগধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠার বিশিষ্ট চেষ্টা দেখিতে পাই। র্তাহার জীবনের শেষ ভাগের প্রত্যেক কাৰ্য্যই বোধ করি এই উদ্দেশ্বের অভিমুখ। বঙ্কিমচন্দ্রই প্রথমে আমাদিগের নিকট যুগধন্মের আবশ্যকতা নির্দেশ করিয়াছিলেন এবং যুগধন্মের সংস্থাপনের জন্য যিনি যুগে যুগে সম্ভূত হন, তাহার মহৈশ্বৰ্য্যমণ্ডিত মূৰ্ত্তি আমাদের হৃদয়মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। বঙ্গজননীর প্রত্যেক সস্তানের হৃদয়ভূমি মাতৃভক্তির জাহ্নবী জলে মাজ্জিত করিয়া তাহাকে তাহার সিংহাসন স্থাপনের উপযোগী করিতে হইবে। তিনি যে পবিত্র আসনে উপবিষ্ট হইবেন, তাহ পুণ্য তোয়ে অভিষিক্ত করা আবশুক । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ আমরা র্যাহার বরণীয় স্মৃতির উপাসনার জন্য আজ এই সভাস্থলে উপস্থিত হইয়াছি, ব্রাহ্ম সমাজের সহিত ও ব্রাহ্মধর্মের সহিত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করিয়া তাহাকে স্মরণ করা একান্ত কঠিন। কিন্তু অসাম্প্রদায়িক সাহিত্যপরিষদের সঙ্কীর্ণ প্রাচীরের মধ্যে আবদ্ধ থাকিয়৷ আমাদিগকে সেই কঠিন কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতে হইবে। তবে পারিভাষিক হিন্দুধৰ্ম্ম বা পারিভাষিক ব্রাহ্মধৰ্ম্ম অপেক্ষ যে সনাতন ধর্মের ভিত্তি প্রশস্ততর, সেই ভিত্তির আশ্রয়ের উপর দণ্ডায়মান হইয়া আমরা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুণ্যসমুজ্জল মুক্তির প্রতি