চরিত-কথা : হর্মান হেলমহোলৎজ 3 * > অশোভন ও অসমঞ্জস করিয়া তুলিয়াছে। মহর্ষি নিজ জীবনে এই অস্বাভাবিকতাকে. কখনই প্রশ্রয় দেন নাই । যাহারা তাহার জীবনের আখ্যান জানেন, তাহারাই বলিবেন, এই অস্বাভাবিকতার প্রতিকূলে দাড়াইযা তাহাকে কি উৎকট ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত হইতে হইয়াছিল। সে দিন “সঞ্জীবনী’ পত্রিকায় পড়িতেছিলাম, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ধৰ্ম্মপ্রচারকালে ইংরেজা বাগিতার প্রশ্রয়দাতা ছিলেন না । এই একটি আচরণেই আমব তাহাকে আমাদের অস্বাভাবিক অবস্থার বিরোধিরূপে দেখিতে “ ই ; অন্য উদাহরণের সম্প্রতি প্রয়োজন নাই । সাক্ষাংসম্বন্ধে মহৰ্ষিকে বঙ্গসাহিত্যেব সেবকরূপে প্রতিপন্ন করিতে গেলে তাহাকে সঙ্কীর্ণ গণ্ডীব মধ্যে আবদ্ধ করিতে হইবে । কিন্তু তিনি সমাজমধ্যে যে ভাবের আন্দোলন উপস্থিত করিয়াছিলেন, ষে আন্দোলনে আমাদের শিক্ষিতসমাজ এককালে ক্ষুব্ধ ও তরঙ্গিত ও চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছিল, তাহার প্রভাব বঙ্গসাহিত্যে স্থায়িভাবে বর্তমান থাকিবে। সেই বর্ষাকালের ঝটিক-দুৰ্য্যোগ এখন প্রশান্ত ভাব ধারণ করিয়াছে ; কিন্তু তখন ষে সকল ভাবের উৎস খুলিয়া গিয়াছিল, তাহার ধারাপ্রবাহে যে কলনাদিনী স্রোতস্বর্তীর উৎপত্তি হইয়াছে, তাহ বঙ্গের সাহিত্যভূমিকে সুজলা, স্বফলা, শস্যশ্যামল করিয়া তুলিয়াছে । সাহারা ভারতবর্ষেব ইতিহাস সম্যকৃভাবে অধ্যয়ন করিয়াছেন, তাহারা জানেন, স্বাতন্ত্র্যের সহকারে সংযমই ভারত-সমাজের প্রধান লক্ষণ । আমরা র্যাহার তিরোভাবে শোকপ্রকাশের জন্য অদ্য এই সভাস্থলে সমবেত হইয়াছি, তিনি সেই ভারত-সমাজের নেতা মহর্ষিগণেরই সস্তান ছিলেন ও স্বাতন্ত্রোব সহিত সংযমষ্ট তাহার মহনীয় চরিত্রের প্রধান লক্ষণ ছিল। ভগীরথের ন্যায় শঙ্খধ্বনিপূর্বক তিনি যে অভিনব সাহিত্যের ভাগীরথী বঙ্গভূমিতে প্রবাহিত কবিয়া গিয়াছেন, স্বাতন্ত্র্যের সহিত সংযমকেই তাহার প্রধান লক্ষণস্বরূপে দেখিতে পাই । তাহার অসামান্য ক্ষমতাশালী পুত্ৰগণ বঙ্গসাহিত্যে ষে রুতিত্ব দেখাইয়াছেন, পুত্ৰগণের সেই কৃতিত্ব পিতা হইতে বিচ্ছিন্ন করিবার কোন উপায় নাই। মাননীয় শ্রীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনাথের ‘স্বপ্নপ্রয়াণে যে উদ্দাম স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় পাই, সার সত্যের আলোচনায় তাহ সংযমদ্বারা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে নিয়ম্বিত করিতেছে ; রবীন্দ্রনাথের ‘সোনাব তরী’ ও ‘মানসী’র স্বাতন্ত্র্য ‘স্বদেশী সমাজ’-এর কল্যাণপ্রদ সংযমে পরিণত হইয়াছে। তিনি একাধারে যে স্বাতন্ত্র্য ও সংযমের আদর্শ দেখাইয়া গিয়াছেন, প্রার্থনা করি, সেই মহাদশ বঙ্গীয় সমাজকে ও বঙ্গীয় সাহিত্যকে কৰ্ত্তব্যপথ প্রদর্শন করুক। তিনি যে মনস্বী পুত্ৰগণে র্তাহার সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট স্মরণ চিহ্ন আমাদিগকে অর্পণ করিয়া গিয়াছেন, তাহারা চিরজীবী হইয়া বঙ্গভারতীর ক্রোডদেশ অলঙ্কত করুন। হৰ্ম্মান হেলমহোলৎজ চারি মাস মাত্র হইল, হেলমহোলৎজের মৃত্যু হইয়াছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে কয়জন জানে যে, পৃথিবী হইতে একটা দিকৃপাল অস্তহিত হইয়াছে। হেলমহোলৎজের জন্তু শোক করিবার অবস্থা আমাদের এখনও হয় নাই। কখনও হইবে কি ? ,列一》8
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
